অপসারিত উপ-রাজ্যপাল কিরণ বেদীর বিরুদ্ধে তোপ মুখ্যমন্ত্রী বেলু নারায়ণস্বামীর। ছবি: সংগৃহীত।
বিজেপি-র এজেন্ট হিসাবে কাজ করছিলেন অপসারিত উপ-রাজ্যপাল কিরণ বেদী। এমনকি, পুদুচেরির বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পেও বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছিলেন তিনি। প্রাক্তন উপ-রাজ্যপাল সমান্তরাল সরকার চালাচ্ছিলেন বলেও অভিযোগ করে তাঁর অপসারণকে পুদুচেরির মানুষের জয় বলে আখ্যা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী বেলু নারায়ণস্বামী। পাশাপাশি, ৪ কংগ্রেস বিধায়কের ইস্তফার পরেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারাননি বলেও দাবি করেছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের সরকার সংখ্যালঘিষ্ঠ নয়।’’ পুদুচেরির দখল নিতে বিজেপি নেতৃত্ব যে কংগ্রেস বিধায়কদের টাকার টোপ দিচ্ছেন, সে অভিযোগও করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
মঙ্গলবার রাতে পুদুচেরির উপ-রাজ্যপালের পদ থেকে কিরণ বেদীকে অপসারণ করেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। এর পরই সংবাদমাধ্যমের কাছে নারায়ণস্বামীর মন্তব্য, ‘‘গত সাড়ে ৪ বছরেরও বেশি সময় ধরে কিরণ বেদীর অপসারণের দাবি ছিল আমাদের। এ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করছিলাম। বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের কাছেও দরবার করেছিলাম।’’
বেদীর অপসারণের পর মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, ‘‘কিরণ বেদীর অপসারণে পুদুচেরির সাধারণ মানুষের জয়ী হয়েছেন। কারণ, উন্নয়ণমূলক প্রকল্পে বাধা দিচ্ছিলেন তিনি। নির্বাচিত সরকারকে উপেক্ষা করে প্রতি দিনের কাজেও নাক গলাচ্ছিলেন। পুদুচেরিতে সমান্তরাল সরকার চালাচ্ছিলেন তিনি। পাশাপাশি, তিনি সরাসরি আধিকারিকদের কাজের নির্দেশ দিচ্ছিলেন। এ দেশের ইতিহাসে এমনটা কেউ কখনও শোনেননি। উপ-রাজ্যপাল সংবিধান বহির্ভূত ভাবে কাজ করছিলেন।’’ বেদীকে বিজেপি-র এজেন্ট হিসাবে আখ্যা দিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর আরও দাবি, ‘‘পুদুচেরির বিজেপি নেতারা যা করতে বলছিলেন, তা-ই করতেন তিনি।’’
মে মাসে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগেই বেদীর অপসারণ ঘিরে রাজনীতির চাল রয়েছে বলেও দাবি অনেকের। তবে একে নেহাতই কাকতালীয় বলে দাবি করেছে পুদুচেরির কংগ্রেস সরকার। দলের ৪ বিধায়কের ইস্তফার পর ৩০ সদস্যের পুদুচেরি বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারালেও তা মানতে নারাজ মুখ্যমন্ত্রী। উল্টে ওই বিধায়কদের ইস্তফার পিছনে পদ্ম শিবিরের হাত রয়েছে বলেও অভিযোগ তাঁর। ও নমসশিবম, ই থেপ্পাইনজন, মল্লাডি কৃষ্ণ রাও এবং জন কুমারের পর পর ইস্তফার কার্যত বেকায়দায় পড়েছে পুদুচেরির কংগ্রেস সরকার। তবে এ নিয়েও পদ্ম শিবিরের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর দাবি, বিজেপি আরও একটি রাজ্য কব্জা করতে ‘অপারেশন পদ্ম’-এর পরিকল্পনা করেছে। তিনি বলেন, ‘‘বিজেপি এ ভাবেই কাজ করে। তারা সরকার গড়ার জন্য বিরোধী দলের বিধায়কদের শিকার করে। মণিপুর, অরুণাচল প্রদেশ, গুজরাত, কর্নাটক, মধ্যপ্রদেশ... একের পর এক রাজ্যে সেটাই করেছে বিজেপি। বিজেপি যে ভাবে কংগ্রেস সরকারকে যে ভাবে নিশানা করছে, তাতে তাদের লজ্জা হওয়া উচিত।’’
মল্লাডি কৃষ্ণ রাও এবং জন কুমার তাঁর সরকারের সঙ্গে রয়েছেন বলেও দাবি করেন মুখ্যমন্ত্রী। ওই ২ বিধায়কের ইস্তফা স্পিকার এখনও গ্রহণ করেননি বলেও দাবি তাঁর। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘‘বেদীর বহু বার মল্লাডি কৃষ্ণ রাওয়ের কাজে বাধা দিয়েছেন। সে কারণে আমরা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলাম। রাওকে নিশানা করেছিলেন বেদী। রাওয়ের বিধানসভা কেন্দ্রের সমস্ত প্রকল্পও বাতিল করে দিচ্ছিলেন। সে কারণে রাও ইস্তফা দিয়েছেন। এ ভাবে গত ৪ বছর ৯ মাসে আমাদের পক্ষে কাজ করাও কঠিন হয়ে পড়েছে। তা সত্ত্বেও মানুষের সেবায় কাজ করে চলেছি।’’