সন্দীপ মহেশ্বরী। ভার্চুয়াল দুনিয়ার অত্যন্ত জনপ্রিয় মুখ। নিজে এক সময় ভীষণই হতাশার মধ্যে কাটিয়েছেন। এখন লাখ লাখ ফলোয়ারকে হতাশা কাটিয়ে এগিয়ে চলার মন্ত্র দেন তিনি।
ব্যবসায়ী, শিক্ষক, ছাত্র এমনকি, তাঁদের অভিভাবকেরাও সন্দীপ মহেশ্বরীর ভক্ত। কিন্তু তাঁর ভক্তদের অনেকেই জানেন না, ইউটিউব সেনসেশন সন্দীপ মহেশ্বরী এক সময় জীবনে অনেক ব্যর্থতার সম্মুখীন হয়েছিলেন।
১৯৮০ সালে নয়াদিল্লিতে তাঁর জন্ম। বাবা কিশোর মহেশ্বরী এবং মা শকুন্তলা রানি মহেশ্বরী। তাঁর এক বোন রয়েছে।
প্রথম দিকে পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালই ছিল। বাবার অ্যালুমিনিয়ামের ব্যবসা ছিল। কিন্তু সেই ব্যবসা ভেঙে পড়ার পরই পরিবারে বিপর্যয় নেমে আসে।
সন্দীপ তখন দশম শ্রেণিতে পড়েন। যত দিন যাচ্ছিল সঞ্চয়ের টাকাও ফুরিয়ে আসছিল। এরপর সন্দীপের বাবা আরও অনেক ব্যবসা শুরু করার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু কোনওটাই আর সে ভাবে দাঁড় করাতে পারেননি।
ছোট থেকে অবশ্য একটা বিষয় সন্দীপ খুব ভাল করেই বুঝে গিয়েছিলেন। জীবনে দাঁড়াতে গেলে টাকা উপার্জন করতেই হবে। মাত্র ১৩ বছর বয়স থেকেই সেটা শুরু করে দিয়েছিলেন তিনি।
বাবা তাঁকে একটা স্কুটার কিনে দিয়েছিলেন। প্রথম প্রথম বন্ধুদের কাছে সেই স্কুটারটা ভাড়া খাটাতেন তিনি। বদলে মিলত প্রতি ঘণ্টায় ৫০ টাকা।
সন্দীপ মেধাবী ছিলেন। কিন্তু পারিবারিক সঙ্কটের জেরে পড়াশোনাও খুব বেশি দূর চালাতে পারেননি। কিরোরিমল কলেজে পড়ছিলেন। কিন্তু মাঝ পথেই পড়া থামিয়ে দিতে হয় তাঁকে।
পড়াশোনা চলাকালীনই সন্দীপ মাত্র ১৯ বছর বয়সে মডেলিং শুরু করেন। কিন্তু এই ফিল্ডে এত মানসিক নিগ্রহের শিকার হতে হয়েছে তাঁকে যে, বেশিদিন এখানেও টিকতে পারেননি।
এরপর চাকরির সন্ধানে দু’সপ্তাহের জন্য একটি ফটোগ্রাফি কোর্সেও ভর্তি হন তিনি। মডেলদের পোর্টফোলিও বানানোর ফটোগ্রাফি স্টুডিয়ো খুলে ফেলেন একটা। তবে একেবারেই ভাল চলত না তাঁর স্টুডিয়ো।
২০০২ সালে অন্য একটি ফটোগ্রাফি কোম্পানি খোলেন। কিন্তু সেই কোম্পানি খোলার মাত্র ছ’মাসের মধ্যেই বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ২০০৬ সালে ‘ইমেজেস বাজার’ খোলেন। এই ইমেজেস বাজারই ছিল তাঁর জীবনের টার্নিং পয়েন্ট।
সে সময় তিনি একসঙ্গে টেলিকলার, কাউন্সেলর এবং ফটোগ্রাফারও। আজ, এই সংস্থার সাত হাজার ক্লায়েন্ট ছড়িয়ে আছে ৪৫টি দেশে।
মাত্র ২৯ বছর বয়সে তিনি দেশের সফলতম উদ্যোগী হন। তাঁর জীবনের মূল মন্ত্র, ‘ব্যর্থতাকে ভয় পেয়ো না’ এবং ‘নিজের এবং অন্যদের প্রতি সৎ থাকো’।
তবে এর বাইরেও তাঁর আরও একটা পরিচিতি রয়েছে। তিনি একজন মোটিভেটর, অনুপ্রেরণা জাগানো বক্তাও। হয়তো নিজেকে আয়নাতে দেখতে পান বলেই অন্যের আয়না হয়ে উঠেতে পেরেছেন সন্দীপ মহেশ্বরী।