বিলাসবহুল মিনি কুপার গাড়ি (ডান দিকে) কিনে দলীয় সমস্ত পদ হারালেন পিকে অনিল কুমার (বাঁ দিকে)। ছবি: সংগৃহীত।
বিলাসবহুল গাড়ি কিনেছেন। তিনি আবার বামপন্থী শ্রমিক নেতাও বটে! কিন্তু এই দুই কী করে একসঙ্গে যায়? যায়নি। কেরল সিপিএমের শ্রমিক সংগঠনের নেতা পিকে অনিল কুমারকে দলীয় সমস্ত পদ থেকে সরিয়ে দিল সিপিএম। অনিল ছিলেন সিটু অনুমোদিত কেরল পেট্রোলিয়াম অ্যান্ড গ্যাস ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক। কিন্তু বিলাসবহুল গাড়ি চড়ে শ্রমিক নেতা ঘুরে বেড়াবেন, তা মানতে পারেনি পিনারাই বিজয়নের দল। তারই পরিণতি, দলের সমস্ত পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার ঘটনা।
সম্প্রতি ৫০ লক্ষ টাকা দিয়ে বিলাসবহুল গাড়ি ‘মিনি কুপার’ কিনে বিতর্কের কেন্দ্রে চলে এসেছেন সিপিএম নেতা পিকে অনিল কুমার। কেনার পর থেকেই শিরোনামে কচি কলাপাতা রঙের মিনি কুপার। এ নিয়ে বিতর্ক মাথাচাড়া দিতেই নড়েচড়ে বসেন সিপিএম নেতৃত্ব। সিপিএমের এর্নাকুলাম জেলা কমিটি এবং জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে অনিলকে নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়। সূত্রের খবর, কেরল সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক এমভি গোবিন্দন বৈঠকে জানান, অনিল এখনও দলের সদস্য হিসাবে থেকে গেলে তা হবে পার্টির নীতির ঘোর বিরোধিতা। সম্পাদকমণ্ডলীর কয়েক জন নেতাও দাবি করেন, পার্টি সদস্যের মিনি কুপার কিনে বৈভবের লজ্জাজনক প্রদর্শন ভুল বার্তা দিচ্ছে এবং এমনটা কোনও ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। তার পরেই অনিলকে পার্টির সমস্ত পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
অবশ্য অনিলের নিজের দাবি, তাঁর স্ত্রী ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশনে চাকরি করেন। তিনিই এই গাড়িটি কিনেছেন। যদিও সে যুক্তিতে পদ খোয়ানো আটকানো যায়নি তাঁর।
প্রসঙ্গত, কমিউনিস্ট নেতাদের একটা অংশের বাহুল্যবর্জিত জীবনযাপনকে উদাহরণ হিসাবে তুলে ধরা হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক অতীতে একাধিক এমন ঘটনা ঘটেছে যেখানে বাম নেতাদের ঝাঁ চকচকে জীবনযাত্রা নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন উঠেছে। ২০১৭ সালে এই কেরলেরই সিপিএম নেতা কোডিয়ারি বালাকৃষ্ণণকে (অধুনা প্রয়াত) দেখা গিয়েছিল টকটকে লাল মিনি কুপারে চড়ে প্রচার করতে। জানা গিয়েছিল, ওই মিনি কুপারটি নাকি সোনা পাচার মামলায় এক অভিযুক্তের। আবার বঙ্গ সিপিএমের যুবনেতা শতরূপ ঘোষের বিলাসবহুল গাড়ি কেনা নিয়েও বিতর্কের ঝড় উঠেছিল। সেই সময় অবশ্য বঙ্গ সিপিএম শতরূপকে পদ থেকে সরায়নি। শতরূপ নিজের গাড়ি কেনার পক্ষে যুক্তি সাজিয়েছিলেন সিপিএমের রাজ্য দফতর আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে বসে। তৃণমূলের অভিযোগ, বিলাসবহুল গাড়ি কেনার প্রয়োজনীয়তা কী ছিল তা না জানিয়ে শতরূপ তৃণমূলের নেতাদের ব্যক্তিগত আক্রমণ করেছিলেন। যা নিয়ে শতরূপ, সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম এবং বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুর বিরুদ্ধে মানহানির মামলা পর্যন্ত করেছেন তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। এ বার জীবনযাত্রায় বৈভবের প্রশ্নে পদ খোয়ালেন সেই সিপিএমেরই নেতা। তবে, বাংলায় নয়, কেরলে।