মোদী এলে লালুর গোঁসা, ফাঁপরে নীতীশ

শপথের অনুষ্ঠান নিয়ে ঘোর বিড়ম্বনায় পড়ে গিয়েছেন নীতীশ কুমার! ভোটের ময়দানে সদ্য যাদের গো-হারা করেছেন, সেই বিজেপি শিবিরের মুখ নরেন্দ্র মোদীকে তিনি ঘরোয়া ভাবে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন শপথে। আর তাতেই প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় জানিয়ে দিয়েছে, আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ এলে মোদী পটনা যেতে প্রস্তুত।

Advertisement

অনমিত্র সেনগুপ্ত ও দিবাকর রায়

নয়াদিল্লি ও পটনা শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০১৫ ০৩:৫৫
Share:

শপথের অনুষ্ঠান নিয়ে ঘোর বিড়ম্বনায় পড়ে গিয়েছেন নীতীশ কুমার! ভোটের ময়দানে সদ্য যাদের গো-হারা করেছেন, সেই বিজেপি শিবিরের মুখ নরেন্দ্র মোদীকে তিনি ঘরোয়া ভাবে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন শপথে। আর তাতেই প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় জানিয়ে দিয়েছে, আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ এলে মোদী পটনা যেতে প্রস্তুত। তাই ২০ নভেম্বর অন্য কোনও সরকারি কাজও রাখছেন না প্রধানমন্ত্রী। মোদীর পক্ষ থেকে এই সবুজ সঙ্কেতই বেজায় ফাঁপরে ফেলে দিয়েছে নীতীশকে। কারণ, আরজেডি নেতারা হুমকি দিয়েছেন, মোদী শপথে এলে তাঁকে কালো পতাকা দেখানো হবে। দেশ জুড়ে অসহিষ্ণুতার পরিবেশ তৈরি করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে জবাবদিহি চাইবে দল।

Advertisement

লালুপ্রসাদের বক্তব্য, এখন যখন দেশে মোদী-বিরোধী রাজনৈতিক মেরুকরণের হাওয়া তৈরি হয়েছে, এই পরিস্থিতিতে মোদীকে লাল কার্পেটে অভ্যর্থনা জানালে জনমানসে ভুল বার্তা যাবে। নীতীশও বুঝতে পারছেন, শপথের অনুষ্ঠানটি সাংবিধানিক হলেও, শেষ পর্যন্ত সেটি রাজনৈতিক মঞ্চেই পরিণত হয়ে থাকে। ফলে একই মঞ্চে মোদীর উপস্থিতি সমস্যায় ফেলতে পারে অধিকাংশ অ-বিজেপি দলের নেতৃত্বকে। ২০ তারিখ মোদী পটনায় শপথের অনুষ্ঠানে হাজির হলে সেই মঞ্চে সনিয়া গাঁধী বা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে উপস্থিত করানোটা যথেষ্ট কঠিন। প্রথম জন মহাজোটের অন্যতম কারিগর ও শরিক দলের নেত্রী। অন্য জন ভোটের আগে থেকেই প্রকাশ্যে সমর্থন জানিয়ে আসছেন নীতীশকে। সামনেই ভোট পশ্চিমবঙ্গে। সংখ্যালঘু ভোটের কথা মাথায় রেখে তৃণমূল নেত্রী ইতিমধ্যেই ঘরোয়া ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এক মঞ্চে তিনি থাকছেন না। তেমন হলে পাঠাতে পারেন প্রতিনিধি। দোটানায় কংগ্রেস ও অন্যান্য অ-বিজেপি দলের নেতারাও।

ফলে মুশকিলে পড়েছেন নীতীশ। ভোটের ফল প্রকাশের পরপরই মোদী তাঁকে ফোন করে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন। এর পরেই ঘনিষ্ঠ মহলে নীতীশ জানান, শপথে মোদীকে আমন্ত্রণ জানানো হবে। মুখ্যমন্ত্রীর শপথে প্রধানমন্ত্রী বা অন্যান্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের আমন্ত্রণ জানানোটাই দস্তুর। নীতীশও ভেবেছিলেন, প্রথামাফিক আমন্ত্রণ জানালেও প্রধানমন্ত্রী হয়তো হাজির হবেন না। কিংবা অন্য সরকারি কাজ থাকায় আসতে পারবেন না। বড় জোর প্রতিনিধি হিসেবে কোনও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বা সুশীল মোদীর মতো বিহারের শীর্ষ কোনও বিজেপি নেতাকে পাঠাবেন। কিন্তু মোদী শপথে থাকার ইচ্ছা প্রকাশ করায় নীতীশের রাজনৈতিক রণনীতি যাঁরা তৈরি করেন, তাঁদের মাথায় এখন আকাশ ভেঙে পড়েছে।

Advertisement

ভোট-প্রচারে বারবার বিহারে গিয়ে মোদী তুলোধোনা করেছিলেন নীতীশ-লালুর ‘জঙ্গলরাজ’-কে। জেডিইউ নেতাদের একটি অংশ মনে করছেন, মোদীকে আমন্ত্রণ জানিয়ে মৃদুভাষী, কৌশলী নীতীশ হয়তো গণতান্ত্রিক রীতি মানা তথা রাজনৈতিক সৌজন্যের মোড়কে ‘মধুর প্রতিশোধ’ নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁরই শপথে এসে প্রধানমন্ত্রীকে কালো পতাকা দেখতে হলে সেটা আদৌ ভাল নজির হবে না। ভবিষ্যতে কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রেও বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ তাই উভয় সঙ্কটে, সৌজন্য বজায় রাখবেন না শরিকি সম্পর্ক সামলাবেন।

বিজেপি শুধু নয় মহাজোটের নেতাদেরও এখন মালুম হচ্ছে শপথে থাকার ইচ্ছে জানিয়ে মোক্ষম চাল দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। নীতীশকে সব ধরনের কেন্দ্রীয় সাহায্য দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে লালু ও কংগ্রেসের থেকে তাঁকে আলাদা করতে চাইছেন মোদী। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ ও অর্থমন্ত্রী জেটলি ইতিমধ্যেই স্পষ্ট করে দিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী বিহারের উন্নয়নে যে প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন, যে কোনও ভাবে সরকার তা পূরণ করবে। এর সঙ্গে ওই রাজ্যে বিজেপির জয়-পরাজয়ের কোনও সম্পর্ক নেই। বিজেপির মূল লক্ষ্য দু’টি। এক, এই বার্তা দেওয়া যে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় মোদী সরকার কোনও ভেদাভেদের রাজনীতি করে না। দুই, বিহার জয়ের গোটা কৃতিত্ব নীতীশকে দিয়ে শুরু থেকেই বিভেদের রাজনীতি করা। যে কারণে নির্বাচনে জেতার পর নীতীশকে ফোন করলেও লালুকে এক বারও ফোন করেননি মোদী। তা নিয়ে সংবাদমাধ্যমে ক্ষোভও জানিয়েছেন আরজেডি-প্রধান। লালুর বক্তব্য, বিহারে সব থেকে বেশি আসন জিতেছে তাঁর দল। আর অভিনন্দন পেয়েছেন নীতীশ। প্রধানমন্ত্রীর এই উপেক্ষা যে তিনি সহজে মেনে নেবেন না, লালু তা ইতিমধ্যেই নীতীশের কাছে স্পষ্ট করে দিয়েছেন। জোটসঙ্গীর রণংদেহি মেজাজই অস্বস্তি বাড়িয়েছে নীতীশের। পরিস্থিতি এমন যে, আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ পেয়ে প্রধানমন্ত্রী নিজে থেকে না এলেই বেঁচে যান নীতীশ। সে ক্ষেত্রে সনিয়া, রাহুল, মমতাদের আসার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হবে। তাতে জোরালো ভাবে বিজেপি-বিরোধী বার্তা দেওয়া সম্ভব হবে নীতীশের পক্ষে।

জেডিইউ নেতা কে সি ত্যাগি অবশ্য বিজেপি শিবিরের অন্তর্দ্বন্দ্ব উস্কে দিয়ে বিতর্কে খানিকটা জল ঢালার চেষ্টা করেন আজ। বলেন, ‘‘শপথে প্রধানমন্ত্রীকে নয়, দল বরং লালকৃষ্ণ আডবাণীকে আমন্ত্রণ জানানোর কথা ভাবছে।’’ যা শুনে বিজেপি নেতারা ঘরোয়া আলোচনায় বলছেন, আডবাণী দলে মোদী ও অমিত শাহদের বিরুদ্ধ কণ্ঠ। প্রকাশ্যে আডবাণীর কথা বলে দিয়ে তাঁর পক্ষেও শপথে উপস্থিত থাকাটা কঠিন করে দিল নীতীশের দল। মোদীর চালের কী জবাব দেন নীতীশ, বিজেপি এখন তারই অপেক্ষায়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement