জীবন সিংহ। —ফাইল চিত্র।
পৃথক রাজের বিকল্প হিসাবে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল পেলেও মেনে নিতে তৈরি কেএলও। অবশ্য তার সঙ্গে জনজাতির মর্যাদা-সহ আরও একগুচ্ছ দাবি-দাওয়া থাকছেই। আজ উত্তর গুয়াহাটির আমিনগাঁওতে প্রথম বার এক মঞ্চে আলোচনায় মিলিত হলেন অসম ও পশ্চিমবঙ্গের কেএলও-র নেতা-নেত্রীরা। কোচদের আটটি সংগঠনও যোগ দিল বৈঠকে। বৈঠক শেষে কেন্দ্রের সঙ্গে সম্ভাব্য আলোচনার জন্য খসড়া প্রস্তাব তৈরি হল। কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের দাবি ছাড়াও সর্বসম্মত ভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হল, অসম ও পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন ও বর্তমান কেএলও নেতৃত্ব ও কোচ এবং রাজবংশী সব সংগঠন একজোট হয়েই শান্তি প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে যাবে। পশ্চিমবঙ্গের কেএলও নেতারা অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মার সঙ্গেও দেখা করে আলোচনার প্রতি সমর্থন জানাতে চান। সব ঠিক থাকলে কাল দেখা হতে পারে।
এ দিনের বৈঠকে জীবন সিংহের ধর্মপুত্র দেবরাজও ছিলেন। তাঁর উপস্থিতিতেই রাজবংশী নেতা মহেশ রায় বলেন, ‘‘অসম ও পশ্চিমবঙ্গে কেএলও ও কোচ নেতারা দু’টি পৃথক শিবিরে বিভক্ত। দেবরাজ যে ভাবে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে গালি দিচ্ছেন, তাতে মনে হচ্ছে অসম সরকারের সঙ্গে আলোচনা করেই চুক্তি হয়ে যাবে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, আলোচনা বাংলাকে বাদ দিয়ে হতে পারে না। দুই রাজ্য মিলিয়ে সমাধান করতে হবে। মধ্যস্থতাকারীকে আরও পরিণত ও সংযত হতে হবে।’’
দেবরাজ জানান, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দফতর থেকে ফোন করে তাঁকে বলা হয়, জীবন সিংহের মেয়েদের লেখাপড়া করাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার, প্রাক্তন ক্যাডারদের হোমগার্ডের চাকরি দেওয়া হয়েছে। তাই জীবন সিংহকে আত্মসমর্পণ করে আলোচনায় বসতে হবে। শুনেই মেজাজ হারিয়ে তিনি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কড়া সমালোচনা করেন।
টম বলেন, ‘‘আমরা আলফা বা এনএসসিএনের মতোই সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতার জন্য লড়ছিলাম। কিন্তু কোচ জনতা সেই দাবিতে সাড়া দেননি। তাঁরা নিজের জমির ও ভাষার অধিকার চেয়েছিলেন। পরবর্তীকালে আমরা এ নিয়ে আলোচনা করি সকলের সঙ্গে। উপলব্ধি করি, ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বিশেষ লাভ নেই। ভারতে থেকেই স্বাতন্ত্র্য ও অধিকার রক্ষা করতে হবে। তাই পৃথক রাজ্যের দাবি কার্যত তখনই ত্যাগ করা হয়।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘যে বিজেপি সরকার কেন্দ্রে থাকার সময় অপারেশন অল ক্লিয়ার চালিয়ে কেএলওকে দমন করা হয়েছিল, সেই বিজেপিই এ বার কেএলও-দের দাবিকে গুরুত্ব দিতে তৈরি। তা ইতিবাচক পরিবর্তন।’’ আলোচনায় সমর্থন জানিয়ে তিনি জীবন সিংহকে মূল স্রোতে ফিরে, কোচ জাতিকে নেতৃত্ব দিয়ে অধিকার অর্জনের পথ সুগম করার আহ্বান জানান। তাঁর কথায়, “অসম, দিল্লি ও বাংলা সরকারকে অনুরোধ, আলোচনা দ্রুত শুরু করুন।’’ পরাগ কোচ বলেন, ‘‘অস্ত্র বা যুদ্ধ চালিয়ে পৃথক রাজ্য পাওয়া যে সম্ভব নয়, তা বোঝাই গিয়েছে। খালি হাতে না থেকে, মার্জার চুক্তির ভিত্তিতে আমাদের দাবিপূরণ নিয়ে আলোচনা শুরু হোক।’’
আলোচনার পরে সর্বসম্মত প্রস্তাব নেওয়া হয়, কেন্দ্রশাসিত কমতাপুরের পাশাপাশি কোচ-রাজবংশীদের এসটি মর্যাদা দেওয়ার দাবি, নরনারায়ণের নামে বিশ্ববিদ্যালয়, চিলা রায়ের নামাঙ্কিত এমস তৈরি, কোচ রাজার নামে রাস্তা, নারায়ণী সেনার আদলে পৃথক আধা সেনা ব্যাটেলিয়ন তৈরি, কোচ ভাষাকে জাতীয় ভাষা হিসেবে ঘোষণা, সংস্কৃতি-ভাষা-পোশাক সংরক্ষণ করার দাবি প্রস্তাবপত্রের অন্তর্ভুক্ত হবে। কোচ ও রাজবংশীদের মধ্যে বিভেদ ও পশ্চিমবঙ্গ ও অসমের কেএলও তথা কোচ নেতাদের মধ্যেও বিভেদ মিটিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হল সভায়। এই প্রস্তাবপত্র দুই রাজ্য সরকারকেই পাঠানো হবে।
দিবাকর বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা টেলি কনফারেন্স ইতিমধ্যেই কথা বলেছেন জীবন সিংহের সঙ্গে। ২০২৪ সালের আগেই, কেন্দ্রে বর্তমান সরকারের আমলেই শান্তি চুক্তি সেরে ফেলতে চাইছেন বাবা।’’ তাঁর হুমকি, যদি শেষ পর্যন্ত পৃথক রাজ্য বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল কিছুই না দেয় সরকার, তা হলে ‘চিকেন নেক করিডর’ বন্ধ করে আন্দোলনে বসবেন কোচরা। তখন কোচ রাজ্য দিতে বাধ্য হবে কেন্দ্র।