নথিপত্র যাচাইয়ে অনীহায় ভোগান্তি তৎকাল পাসপোর্টে

পাসপোর্ট হাতে পেয়ে নিশ্চিন্ত মনে কানাডায় স্বামীর কাছে পৌঁছে গিয়েছেন কলকাতার এক তরুণী। কিন্তু কয়েক দিনের মধ্যেই সেখানে বসে চিঠিতে জানতে পেরেছেন, সময় মতো পুলিশের ‘ভেরিফিকেশন’ না হলে বাজেয়াপ্ত করা হবে তাঁর পাসপোর্ট। বিদেশে বসে আরও বিপদে পড়ে যাবেন তিনি। সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে কলকাতায় তাঁর আত্মীয়স্বজনেরা যোগাযোগ করেছেন পুলিশের সঙ্গে।

Advertisement

সুনন্দ ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০১৪ ০২:৩৮
Share:

পাসপোর্ট হাতে পেয়ে নিশ্চিন্ত মনে কানাডায় স্বামীর কাছে পৌঁছে গিয়েছেন কলকাতার এক তরুণী। কিন্তু কয়েক দিনের মধ্যেই সেখানে বসে চিঠিতে জানতে পেরেছেন, সময় মতো পুলিশের ‘ভেরিফিকেশন’ না হলে বাজেয়াপ্ত করা হবে তাঁর পাসপোর্ট। বিদেশে বসে আরও বিপদে পড়ে যাবেন তিনি। সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে কলকাতায় তাঁর আত্মীয়স্বজনেরা যোগাযোগ করেছেন পুলিশের সঙ্গে।

Advertisement

সাধারণ ভাবে আবেদন করার পরে পুলিশ নথিপত্র যাচাই করে সবুজ সঙ্কেত দিলে তবেই পাসপোর্ট হাতে পান আবেদনকারী। কিন্তু বিদেশ যাওয়ার তাড়া থাকলে বেশি টাকা দিয়ে তৎকাল ব্যবস্থায় সামান্য কিছু প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরে তাড়াতাড়ি পাসপোর্ট পাওয়া যায়। পরে পুলিশ নথি যাচাই করতে যায়। অভিযোগ, পাসপোর্ট এক বার হাতে পৌঁছে গেলে পুলিশি যাচাইয়ের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দিতে আর গা করেন না আবেদনকারীদের একাংশ। তাই অনেক সময়ে পুলিশ বাড়িতে গিয়েও নথি যাচাই না করে খালি হাতে ফিরে আসছে। ‘আবেদনকারী নথি যাচাই করতে অনীহা প্রকাশ করেছেন’ বলে পাসপোর্ট দফতরে রিপোর্ট পাঠিয়ে দিচ্ছে পুলিশ।

বছরের পর বছর ধরে এই ধরনের ফাইল জমে পাহাড় হয়ে গিয়েছে পাসপোর্ট দফতরে। ও দিকে পাসপোর্ট নিয়ে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছেন নাগরিক। ফাইল বন্ধও করা যাচ্ছে না। এ বার সেই ফাইল ধরে ধরে চিঠি পাঠানো শুরু হয়েছে আবেদনকারীদের কাছে। কানাডায় স্বামীর কাছে যাওয়া তরুণীও চিঠি পেয়েছেন এই কারণেই। কড়া ভাষায় লেখা ওই চিঠিতে বলা হচ্ছে, ‘পুলিশের কাছ থেকে আপনার নামে বিরূপ রিপোর্ট এসেছে। আপনি নিজের সম্পর্কে কোনও তথ্য জানাতে রাজি হননি। ১৯৬৭ সালের পাসপোর্ট আইন মোতাবেক আপনার পাসপোর্ট কেন বাজেয়াপ্ত করা হবে না, তা জানান। অবিলম্বে নতুন করে নথি যাচাইয়ের আবেদন করুন।’

Advertisement

পাসপোর্ট পেতে গেলে পুলিশের এই নথি যাচাই বাধ্যতামূলক। ভারত সরকারের নিয়ম অনুযায়ী, ১৯৭১ সালের পরে যাঁরা বাংলাদেশ থেকে এ দেশে চলে এসেছেন, তাঁরা ভারতীয় পাসপোর্ট পাওয়ার যোগ্য নন। অথচ সম্প্রতি বাংলাদেশ থেকে আসা নাগরিকও ভারতীয় পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেছেন। প্রধানত আবেদনকারী ভারতের নাগরিক কি না, তা জানার জন্যই পুলিশের এই তদন্ত। আবেদনকারীর ঠিকানা, সেখানে তিনি কত বছর ধরে বাস করছেন, তাঁর জন্ম সার্টিফিকেট বা জন্ম সংক্রান্ত অন্য প্রমাণপত্র ও শিক্ষাগত যোগ্যতা খতিয়ে দেখে ‘পক্ষে’ রিপোর্ট পাঠালে তবেই পাসপোর্ট হাতে পাওয়ার কথা আবেদনকারীর।

রিজিওনাল পাসপোর্ট অফিসার গীতিকা শ্রীবাস্তব বলেন, “৩৮ হাজার ফাইল জমে গিয়েছে কলকাতায়। এখন চিঠি পেয়ে গড়ে ৩০০ জন করে হাজির হচ্ছেন আমাদের অফিসে। নতুন করে যাচাই করার জন্য পুলিশের কাছে পাঠানো হচ্ছে তাদের আবেদন।” ওই দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, শুধু তৎকাল নয়, পাসপোর্ট নবীকরণের সময়ে ঠিকানা বদল, আগে পাসপোর্ট থাকলেও প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে গেলে নতুন পাসপোর্ট পাওয়ার পরে যাবতীয় নথি যাচাই করা প্রয়োজন। গীতিকার কথায়, “স্থানীয় থানার সঙ্গে যোগাযোগ করে এই যাচাই করিয়ে নেওয়ার দায় আবেদনকারীরই।”

তৎকাল ব্যবস্থায় আবেদন করার সময়ে কোনও এক উচ্চপদস্থ সরকারি আমলার চিঠি দেওয়াটা বাধ্যতামূলক। পাসপোর্ট পেয়ে আবেদনকারী উধাও হয়ে গেলে সরকারের কাছে সেই আমলাই দায়বদ্ধ থেকে যান। পুলিশের অভিযোগ, যাচাইয়ের জন্য আবেদনকারীর বাড়িতে পৌঁছে গেলেও অনেকেই ওই কাজে সহযোগিতা করছেন না। অনেক সময়েই বলা হচ্ছে, ‘অমুক উচ্চপদস্থ অফিসার সার্টিফিকেট দিয়েছেন। তার পরেও আপনি নথিপত্র যাচাই করতে এসেছেন!’ এক পুলিশ অফিসারের কথায়, “এই যাচাইটা বাধ্যতামূলক। এখন পাসপোর্ট দফতরের চিঠি পেয়ে আমাদের নতুন করে দৌড়তে হচ্ছে আবেদনকারীদের বাড়িতে।”

তবে, অনেক আবেদনকারীর অভিজ্ঞতা অন্য রকম। বাড়ি এসে দু’একটি প্রশ্ন করেই ফিরে গিয়ে অথবা বাড়িতে না গিয়েই বিরূপ রিপোর্ট পাঠিয়ে দিচ্ছে পুলিশ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement