প্রতীকী ছবি।
প্রয়াত হয়েছেন বাবা-মা, দু’জনেই। তাঁদের বিয়ে হয়েছিল ৫৩ বছর আগে। যে ঘটনার কোনও কাগজপত্রের অস্তিত্ব নেই। কিন্তু বিশেয কারণে এ বার প্রয়াত বাবা-মায়ের সেই বিয়ের শংসাপত্র হাতে পেতে চলেছেন ছেলে। কেরলের সরকার বিবাহ আইনের বিধিতে যে সংশোধন আনতে চলেছে, তা কার্যকর হলে পালাক্কাডের ওই প্রয়াত দম্পতিই হতে চলেছেন দেশের মধ্যে প্রথম দৃষ্টান্ত। কারণ, আইনের পূর্ববর্তী প্রভাব ( রেট্রোস্পেকটিভ) কাজে লাগিয়ে প্রয়াত দম্পতির বিবাহ নথিভুক্তির নজির মনে করতে পারছেন না কেউ।
ঘটনা কেরলের পালাক্কাড জেলার। সেনা বাহিনীতে কর্মরত সি ভাস্করন নায়ার এবং টি কমলমের বিয়ে হয়েছিল ১৯৬৯ সালে, স্থানীয় একটি মন্দিরে। যেমনটা সে কালে আকছারই হত। সেনা বাহিনী থেকে অবসর নেওয়ার পরে ভাস্করন পেনশন পেতেন। তাঁর স্ত্রী কমলম মারা যান ২০০৮ সালে। আর ভাস্করনের মৃত্যু হয় ২০১৮ সালে। তার পর থেকেই সমস্যার শুরু। পারিবারিক পেনশনের জন্য আবেদন করেন তাঁদের ছেলে গোপাকুমার। কিন্তু সেনা কর্তৃপক্ষ জানান, ভাস্করনের বিয়ে বা তাঁর পরিবার সংক্রান্ত কোনও তথ্যই রেকর্ডে নেই। গোপাকুমার আর্থিক ভাবে বিপন্ন, তাঁর মানসিক কিছু সমস্যাও আছে। এমতাবস্থায় প্রয়াত বাবার ওই পারিবারিক পেনশন তাঁর জন্য খুব জরুরি, এই মর্মে তিনি সরকারের কাছে আবেদন করেছিলেন। তার জেরেই শুরু হয়েছিল নতুন উদ্যোগ।
সরকারি সূত্রের খবর, কেরল সরকারের স্থানীয় প্রশাসন দফতর সেনা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পারে, ভাস্করনের বিয়ের শংসাপত্র তাদের দরকার ওই পেনশন চালু করার জন্য। সেনার বক্তব্য জেনে স্থানীয় প্রশাসন দফতর মতামত নেয় রাজ্যের আইন দফতরের। দেখা যায়, এখন যে বিবাহ আইন চালু আছে, সেখানে স্বামী বা স্ত্রীর মধ্যে কোনও এক জনের মৃত্যু হলে অন্য জন পুরনো বিয়ে নথিভুক্ত করিয়ে শংসাপত্র পেতে পারেন। এমন সংস্থান আইনে আছে। কিন্তু দম্পতির মধ্যে কেউই জীবিত না থাকলে তাঁদের বিয়ে নথিভুক্ত করা যাবে কি না, সেই বিষয়ে আইনে কিছু বলা নেই। এই ‘ধোঁয়াশা’র জায়গাতেই বিধি সংশোধন করে গোপাকুমারকে তাঁর প্রয়াত বাবা-মায়ের বিয়ের শংসাপত্র তুলে দিতে চাইছে সরকার।
কেরলের স্থানীয় প্রশাসন দফতরের মন্ত্রী এবং সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এম ভি গোবিন্দন মাস্টারের কথায়, ‘‘মানবিকতার কারণে আমরা এই সুযোগ দেওয়ার ব্যবস্থা করছি। একেবারে বিপন্ন অবস্থায় পড়লে কেউ যাতে এই বিশেষ আইনি সংস্থানের সহায়তা পেতে পারেন। আইন দফতরের মতামত নিয়েই কাজ করা হচ্ছে।’’ তাঁর বক্তব্য, কোভিড যখন খুব সক্রিয় ছিল, সেই সময়ে রেজিস্ট্রারের কাছে সশরীর হাজিরা না দিয়েও বিবাহ নথিভুক্তি ও শংসাপত্র নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। সেই ব্যবস্থা ছিল সাময়িক। এ বার বিধি সংশোধন করে ওই সংস্থানই পাকাপাকি ভাবে রাখা হচ্ছে। তবে গোপাকুমারের মতো কেউ যদি তাঁদের প্রয়াত বাবা-মা বা অন্য কারও বিয়ের শংসাপত্র নিতে চান, তা হলে তাঁদের পরিবার সম্পর্কে স্থানীয় প্রশাসনের কাছ থেকে লিখিয়ে আনতে হবে।
তবে মন্ত্রী গোবিন্দন মনে করিয়ে দিচ্ছেন, পালাক্কাডের ওই ব্যক্তির ক্ষেত্রে যেমন হয়েছে, সে ভাবে নির্দিষ্ট আবেদন খতিয়ে দেখে তবেই এমন পুরনো বিয়ের শংসাপত্র দেওয়ার ব্যবস্থা হবে।