আউট হয়ে ফিরে যাচ্ছেন ধোনি। ছবি: পিটিআই।
ব্যাটে নীতীশ রানা। বলে ওয়ানিন্দু হাসরঙ্গ। এই দুই ক্রিকেটারের দাপটে আইপিএলের তৃতীয় ম্যাচে এসে প্রথম জয় পেল রাজস্থান রয়্যালস। অন্য দিকে, টানা দ্বিতীয় হার চেন্নাই সুপার কিংসের। ঘরের মাঠে আরসিবি-র কাছে হারের দু’দিন পর এ বার গুয়াহাটিতে এসেও হারতে হল। শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করেও পারল না। শেষ দিকে দলকে জেতানোর আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। শেষ ওভারে তিনি আউট হতেই সব আশা শেষ হয়ে যায়। আগে ব্যাট করে রাজস্থান ১৮২/৯ তুলেছিল। জবাবে চেন্নাই থেমে গেল ১৭৬/৬ রানে। হারল ৬ রানে।
চলতি আইপিএলে এই প্রথম বিপক্ষের মাঠে খেলতে নেমেছিল চেন্নাই। দেখা গেল, এই মরসুমেও ধোনি-প্রেম কমেনি সমর্থকদের। গোটা স্টেডিয়ামেই হলুদ জার্সির ছড়াছড়ি। গোটা ম্যাচ সমর্থকেরা চেন্নাইয়ের নামে চিৎকার করলেন। খেলাটা বর্ষাপারা না চিপকে, সেটা গুলিয়ে যাচ্ছিল। তবে সেই সমর্থকদের আস্থার দাম রাখতে পারল না চেন্নাই।
১৮৩ রান তাড়া করতে নেমে শুরুটা মোটেই ভাল হয়নি চেন্নাইয়ের। প্রথম ওভারেই তারা হারায় রাচিন রবীন্দ্রকে। আগের দু’টি ম্যাচে ভাল খেললেও রাচিন এ দিন ০ রানেই ফিরে যান। এ দিনও রাহুল ত্রিপাঠীকে ওপেন করতে নামানোর রাস্তা থেকে সরে আসেনি চেন্নাই। তবে বড় রান করে দলের আস্থা অর্জন করতে এ দিনও ব্যর্থ রাহুল। তিনটি চার এবং একটি ছয়ের সাহায্যে ১৯ বলে ২৩ রান করে হাসরঙ্গের বলে শিমরন হেটমায়ারের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান।
দলকে টেনে তোলার চেষ্টা করতে থাকেন রুতুরাজ। মাঝে কিছু ক্ষণ সঙ্গী হিসাবে পেয়েছিলেন শিবম দুবেকে। ১০ বলে ১৮ করে হাসরঙ্গের বলে এক হাতে দুবের ক্যাচ ধরেন রিয়ান পরাগ। হাসরঙ্গকে অল্লু অর্জুনের সিনেমা ‘পুষ্পা’র ধাঁচে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে দেখা যায়। পরে বিজয় শঙ্করকে (৯) আউট করেও একই রকম উচ্ছ্বাস করেন তিনি।
চেন্নাইয়ের ভরসা ছিল রুতুরাজ এবং রবীন্দ্র জাডেজার জুটি। দু’জনে মিলে ৩৭ রানের জুটি গড়েছিলেন। আগ্রাসী হতে গিয়ে উইকেট খোয়ান রুতুরাজ (৬৩)। এই ম্যাচে অবশ্য দেরি করে নামেননি ধোনি। রুতুরাজ ফিরতেই সাত নম্বরে নামেন। তখনও জিততে বাকি ছিল ৫৪ রান। তবে এই ধোনির আগের মতো নন। চার-ছয় মেরে একটা চেষ্টা করেছিলেন বটে। তবে শেষ ওভারে সন্দীপ শর্মার বলে ফিরে গেলেন হেটমায়ারের দুরন্ত ক্যাচে।
এর আগে, টসে জিতে বোলিং নিয়ে শুরুতেই সাফল্য পায় চেন্নাই। খলিল আহমেদকে প্রথম বলে চার মেরেও তৃতীয় বলেই রবিচন্দ্রন অশ্বিনের হাতে ক্যাচ তুলে দেন যশস্বী জয়সওয়াল। সঞ্জু স্যামসনের সঙ্গে ক্রিজ়ে যোগ দেন নীতীশ। আগের দু’টি ম্যাচে রান না পেলেও এই ম্যাচে শুরু থেকেই চালিয়ে খেলতে থাকেন তিনি।
রানার আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের সামনে চেন্নাইয়ের কোনও বোলারই দাঁড়াতে পারছিলেন না। জেমি ওভার্টন, অশ্বিন, খলিল কাউকেই রেয়াত করছিলেন না রানা। স্যামসন বরং ধীরগতিতে খেলছিলেন। রানাকে বেশি খেলার সুযোগ করে দিচ্ছিলেন। তবে নুর আহমেদের বলে রাচিনের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান সঞ্জু (২০)।
তবে রানাকে থামানো যাচ্ছিল না। সামনে যে-ই আসছিলেন, দিশেহারা হয়ে যাচ্ছিলেন। রানা সবচেয়ে বেশি নির্দয় ছিলেন অশ্বিনের উপর। তাঁর বলেই উইকেট খোয়ালেন। তবে এ ক্ষেত্রে ধোনি-অশ্বিনের যুগলবন্দি লক্ষণীয়। ১২তম ওভারের দ্বিতীয় এবং তৃতীয় বলে অশ্বিনকে ছয় এবং চার মারেন নীতীশ। মনে হচ্ছিল মরসুমের প্রথম শতরানটি রবিবারই হয়ে যাবে।
চতুর্থ বলটি করার আগে একটু থমকে যান অশ্বিন। বলটি করেন উইকেটের অনেক বাইরে। ক্রিজ় ছেড়ে এগিয়ে আসা রানা ব্যাট বাড়িয়েও নাগাল পাননি। ধোনি সেই বল ধরে অনায়াসে স্টাম্প ভেঙে দেন। মুহূর্তের অসতর্কতায় আউট হয়ে হতাশ হয়ে পড়েন কেকেআরের প্রাক্তন ক্রিকেটার।
রানা আউট হওয়ার পর রাজস্থানের রানের গতিও কমে যায়। ধ্রুব জুরেল (৩), ওয়ানিন্দু হাসরঙ্গ (৪) বেশি ক্ষণ টিকতে পারেননি। চালিয়ে খেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন রিয়ান। তিনি ৩৭ রানে ফেরেন। হেটমায়ার (১৯) দলের রান দুশো পার করতে পারেননি।