আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। — ফাইল চিত্র।
বিদেশ থেকে আমেরিকায় আমদানি করা সমস্ত গাড়ির উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আগামী ২ এপ্রিল থেকেই তা কার্যকর হতে চলেছে। নয়া ট্রাম্প-নীতিতে বিপদে পড়তে পারে ভারতের টাটা মোটর্স কিংবা রয়্যাল এনফিল্ড-এর নির্মাতা আইশার মোটর্সের মতো নানা সংস্থাও। আর কোন কোন ভারতীয় সংস্থার নাম সেই তালিকায় রয়েছে?
২০২৪ অর্থবর্ষে ভারত প্রায় ২১.২ বিলিয়ন ডলার মূল্যের গাড়ির যন্ত্রাংশ রফতানি করেছে, ভারতীয় মুদ্রায় যার মূল্য ১৮,১৯৩ কোটির কাছাকাছি। এর মধ্যে ইউরোপ এবং আমেরিকায় রফতানির পরিমাণ চোখে পড়ার মতো। তাই ভারতের টাটা মোটর্স, আইশার মোটর্স, সোনা বিএলডব্লিউ এবং সংবর্ধন মাদারসনের মতো গাড়ি এবং গাড়ির যন্ত্রাংশ প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলির উপর ট্রাম্পের শুল্কনীতির সরাসরি প্রভাব পড়তে চলেছে। এ ছাড়াও, বিপাকে পড়তে চলেছে ভারত ফোর্জ, সানসেরা ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড, সুপ্রজিৎ ইঞ্জিনিয়ারিং এবং বালকৃষ্ণ ইন্ডাস্ট্রিসের মতো সংস্থাও। এমনকি, মার্কিন প্রেসিডেন্টের ঘোষণার পর বৃহস্পতিবার সকালেই ভারতীয় এই সংস্থাগুলির শেয়ারদর এক ধাক্কায় ৫ থেকে ৭ শতাংশেরও বেশি মুখ থুবড়ে পড়েছে। এই সংস্থাগুলি সাধারণত ইউরোপ, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া এবং চিনে গাড়ির যন্ত্রাংশ রফতানি করে থাকে, যেখান থেকে আমেরিকায় গাড়ি সরবরাহ করা হয়।
টাটা মোটর্সের সঙ্গে আমেরিকার সরাসরি রফতানি-সম্পর্ক নেই। তবে টাটার সহযোগী প্রতিষ্ঠান জাগুয়ার ল্যান্ড রোভার (জেএলআর) মার্কিন বাজারে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে রয়েছে। জেএলআর-এর চলতি অর্থবর্ষের রিপোর্ট বলছে, ওই সংস্থার তৈরি গাড়ির ২২ শতাংশই কেনে আমেরিকা। উল্লেখ্য, চলতি অর্থবর্ষে বিশ্বব্যাপী প্রায় ৪০০,০০০টি গাড়ি বিক্রি করেছে জেএলআর, যার মধ্যে ক্রেতার সংখ্যার নিরিখে আমেরিকা অন্যতম শীর্ষস্থানে রয়েছে। তাদের আমেরিকায় বিক্রি হওয়া গাড়িগুলি মূলত ব্রিটেন এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক কারখানায় তৈরি করা হয়, যার সবই এখন ২৫ শতাংশ শুল্কের আওতায় থাকবে।
ট্রাম্পের শুল্কনীতির প্রভাব পড়বে রয়্যাল এনফিল্ড মোটরসাইকেলের নির্মাতা আইশার মোটর্সের উপরেও। কারণ, আমেরিকা এনফিল্ডের ৬৫০ সিসি মডেলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বাজার। ট্রাম্পের ঘোষণার পর বৃহস্পতিবার সকালে আইশারের শেয়ারদর ১ শতাংশ পড়ে গিয়েছে।
কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে সংবর্ধন মাদারসন ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের। সংবর্ধন মাদারসন ভারতের শীর্ষস্থানীয় গাড়ির যন্ত্রাংশ প্রস্তুতকারক সংস্থা। ইউরোপ এবং আমেরিকা— দুই দেশের বাজারেই এই সংস্থার চোখে পড়ার মতো উপস্থিতি রয়েছে। এরা টেসলা এবং ফোর্ডের মতো আমেরিকার অন্যতম প্রধান গাড়ি নির্মাতা সংস্থাগুলিকে যন্ত্রাংশ সরবরাহ করে। তবে আমেরিকা এবং ইউরোপে সংবর্ধনের নিজস্ব যন্ত্রাংশ কারখানা রয়েছে। তাই যে সব সংস্থা শুধু মাত্র রফতানির উপর নির্ভরশীল, তাদের তুলনায় সংবর্ধন মাদারসন আমদানি শুল্কের প্রভাব থেকে কিছুটা হলেও সুরক্ষিত।
এর পরেই তালিকায় রয়েছে যন্ত্রাংশ প্রস্তুতকারক সংস্থা সোনা বিএলডব্লিউ। গিয়ার এবং স্টার্টার মোটর-সহ মোটরগাড়ির নানা যন্ত্রাংশ এবং উপাদান তৈরি করে এই সংস্থা। এই সংস্থার মোট রাজস্বের প্রায় ৬৬ শতাংশই আসে আমেরিকা এবং ইউরোপের বাজার থেকে। যদিও সোনা বিএলডব্লিউ ধীরে ধীরে চিন, জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়াতেও বাজার সম্প্রসারণের চেষ্টা করছে। ফলে তুলনামুলক ভাবে নিরাপদ অবস্থানে রয়েছে তারাও।
গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই ট্রাম্পের মুখে আমদানিকৃত গাড়ির উপর শুল্ক চাপানোর কথা শোনা গিয়েছিল। এক মাস পরে, তাঁর সেই ভাবনাই কার্যকর করতে চলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। আগামী ২ এপ্রিল থেকেই কার্যকর হবে এই সিদ্ধান্ত। তার পরের দিন, অর্থাৎ ৩ এপ্রিল থেকে শুল্ক কাটা শুরু হবে। ট্রাম্পের দাবি, নতুন শুল্কনীতির ফলে আমেরিকার উৎপাদন গতি পাবে। পাশাপাশি, বছরে রাজকোষে ঢুকবে অতিরিক্ত ১০ হাজার কোটি ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৮৬ হাজার কোটি টাকা)। যদিও ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তে সিঁদুরে মেঘ দেখছে সে দেশের বণিকমহলও। অতিরিক্ত শুল্ক চাপলে গাড়ি কেনা মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে বেরিয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ার বদলে হ্রাস পেতে পারে।