মুখ্যমন্ত্রী এইচডি কুমারস্বামী
দীর্ঘ কর্নাটক-নাটকে আস্থাভোট নিয়ে নতুন পর্বের সূচনা হল বৃহস্পতিবার। এ দিন দিনভর নানা টানাপড়েনের পর, শেষ পর্যন্ত অধিবেশন মুলতুবি হয়ে যায়। ফলে, থমকে যায় আস্থাভোট প্রক্রিয়াও। আগামী কাল শুক্রবার ১১টা পর্যন্ত অধিবেশন মুলতুবি রাখা হয়েছে।
বুধবার সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরে এ দিনও জট কাটল না কন্নড় ভূমে। বিধানসভায় বিতর্কের শুরুতেই বিরোধী দলনেতা বিএস ইয়েদুরাপ্পা বলেন, ‘‘আশা করি, এক দিনেই আস্থাভোট প্রক্রিয়া শেষ হবে।’’ কিন্তু, শেষ পর্যন্ত বিজেপির সেই আশা পূর্ণ হল না এ দিন। পাল্টা বলতে গিয়ে ইয়েদুরাপ্পাকে নিশানা করেন মুখ্যমন্ত্রী এইচডি কুমারস্বামী। তিনি বলেন, ‘‘আমার মনে হয়, বিরোধী দলনেতার খুব তাড়াহুড়ো রয়েছে।’’
এ দিন বিধানসভায় বিতর্ক শুরু হলেও, দিনের বেশির ভাগ সময়ই সরকার পক্ষ ব্যস্ত ছিল কংগ্রেস বিধায়ক শ্রীমন্ত পাতিলকে অপহরণের অভিযোগ নিয়ে। কংগ্রেসের অন্য বিধায়কদের সঙ্গেই বেঙ্গালুরুতে ছিলেন শ্রীমন্ত। তাঁকে বুধবার মুম্বইয়ে দেখা যায়। কর্নাটকের মন্ত্রী ডি কে শিবকুমার অভিযোগ করেন, ‘‘বিজেপি শ্রীমন্তকে অপহরণ করেছে।’’ পরে জানা যায়, শ্রীমন্ত পাতিল বুকে ব্যথা নিয়ে মুম্বইয়ের একটি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
আরও পড়ুন: কুলভূষণ মামলায় জিতল ভারতই, পাকিস্তানকে প্রাণদণ্ড পুনর্বিবেচনা করতে বলল আন্তর্জাতিক আদালত
বিতর্ক সরগরম হয়ে ওঠে বিক্ষুব্ধ বিধায়কদের নিয়েও। তাঁরা দলীয় হুইপ মানতে বাধ্য নন, তা বুধবারই জানিয়ে দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু, এ দিন সকালেই স্পিকার কেআর রমেশ কুমারের দেখা করেন মুখ্যমন্ত্রী কুমারস্বামী ও কংগ্রেসের পরিষদীয় দলনেতা সিদ্দারামাইয়া। তাঁদের দাবি, ‘হুইপ জারি করা সাংবিধানিক অধিকার’। শীর্ষ আদালতের রায় ও সাংবিধানিক অধিকার এই দুইয়ের ‘দ্বন্দ্ব’-এর কথা স্পিকারকেও জানান তাঁরা। সেই বিতর্কও বিধানসভার অধিবেশনে উঠে আসে বার বার।
তর্ক-বিতর্ক, হই হট্টগোল— এক সময় পরিস্থিতি এমন হয় যে, এ দিন অধিবেশন মুলতুবি করে দেন স্পিকার কেআর রমেশ কুমার। এর পর, কংগ্রেস ও জেডিএস আস্থাভোট নিয়ে টালবাহানা করছে বলে রাজ্যপাল বাজুভাই বালার দ্বারস্থ হয় বিজেপির প্রতিনিধিদল। এ দিনই আস্থাভোট শেষ করার জন্য স্পিকার কেআর রমেশ কুমারকে জানান রাজ্যপাল। কিন্তু, শেষ পর্যন্ত আর তা হয়নি। এর প্রতিবাদে বিধানসভাতেই রাত কাটাবেন বিজেপি বিধায়করা।
১৮ বিধায়কের (কংগ্রেস ও জেডিএস-এর ১৬ বিধায়ক এবং দু’জন নির্দল) ইস্তফার ফলে টলমল করছে কর্নাটক বিধানসভা। বিক্ষুব্ধ ১৮ বিধায়কের ইস্তফাপত্র গৃহীত হলে বা তাঁরা আস্থাভোটে অংশগ্রহণ না করলে, জোট সরকারের বিধায়ক সংখ্যা ১১৮ থেকে কমে হবে ১০০। অন্য দিকে, বিজেপিকে সমর্থনকারী বিধায়কের সংখ্যা হবে ১০৭। ম্যাজিক ফিগার ১০৫ হওয়ায় সরকার গড়ার জন্য বিজেপির পাল্লাই ভারী হবে।
আরও পড়ুন: ফের গ্রেফতার মুম্বই হামলার মূল চক্রী হাফিজ সইদ
আদালতের রায়কে ঢাল করেই, বিদ্রোহী বিধায়করা ইতিমধ্যেই আস্থাভোটে অংশগ্রহণ না করার ঘোষণা করেছেন। তবে সেই ‘অটুট মনোবলে’ খানিকটা হলেও ফাটল ধরেছে। খানিকটা চমক দিয়েই ইস্তফাপত্র প্রত্যাহার করবেন বলে জানিয়েছেন বিদ্রোহী কংগ্রেস বিধায়ক রামলিঙ্গ রেড্ডি। ফলে, কুমারস্বামীর ঝুলিতে ১০১ বিধায়কের সমর্থন থাকার সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছে। কিন্তু, তাতেও সঙ্কট কাটছে না ১৩ মাসের কংগ্রেস-জেডিএস জোট সরকারের।