কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।—ফাইল চিত্র।
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) ঘিরে তীব্র সংঘাতের মাঝেই এ বার দুই ছাত্রের বিরুদ্ধে এনআইএ তদন্ত নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে সংঘাতের রাস্তায় গেল কেরলের বাম সরকার। সিএএ বাতিল করার দাবিতে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে তারা। আর মাওবাদীদের সঙ্গে যোগসাজশের অভিযোগে কোঝিকোড়ের কলেজ থেকে ধৃত দুই ছাত্রের বিরুদ্ধে তদন্তের ভার রাজ্যের হাতে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের কাছে দাবি জানালেন কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন।
ধৃত দুই ছাত্র আলান সুহেইব ও তহা ফজলের নামে বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইন (ইউএপিএ) প্রয়োগ করে ইতিমধ্যেই প্রভূত বিতর্কে জড়িয়েছিল বিজয়নের সরকার। ওই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা এসেছিল সিপিএমের পলিটব্যুরো থেকেও। সেই বিতর্কের মধ্যেই ঘটনার তদন্তভার নিজেদের হাতে তুলে নিয়েছিল কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এনআইএ। সংসদে এনআইএ আইনের যে সংশোধনী পাশ হয়েছে, তার দৌলতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক চাইলে রাজ্য সরকারের সঙ্গে পরামর্শ না করেই কোনও ঘটনার তদন্তের ভার তাদের তদন্ত সংস্থাকে দিতে পারে। কিন্তু রাজ্য সরকার ইউএপিএ প্রয়োগ করতে গিয়েছে বলেই শাহ ‘নাক গলানো’র সুযোগ পেয়েছেন, এই যুক্তিতে সরব হয়েছিল বিরোধীরা। শেষমেশ বিরোধীদের দাবি মেনে নিয়েই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে তদন্তের দায়িত্ব ফেরত চেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
সংশোধিত এনআইএ আইনের ৭ (বি) ধারা অনুযায়ী, কোনও রাজ্য সরকার চাইলে কোনও ঘটনার তদন্তের দায়িত্ব রাজ্যের হাতে তুলে দেওয়ার আবেদন করতে পারে। কেরলের মুসলিম লিগ নেতা এম কে মুনির সরকারকে এই পরামর্শই দিয়েছিলেন। একই দাবিতে কেরলের বিধানসভায় মুলতুবি প্রস্তাব এনেছিল বিরোধী ফ্রন্ট ইউডিএফ। প্রথমে কেন্দ্রের কাছে দাবি জানাতে না চাইলেও পরে সেই পথেই হাঁটার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী বিজয়ন। কেরলের পরিষদীয় মন্ত্রী এ কে বালনের মতে, ‘‘ধৃত দুই ছাত্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ এবং ইউএপিএ প্রয়োগ যথার্থ কি না, তা খতিয়ে দেখার ভার ছিল পুলিশের। কিন্তু তদন্ত শেষ হওয়ার আগেই এনআইএ সক্রিয় হয়ে মামলা হাতে নিয়েছিল। রাজ্য সরকার চায়, তদন্ত সম্পূর্ণ করার দায়িত্ব রাজ্য পুলিশকেই দেওয়া হোক।’’
মুসলিম লিগের মুনিরের মতে, ‘‘কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এবং এনআইএ-কে সুযোগ করে দিয়েছে রাজ্যেরই সরকার। সাত তাড়াতাড়ি ইউএপিএ দেওয়ার দরকার কি ছিল!’’ বিরোধী দলনেতা, কংগ্রেসের রমেশ চেন্নিথালা অবশ্য বলছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী যে তাঁর অহমিকা ছেড়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে দাবি জানাচ্ছেন, এটা ভাল লক্ষণ! এটা তো মুখ্যমন্ত্রীর সাংবিধানিক দায়িত্ব। আরও আগেই মুখ্যমন্ত্রী সক্রিয় হতে পারতেন।’’