লালকৃষ্ণ আডবাণী। ফাইল চিত্র
লালকৃষ্ণ আডবাণী আমন্ত্রিত? আসবেন মুরলী মনোহর জোশী?
প্রশ্নের শেষে ফোনের ও-পারে কয়েক মুহূর্তের নীরবতা। তার পরে সংশয়ী গলায় কেউ বললেন, “আসার তো কথা। আমন্ত্রণ জানানো হবে নিশ্চয়।” রাম জন্মভূমি ন্যাসের শরদ শর্মার বক্তব্য, প্রথমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে ৫ অগস্ট ভূমি পূজা এবং শিলান্যাসের অনুষ্ঠানের জন্য আমন্ত্রণপত্র পাঠানো হয়েছে। সময় চাওয়া হয়েছে তাঁর দফতরের কাছে। সেখান থেকে সবুজ সঙ্কেত মিললে, তখন আমন্ত্রণপত্র পাঠানো হবে সঙ্ঘের কর্তাব্যক্তি এবং দলের শীর্ষ নেতাদের।” যুক্তি ঠিক। কিন্তু এই যে রামমন্দিরের শিলান্যাসের বিষয়ে কথাবার্তা এত খানি এগোনোর পরেও এখনও আডবাণীর নাম সে ভাবে ওঠেনি, তাতেই কিছুটা অবাক অযোধ্যা।
লোকসভার ভোট-ময়দানে নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহের অশ্বমেধের ঘোড়া তিনশোর গণ্ডি পার করেছে ঠিকই, কিন্তু অনেকেই মনে করেন, আডবাণীর রাম জন্মভূমি আন্দোলনের ফলেই দিল্লিতে একদিন ক্ষমতায় এসেছিল বিজেপি। যে দলের সাংসদ সংখ্যা ছিল দুই, তাকে ধাপে ধাপে ক্ষমতার মসনদে টেনে তোলার পিছনে মূল কারিগর তিনিই। কিন্তু ভূমি-পূজায় আমন্ত্রণের জন্য মন্দির নির্মাণের দায়িত্বে থাকা শ্রীরাম জন্মভূমি তীর্থক্ষেত্র ট্রাস্টের তরফ থেকে সেই আডবাণীর নাম শোনা যায়নি এখনও। অনুচ্চারিত ওই আন্দোলনে যুক্ত জোশী, উমা ভারতীর নামও।
অযোধ্যার এক প্রবীণের আক্ষেপ, “রাম জন্মভূমি আন্দোলনে ভর করে বিজেপিকে শক্ত জমির উপরে দাঁড় করিয়েছিলেন আডবাণী। কিন্তু প্রধানমন্ত্রিত্বের শিকে ছিঁড়েছিল অটলবিহারী বাজপেয়ীর কপালে। আর এখন যখন মন্দির তৈরির পালা, তখনও যাবতীয় আলো মোদীর উপরে।” এখনও বাবরি মসজিদ ধ্বংসের মামলায় হাজিরা দিতে হয় বিরানব্বই পার করা আডবাণীকে। গত জন্মদিনে তাঁর বাড়িতে ফুলের তোড়া হাতে পৌঁছে গিয়েছিলেন খোদ মোদী। কিন্তু দলে আডবাণীর ঠাঁই শুধু ‘মার্গ-দর্শক মণ্ডলীতে’।
শনিবার ট্রাস্টের সদস্যদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন রামমন্দির নির্মাণ কমিটির প্রধান নৃপেন্দ্র মিশ্র। যিনি প্রধানমন্ত্রী মোদীর প্রাক্তন প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি। সূত্রের খবর, মন্দিরের যে নকশা ঠিক ছিল, কিছু বদল হতে পারে সেখানেও। উচ্চতা ১২৮ ফুট থেকে বেড়ে ১৬১ ফুট হতে পারে। চূড়া থাকতে পারে তিনটির বদলে পাঁচটি। মন্দির চত্বর ৭০ একর থেকে বেড়ে হতে পারে ১০৮ একরের মতো।
অযোধ্যার সাধুরা চান, হিন্দু ভাবাবেগের কথা মাথায় রেখে নিজে এসে মন্দিরের শিলান্যাস করুন প্রধানমন্ত্রী। দলের অনেকে চান, জাঁকজমকে তা হয়ে উঠুক সারা পৃথিবীর হিন্দুদের প্রধান তীর্থস্থল। শিলান্যাসও হোক মনে রাখার মতো। কিন্তু সে পথে কাঁটা করোনা। শরদ পওয়ারের মতো নেতা তো বলেই দিয়েছেন, রামমন্দির নির্মাণের কর্মসূচি নয়, গুরুত্ব দেওয়া উচিত করোনা মোকাবিলায়।
তবু মোদী আসবেন, এই আশায় বুক বাঁধছে অযোধ্যা। এক করসেবক বলেন, “মনে রাখবেন, মন্দির তৈরির কাজ শেষ করার পরিকল্পনাও সাড়ে তিন বছরে।” অর্থাৎ, আগামী লোকসভা ভোটের ঠিক মুখে। ভোট-বৈতরণী পার হতে রামমন্দির ঘিরে আবেগের বৈঠার জোর যে মোক্ষম, দেশের রাজনীতিতে তা অন্তত অজানা নয়।