—ফাইল চিত্র।
নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে বরাবরই স্থান হয়েছে তাঁদের। ইতিমধ্যে বদলেছে জম্মু-কাশ্মীরের প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক মানচিত্রও। কিন্তু ৭০ হাজার কাশ্মীরি পণ্ডিত পরিবারকে উপত্যকায় ফেরানোর বিষয়ে নরেন্দ্র মোদী সরকারের তরফে কোনও উদ্যোগই চোখে পড়ছে না। ফলে বর্তমান সরকারের উপরেও আর কোনও ভরসা নেই পণ্ডিতদের। উপত্যকায় ফেরেনি চলে যাওয়া কোনও পণ্ডিত পরিবারই।
কাশ্মীরি পণ্ডিত সম্প্রদায়ের বড় অংশের উপত্যকা ছেড়ে চলে যাওয়ার ৩২তম বর্ষপূর্তি হয়েছে গত ১৯ জানুয়ারি। ১৯৮৯ সালের শেষ দিকে কাশ্মীরে জঙ্গি কার্যকলাপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই পণ্ডিতদের সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। বিজেপি নেতা জিয়ালাল টাপলু ও অবসরপ্রাপ্ত বিচারক নীলকান্ত গঞ্জু জঙ্গি হামলায় নিহত হওয়ার পরে পণ্ডিতদের আশঙ্কা আরও বাড়ে। জঙ্গি সংগঠন জেকেএলএফ দাবি করে, ওই দুই ব্যক্তির সঙ্গে ভারতীয় রাষ্ট্রের যোগসূত্রের ফলেই তাঁদের খুন করা হয়েছে। কিন্তু পণ্ডিতেরা তা বিশ্বাস করেননি। শেষ পর্যন্ত তাঁদের বড় অংশই উপত্যকা ছেড়ে চলে যান।
কাশ্মীরি মুসলিমদের একাংশের অবশ্য দাবি, তৎকালীন রাজ্যপাল জগমোহনই উপত্যকা থেকে পণ্ডিত সম্প্রদায়কে সরাতে বেশি উদ্যোগী হয়েছিলেন। তিনিই পণ্ডিতদের জন্য বাসের ব্যবস্থা করেছিলেন। তার পরে বাহিনীর অভিযানে কেবল জঙ্গি নয়, উপত্যকার সাধারণ মুসলিম বাসিন্দাদের জীবনও বিপর্যস্ত হয়েছিল।
বস্তুত উপত্যকায় এখনও প্রায় ৬৫০টি কাশ্মীরি পণ্ডিত পরিবারের বাস। সরকারি নথিই বলছে, ১৯৯৭ সালে সংগ্রামপোরা, ১৯৯৮ সালে ওয়ানধামা, ২০০৩ সালে নান্দিমার্গের হত্যাকাণ্ডের মতো কিছু ঘটনা ছাড়া পণ্ডিতেরা জঙ্গি হামলার শিকার হননি।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, অশান্তির জন্য কাশ্মীর ছেড়ে চলে যাওয়া ৩৮,১১৯টি পরিবারের মধ্যে ছিল পণ্ডিত সম্প্রদায়ের ২৪,২০২টি পরিবার। ১৯৮৯ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত জঙ্গিদের হাতে নিহত হয়েছেন পণ্ডিত সম্প্রদায়ের ২১৯ জন।
২০১৪ ও ২০১৯ সালের নির্বাচনী ইস্তাহারে পণ্ডিতদের উপত্যকায় পুনর্বাসনকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছিল বিজেপি। কিন্তু জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা লোপের পরেও সেই বিষয়ে বিশেষ উদ্যোগী হতে দেখা যায়নি তাদের। পণ্ডিতদের সংগঠনের নেতা সতীশ মহালদারের মতে, ‘‘এখন কাশ্মীরে নানা বিষয়ে পরিবর্তনে উদ্যোগী হচ্ছে সরকার। কিন্তু পণ্ডিতদের পুনর্বাসন নিয়ে টুঁ শব্দও শোনা যাচ্ছে না। অন্য সরকারের মতো বিজেপিও এই বিষয়ে ব্যর্থ।’’ সরকারি স্কুলের শিক্ষক নীরজ কউলের মতে, ‘‘অনেক পণ্ডিত ফিরতে চাইলেও পারবেন না। কারণ গত তিন দশকে তাঁরা উপত্যকার বাইরে নানা ক্ষেত্রে পেশাগত ভাবে যুক্ত হয়ে পড়েছেন। তবে বিজেপি যে পণ্ডিতদের রাজনৈতিক ভাবে ব্যবহার করেছে তাতে সন্দেহ নেই। বিশেষ মর্যাদা লোপে আমাদের কোনও লাভ হয়নি।’’ সতীশ মহালদারের মতে, বরং মনমোহন সিংহ জমানায় দেওয়া কিছু প্রতিশ্রুতি কার্যকর হয়েছে।
বিজেপি মুখপাত্র আলতাফ ঠাকুরের অবশ্য দাবি, ‘নয়া কাশ্মীর’ প্রকল্পে পণ্ডিতদের জন্য ১০টি টাউনশিপ তৈরি করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া প্যাকেজে পণ্ডিতদের জন্য চাকরির ব্যবস্থাও করা হয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘ওঁদের কাশ্মীরে ফেরানোর সব রকম চেষ্টা করা হবে। বিজেপি পণ্ডিতদের যন্ত্রণা বোঝে।’’