গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের সাংবিধানিক বৈধতাকে সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ জানাল কেরলের বাম সরকার।
সিএএ-র বিরুদ্ধে শীর্ষ আদালতে ইতিমধ্যেই প্রায় পাঁচ ডজন মামলা জমা পড়েছে। বেশ কিছু হাইকোর্টেও মামলা হয়েছে। কিন্তু এই প্রথম কোনও রাজ্য সরকার এই আইনের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে গেল।
কেরলের বাম সরকারের এই পদক্ষেপ কংগ্রেস ও তৃণমূলের মতো দলগুলিকে চাপে ফেলে দিয়েছে। কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে তাদের মুখ্যমন্ত্রীরা সিএএ-র বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারও রাজ্যে সিএএ হতে দেবে না বলে জানিয়েছে। কিন্তু সংবিধান অনুযায়ী প্রতিটি রাজ্যই কেন্দ্রীয় আইন মানতে বাধ্য। এই পরিস্থিতিতে বাকি রাজ্যগুলিও সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হবে কি না, সেই প্রশ্ন উঠছে। কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন আজ বলেন, ‘‘সংবিধানের মর্যাদা রক্ষায় বাকি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদেরও একই রকম পদক্ষেপ করতে অনুরোধ করছি।’’ এর আগে এ বিষয়ে অন্য মুখ্যমন্ত্রীদের চিঠিও লিখেছেন তিনি।
সুপ্রিম কোর্টে দায়ের করা মামলায় কেরল সরকারের মূল বক্তব্য, সিএএ সংবিধানের মৌলিক অধিকারের বিরোধী, অযৌক্তিক এবং অসঙ্গত। কিন্তু তা সত্ত্বেও সংবিধানের ২৫৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাজ্য সরকার কেন্দ্রের এই আইন মানতে বাধ্য। তাই সিএএ-কে ‘অসাংবিধানিক’ বলে খারিজ করা হোক। কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে বিবাদ হলে সংবিধানের ১৩১ অনুচ্ছেদে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সুপ্রিম কোর্ট তাতে হস্তক্ষেপ করতে পারে।
বাজারে আগুন নিয়ে চুপ মোদী, সর্বদল বৈঠকের দাবিতে মুখর কংগ্রেস
কেরল সরকারের অভিযোগ, সিএএ সংবিধানের চতুর্দশ অনুচ্ছেদে প্রদত্ত সমানাধিকার, ২১তম অনুচ্ছেদে প্রদত্ত জীবন ও ব্যক্তি স্বাধীনতার অধিকার এবং ২৫তম অনুচ্ছেদে প্রদত্ত ধর্মাচরণের অধিকারের পরিপন্থী। এই আইন সংবিধানের মূল ভাবনা ধর্মনিরপেক্ষতারও বিরোধী। সংবিধান বিশেষজ্ঞ আইনজীবী বিশ্বজিৎ দেবের মতে, ‘‘কেরলের যুক্তি যথেষ্ট পোক্ত। সংবিধানের একাদশ অনুচ্ছেদের ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে কেন্দ্র নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করেছে। কিন্তু এই অনুচ্ছেদ কেন্দ্রকে লাগামছাড়া ক্ষমতা দেয় না। এই আইন সংবিধানের চতুর্দশ ও পঞ্চদশ অনুচ্ছেদের বিরোধী।’’
কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, সুপ্রিম কোর্ট যদি সিএএ-র বিরুদ্ধে মামলা খারিজ করে দেয়, তা হলে দেশ জুড়ে সিএএ-বিরোধী আন্দোলনই হোঁচট খাবে না তো? বিজেপি হাতে অস্ত্র পেয়ে যাবে না কি? রাফাল-চুক্তিতে দুর্নীতির অভিযোগে রাহুল গাঁধী যখন নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে আক্রমণ শানাচ্ছিলেন, তখন সুপ্রিম কোর্টের উল্টো রায়ে বিজেপির সুবিধা হয়ে গিয়েছিল।
সিপিএম নেতাদের যুক্তি, সেই ঝুঁকির কথা ভেবে এখন লাভ নেই। কারণ, সুপ্রিম কোর্টে ইতিমধ্যেই ৫৯টি মামলা হয়েছে। ১৮ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্রের বক্তব্য জানতে চেয়ে নোটিসও জারি করেছে। ২২ জানুয়ারি শুনানি হতে পারে। সেই সব মামলারও অভিযোগ, সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনে ধর্মের ভিত্তিতে ভেদাভেদ করা হচ্ছে। তা সংবিধান-বিরোধী। কিন্তু কোনও রাজ্য সেই অভিযোগ তুললে তা অন্য মাত্রা পেয়ে যায়। বিজেপি মুখপাত্র জি ভি এল নরসিংহ রাও আজ বলেন, ‘‘কেরল সরকার বুঝতে পেরেছে বিধানসভায় প্রস্তাব পাশ করা ভুল হয়েছে। তাতে কোনও লাভ হবে না। সুপ্রিম কোর্টে মামলা করে তারা অবশেষে পরিণতিবোধ দেখিয়েছে।’’