Farmer's Protest

Farmer's protest: মহাপঞ্চায়েত ২২শে, ঘোষণা টিকায়েতের

কৃষি আন্দোলনের রফাসূত্র খুঁজতে ইতিমধ্যেই ১১টি বৈঠক নিস্ফলা হয়েছে। বিজেপি বলেছে, কৃষকেরা চাইলে ফের তাঁদের সঙ্গে বৈঠকে বসতে রাজি আছে সরকার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০২১ ০৮:০৩
Share:

গত চার বছরে দেশে পাঁচ গুণ বেড়েছে কৃষক আন্দোলন। ফাইল চিত্র।

আগামী ২৬ নভেম্বর এক বছর পূর্ণ হচ্ছে কৃষক আন্দোলনের। বর্ষপূর্তির ঠিক আগে ২২ নভেম্বর ভোটমুখী উত্তরপ্রদেশের লখনউয়ে নরেন্দ্র মোদী সরকারের বিতর্কিত কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে একটি মহাপঞ্চায়েত ডাকার সিদ্ধান্ত নিল সংযুক্ত কিসান মোর্চা। আজ ভারতীয় কিসান ইউনিয়নের মুখপাত্র রাকেশ টিকায়েত দাবি করেন, ওই মহাপঞ্চায়েত বিজেপি সরকারের কফিনের শেষ পেরেক হতে চলেছে। একই সঙ্গে আগামী দিনে বিজেপির বিরুদ্ধে উত্তরপ্রদেশের বিস্তীর্ণ এলাকায় আন্দোলনে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন টিকায়েতরা।

Advertisement

সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টের সমীক্ষা অনুযায়ী, গত চার বছরে দেশে পাঁচ গুণ বেড়েছে কৃষক আন্দোলন। গত বছর সংসদে পাশ হওয়া তিনটি বিতর্কিত কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে কৃষকদের আন্দোলনের ফলে ভোটমুখী উত্তরপ্রদেশে দল যে বেশ বেকায়দায়, তা ঘরোয়া ভাবে মেনে নিয়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব। বিশেষ করে কৃষিবহুল পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে রাকেশ টিকায়েতদের প্রভাব থাকায় ওই এলাকায় বিজেপির বিরুদ্ধে কৃষকদের ক্ষোভ দীর্ঘ সময় ধরে জমা হয়েছে। মহাপঞ্চায়েতের মঞ্চ থেকে সেই ক্ষোভকে আমজনতার মধ্যে সঞ্চারিত করে বিজেপি তথা যোগী আদিত্যনাথের সরকারকে বড় মাপের ধাক্কা দেওয়ার লক্ষ্য নিয়েছেন কৃষক নেতারা।

সদ্যসমাপ্ত বিজেপির কর্মসমিতির বৈঠকে কৃষকদের ক্ষোভের বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। আলোচনায় উঠে এসেছে, তিনটি কৃষি আইন ছাড়াও কৃষি ক্ষেত্রে পরিকাঠামো— পর্যাপ্ত সার-বিদ্যুৎ-সেচ ব্যবস্থার অভাব, ফসলের যথাযথ দাম না পাওয়া, বীজের দাম বৃদ্ধির মতো ঘটনাগুলিতে কৃষকেরা যুগপৎ রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের উপরে ক্ষুব্ধ। এ ছাড়া মধ্যস্বত্বভোগীদের বাড়বাড়ন্ত, হিমঘরের অভাব, ব্যাঙ্কের অভাবে চড়া সুদে মহাজনদের কাছ থেকে টাকা ধার নিতে বাধ্য হওয়ার মতো ঘটনায় সরকারের উপরে ভরসা কার্যত হারিয়ে ফেলেছেন ছোট ও মাঝারি চাষিরা। সরকার কৃষকদের স্বার্থে একাধিক পদক্ষেপ করলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সেই সুবিধা তৃণমূল স্তরে পৌঁছতে ব্যর্থ। বিজেপির মূল্যায়ন, কৃষক সমাজের সেই সার্বিক ক্ষোভকেই সরকারের বিরুদ্ধে কাজে লাগাচ্ছেন কৃষক আন্দোলনের নেতারা। পরিস্থিতিতে অবিলম্বে রাশ টানা না গেলে পঞ্জাবে দলের জেতার যেমন কোনও সুযোগ নেই, তেমনই উত্তরপ্রদেশেও ক্ষমতা হারাতে হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অনেক বিজেপি নেতাই।

Advertisement

এই আবহে বিজেপিকে আরও কোণঠাসা করতে আন্দোলনের গতি তীব্রতর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কৃষক নেতারা। সেই লক্ষ্যেই এক বছর পূর্তির মাথায় লখনউয়ে ওই মহাপঞ্চায়েত ডাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ৪০টি কৃষক সংগঠনের জোট সংযুক্ত কিসান মোর্চা। আজ রাকেশ টিকায়েত বলেন, ‘‘২২ নভেম্বর ঐতিহাসিক কিসান মহাপঞ্চায়েত হতে চলেছে। গোটা দেশের কৃষকেরা ওই আন্দোলনে যোগ দেবেন। ওই পঞ্চায়েত কৃষক-বিরোধী সরকারের কফিনে শেষ পেরেক হতে চলেছে।’’ আগামী দিনে উত্তরপ্রদেশের কৃষিবহুল পূর্বাঞ্চল এলাকায় সরকার-বিরোধী আন্দোলন আরও তীব্র করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন টিকায়েতরা। তাঁর কথায়, ‘‘কৃষি আন্দোলনে ৭৫০ কৃষক মারা গিয়েছেন। কিন্তু সরকার মৃতদের প্রতি কোনও সমবেদনা জানায়নি। দেশের কৃষকদের মনে হতে শুরু করেছে, নরেন্দ্র মোদী আদৌ কৃষকদের প্রধানমন্ত্রী নন। উল্টে তিনি কৃষকদের দেশের বাসিন্দা বলেই মনে করেন না।’’

কৃষি আন্দোলনের রফাসূত্র খুঁজতে ইতিমধ্যেই ১১টি বৈঠক নিস্ফলা হয়েছে। আজ বিজেপির মুখপাত্র সম্বিত পাত্র জানান, কৃষকেরা চাইলে ফের তাঁদের সঙ্গে বৈঠকে বসতে রাজি আছে সরকার। বিজেপি শিবির বুঝতে পারছে, কৃষক বিক্ষোভের দ্রুত কোনও সুরাহা করতে না পারলে উত্তরপ্রদেশের ভোটে, বিশেষ করে জাতপাতের সমীকরণে এর প্রভাব পড়তে পারে। পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে জাঠ অধ্যুষিত খাপ বালিয়ানের অন্যতম নেতা টিকায়েত। তাঁর কথা মেনে গত দুই লোকসভা ও ২০১৭ সালের বিধানসভা নির্বাচনে স্থানীয় জাঠেরা বিজেপিকে ঢেলে ভোট দিয়েছিলেন। কিন্তু আগামী দিনে কৃষক আন্দোলন অব্যাহত থাকলে সেই ভোটব্যাঙ্কও ধরে রাখা নিয়ে ঘোরতর সংশয়ে বিজেপি নেতৃত্ব।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement