জলের তোড়ে ভেসে যাচ্ছে হরিণের পাল। ছবি: টুইটারের সৌজন্যে
কেরলের ভয়াবহ বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ইদুক্কি জেলা। ২৬ বছর পর খুলে দিতে হয়েছে ইদুক্কি জলাধারের গেট। আর এই জেলাতেই রয়েছে পেরিয়ার ন্যাশনাল পার্ক। বন্যায় তাই লাখো মানুষের সঙ্গে বিপর্যস্ত বন্যপ্রাণও। আশ্রয়ের খোঁজে উঁচু জায়গায় আশ্রয়ের খোঁজে হন্যে হয়ে ঘুরছে হাতি, বাঘ, হরিণের মতো অজস্র প্রাণী।
কেমন সে ছবি? সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে একটি ভিডিয়ো সামনে এসেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে প্রবল জলস্রোতে ভেসে যাচ্ছে একটি হরিণের পাল। যে যা পারছে, প্রাণপণে আঁকড়ে ধরে বাঁচার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু এই ছবির বাইরেও তিনশো বর্গকিলোমিটারের বিশাল এলাকার অভয়ারণ্যে বন্যপ্রাণীদের অবস্থা আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে বলেই আশঙ্কা।
মূলত হাতি ও বাঘ সংরক্ষণ কেন্দ্র হিসাবে পরিচিতি হলেও পেরিয়ার জাতীয় উদ্যানে রয়েছে বহু প্রজাতির বন্যপ্রাণী। তার মধ্যে অন্যতম নানা প্রজাতির হরিণ। এ ছাড়াও অগুনতি বিরল প্রজাতির প্রাণী ও উদ্ভিদের জীববৈচিত্রে সমৃদ্ধ এই অরণ্য। ভয়াবহ বন্যায় সবই বিপন্ন। তবে ক্ষয়ক্ষতি বা বন্যপ্রাণের মৃত্যুর খতিয়ান এখনও করে ওঠা সম্ভব হয়নি।
আরও পড়ুন: টানা বর্ষণে বানভাসি কেরল, মৃত বেড়ে ২৬
গত বছর যেমন অসমের ভয়াবহ বন্যার সময় কাজিরাঙা অভয়ারণ্যে বন্যপ্রাণীদের মৃত্যুর হিসেব পাওয়া যায়নি। কিন্তু জল সরতেই বনকর্তাদের মাথায় হাত পড়েছিল। জানা যায়, বাঘ, গণ্ডার, হরিণ, ময়ূর-সহ সাড়ে তিনশোরও বেশি বন্যপ্রাণীর মৃত্যু হয়েছিল কাজিরাঙায়। পেরিয়ারের ক্ষেত্রেও সেরকম আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না বিশেষজ্ঞরা।
২০১৭ সালের বন্যায় কাজিরাঙা অভয়ারণ্যে জলবন্দি বন্যপ্রাণীরা। —ফাইল ছবি
আরও পড়ুন: কাঁওয়ার যাত্রার জন্য পুলিশের ‘লাল কার্ড’, উত্তরপ্রদেশে গ্রাম ছাড়ল ৭০ মুসলিম পরিবার
পেরিয়ার অভয়ারণ্যেই রয়েছে এলাচ পাহাড়। এর সঙ্গে পন্দলম পাহাড় মিলে পশ্চিমঘাট পর্বতমালার কোলে গড়ে উঠেছে পেরিয়ার। ভয়াবহ বন্যায় সেই মশলা চাষেরও ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষি বিশেষজ্ঞরা। এছাড়া নানা রকমের ওষধি ও ভেষজ উদ্ভিদেরও ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।
পাহাড়ঘেরা পেরিয়ারের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অপরূপ। মোট এলাকা ৯২৫ বর্গকিলোমিটার। তার মধ্যে ৩০৫ বর্গকিলোমিটার কোর এলাকা। ১৯৮২ সালে জাতীয় উদ্যান হিসাবে স্বীকৃতি পায় পেরিয়ার। ইদুক্কি, কোট্টায়াম ও পথনমথিত্তা-এই তিন জেলার বিস্তীর্ণ অংশ জুড়ে গড়ে উঠেছে এই সংরক্ষিত বনাঞ্চল। প্রতি বছর বহু পর্যটক বেড়াতে আসেন। আপাতত বন্যার কারণে পর্যটকদের জন্য পেরিয়ার দরজা পুরোপুরি বন্ধ।
(দেশজোড়া ঘটনার বাছাই করা সেরা বাংলা খবর পেতে পড়ুন আমাদের দেশ বিভাগ।)