ইয়াকুবের ফাঁসির বিরোধীতায় নয়াদিল্লির পথে। ছবি: এএফপি।
ফাঁসি না রেহাই?
উত্তর জানতে শীর্ষ আদালতের দিকে তাকিয়ে গোটা দেশ। কেন না, ইয়াকুব মেমনের ফাঁসি বৃহস্পতিবার হবে কি না তা নির্ভর করছে সুপ্রিম কোর্টের উপর।
ইতিমধ্যেই দেশের নানা প্রান্ত থেকে প্রতিবাদের ঝড় উঠলেও, আশ্চর্য ভাবে নিশ্চুপ কাশ্মীর উপত্যকা। ইয়াকুবের ফাঁসি নিয়ে অদ্ভুত ভাবে চুপচাপ চরমপন্থী হুরিয়ত থেকে শাসক দল পিডিপি— সব পক্ষই। অথচ মকবুল বাট থেকে আফজল গুরু এমনকী মুম্বই হামলাকারী আজমল কাসভের ফাঁসির প্রশ্নে সরব হতে দেখা গিয়েছে উপত্যকাকে। কিন্তু, এ বার কেন নিশ্চুপ কাশ্মীর?
কারণ বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, প্রথমত জম্মু-কাশ্মীর লিবারেশন ফ্রন্টের নেতা মকবুল বাট বা সংসদ হামলার দায়ে দোষী আফজল গুরু— দু’জনই ভূমিপুত্র। ফলে স্থানীয় আবেগ অনেক বেশি জড়িয়ে ছিল এই দু’জনের সঙ্গে।
দ্বিতীয়ত, ওই দু’জনের সঙ্গে কাশ্মীরের জাতীয়তাবাদের বিষয়টি সম্পর্কযুক্ত ছিল। সেখানে ইয়াকুবের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাউদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে অপরাধমূলক কাজে যুক্ত ছিল সে। সমাজবাদী পার্টির আবু হোসেন বা আসাউদ্দিন ওয়াসির মতো নেতারা মুসলিম তোষণের প্রশ্নে ইয়াকুবের ফাঁসির বিরুদ্ধে সরব হলেও, কাশ্মীরিয়তের বিষয়টি না থাকায় ইয়াকুব প্রশ্নে সে ভাবে মুখ খুলছেন না কাশ্মীরের কোনও নেতাই।
তৃতীয়ত, অভিযোগ এও রয়েছে, জাতীয় আবেগের কথা মাথায় রেখে মকবুল বাটের বিরুদ্ধে ফাঁসির আদেশ দেয় আদালত। যা মোটেই ভাল ভাবে নেয়নি কাশ্মীরের জনগণ। আফজল গুরুর প্রশ্নে কাশ্মীরের একটা বড় অংশের মানুষ মনে করে, তিনি নিরপরাধ ছিলেন— চক্রান্তের শিকার হন আফজল। আর, ইউপিএ সরকার শেষ বেলায় লোকসভা নির্বাচনে রাজনৈতিক সুবিধা পেতেই তাঁকে ফাঁসিতে ঝোলায়। ফলে, সেই ফাঁসির বিরুদ্ধে এক সময় জনমত প্রবল হয়েছিল। এমনকী, দিল্লিতে ইউপিএ সরকার ওই সিদ্ধান্ত নিলেও কাশ্মীরের ভোট-ব্যাঙ্কের কথা মাথায় রেখে ওই ফাঁসির বিরোধিতায় মুখ খুলতে বাধ্য হন কংগ্রেস নেতা গুলাম নবি আজাদ।
কিন্তু, এ বার ইয়াকুবের ফাঁসি নিয়ে অদ্ভুত ভাবে নীরব কাশ্মীরের সব রাজনৈতিক দল। হুরিয়ত থেকে জেকেএলএফ, এনসি থেকে পিডিপি— এখনও পর্যন্ত ফাঁসির বিরোধিতা করে সুর চড়াতে দেখা যায়নি কোনও পক্ষকেই! তবে, তা বলে বৃহস্পতিবার যদি ইয়াকুবের ফাঁসি হয় সে ক্ষেত্রে বিক্ষোভ একেবারে হবে না— এমনটাও মনে করছেন না গোয়েন্দারা। তবে, আফজল বা মকবুল বাটের ক্ষেত্রে তা যে ব্যাপক আকার নিয়েছিল, সেই মাত্রা পাবে বলে মনে করছে না নয়াদিল্লি।
তবে, চোরা আশঙ্কা রয়েছেই। যে ভাবে ইয়াকুবকে ফাঁসিতে ঝোলাতে সরকার বদ্ধপরিকর, তার মধ্যে অশনি সঙ্কেত দেখছেন কাশ্মীরের নেতারা। কাশ্মীরের বহু যুবক সন্ত্রাসে অভিযুক্ত হয়ে জেলে বন্দি আছে। অনেকের বিরুদ্ধে ফাঁসির সাজাও শোনানো হয়েছে। সেই পরিস্থিতিতে আগামী দিনে ওই যুবকদের ভবিষ্যৎ কী হবে, সেই আশঙ্কা তৈরি হয়েছে পুরো মাত্রায়!