কেরল বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন। ছবি সৌজন্য টুইটার।
প্রায় চার ঘণ্টা ধরে নানা টানাপড়েন এবং বিরোধীদের তুমুল হই-হট্টগোলের মধ্যেই ৮৭ ভোটে জয় এল পিনারাই বিজয়নের সরকারের।
দুর্নীতির অভিযোগ তুলে কেরল সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এনেছিল কংগ্রেস পরিচালিত ইউনাইটেড ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট (ইউডিএফ)-সহ বিরোধী দলগুলো। তাদের পক্ষে ভোট পড়ে ৪০টি। সোমবার ছিল সরকারের শক্তি প্রদর্শনের দিন। বিরোধী দলকে হেলায় হারিয়ে তাদের বিরুদ্ধে পাল্টা তোপ দাগেন মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন। তুলোধোনা করেন কংগ্রেস ও তার শরিক দল মুসলিম লিগকে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “বিজেপির বি টিম হিসেবে কাজ করছে কংগ্রেস। ক্ষমতার লালসায় বাম সরকারের বিরুদ্ধে ভুয়ো রটনা করছে তারা।”
সোমবার অধিবেশন শুরু হতেই সরকারকে নানা প্রশ্নবাণে বিদ্ধ করতে শুরু করেন বিরোধীরা। সরকার দুর্নীতিগ্রস্ত, দুর্নীতির আখড়া হয়ে উঠেছে এই সরকার— এমন নানা কটাক্ষ উড়ে আসে মুখ্যমন্ত্রীর দিকে। তার মধ্যেই বিরোধীরা হট্টগোল শুরু করে দেন। আসন ছেড়ে দাঁড়িয়ে সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকেন। মুখ্যমন্ত্রীর জবাব দাবি করতে থাকেন তাঁরা।
তিন ঘণ্টা ৪০ মিনিট ধরে বিজয়ন তাঁর সরকারের নানা কৃতিত্ব একে একে তুলে ধরেন বিরোধীদের কাছে। কিন্তু বিরোধীরা দাবি তোলেন, সোনা কেলেঙ্কারি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে জবাব দিতে হবে। বিজয়ন তখন বলেন, “আমি উত্তর দিচ্ছি। কিন্তু আপনারা শুনতে চাইছেন না কেন?” এর পরই তিনি বিরোধীদের পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে বলেন, “এখনও পর্যন্ত কোনও তদন্তকারী সংস্থা মুখ্যমন্ত্রী বা তাঁর দফতরের নাম উল্লেখ করেছে? সরকারের কেউ কি গ্রেফতার হয়েছে?” তবে সোনা পাচার কাণ্ডে তাঁর সরকার কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে সব রকম সহযোগিতা করছেন বলেও জানিয়েছেন বিজয়ন।
আরও পড়ুন: ছ’মাসের মধ্যে নয়া কংগ্রেস সভাপতি নির্বাচন, আপাতত দায়িত্বে রইলেন সনিয়াই
কিছু সংবাদমাধ্যম ভুয়ো খবর ছড়াচ্ছে বলেও ওই দিন বিধানসভায় দাবি করেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর সরকার এই পাচার কাণ্ডে কাউকে আড়াল করতে চাইছে না বলেও দাবি তাঁর।
ইউডিএফ বিধায়ক ভি ডি সতীশনই কেরল সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এনেছিলেন। অধিবেশন চলাকালীন সতীশন উইলিয়াম শেক্সপীয়রের জুলিয়াস সিজারের উপমা টেনে মুখ্যমন্ত্রীকে ব্রুটাসের সঙ্গে তুলনা করেন। সতীশন বলেন, “ব্রুটাস যে কিনা জুলিয়াস সিজারকে হত্যা করেছিল, তাকেও ‘সম্মাননীয় ব্যক্তি’ বলা হয়।” এর পরই কটাক্ষ মিশ্রিত সুরে তাঁর মন্তব্য, “আমাদের মুখ্যমন্ত্রীও এক জন সম্মাননীয় ব্যক্তি। জাহাজের ক্যাপ্টেন। কিন্তু তিনি জাহাজকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছেন না। কারণ তাঁর মন্ত্রিসভাতেও তো গলদ রয়েছে। আগেই মুখ্যমন্ত্রীকে সতর্ক করেছিলাম। কিন্তু কখনওই টের পাইনি যে মুখ্যমন্ত্রীর দফতরই পাচারের সদর দফতর হয়ে উঠেছে।”
গত মাসে কেরলে বড় ধরনের সোনা পাচারকারী চক্রের হদিশ মেলে। কূটনৈতিক যোগাযোগকে কাজে লাগিয়ে আরব থেকে ৩০ কেজি সোনা আমদানির করার অভিযোগে স্বপ্না সুরেশ নামের এক মহিলাকে গ্রেফতার করে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)। স্বপ্না সুরেশের সঙ্গে সংযোগ থাকার অভিযোগে সিনিয়র আইএএস অফিসার তথা প্রাক্তন তথ্যপ্রযুক্তি সচিব এম শিবশঙ্করের জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে।