গত মরশুমেও ভারী তুষারপাত হয়েছে কাশ্মীরে। এ বার সেই ছবি উধাও (ডান দিকে)। ছবি: সংগৃহীত।
কাশ্মীর, ভূস্বর্গ এবং বরফ— এই তিনটি শব্দ পর্যটকদের সঙ্গে যেন ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। কাশ্মীরের কথা উঠলেই তুষারঢাকা পাহাড়, গাছপালা, রাস্তাঘাটের ছবি চোখের সামনে ভেসে ওঠে। কিন্তু সেই কাশ্মীরের এ কী হাল! যে চেনা ছবিতে অভ্যস্ত পর্যটকেরা, এ বছর তা উধাও। কোথায় সেই বরফ, কোথায় সেই শ্বেতশুভ্র পাহাড়! এ বার ভূস্বর্গ হতাশ করছে পর্যটকদের। তুষারপাত হলেও তা সামান্য। এই মরশুমে তাপমাত্রা যেখানে জম্মু-কাশ্মীরের বেশির ভাগ অঞ্চলে হিমাঙ্কের নীচে নেমে যায়, এ বার কিন্তু তার বিপরীত ছবিই ধরা পড়ছে সেখানে।
জম্মু-কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগরে রবিবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কার্গিলে যখন এই সময়ে চারদিক শুধু বরফের পুরু স্তরে ঢেকে থাকে, সেই চেনা ছবিও দেখা যাচ্ছে না সেখানে। রবিবার কার্গিলের দ্রাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৯.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ফলে জম্মু-কাশ্মীরের যে আকর্ষণ, এ বার তা থেকে প্রায় বঞ্চিত হতে হচ্ছে পর্যটকদের।
কাশ্মীর, আর সেখানে বরফ নিয়ে খেলা হবে না, তা কী হয়! পর্যটকদের সেই বাসনাও এ বার পূরণে ‘ব্যর্থ’ ভূস্বর্গ। স্কি-প্রেমীরাও হতাশ। আর কাশ্মীরের এমন প্রাকৃতিক বদল দেখে স্তম্ভিত হচ্ছেন আবহবিদরাও। সঙ্গে আশঙ্কা প্রকাশও করেছেন তাঁরা। শ্রীনগরের আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা মুখতার আহমেদ এক সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, যা পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে, তাতে আগামী গ্রীষ্মে পরিস্থিতি আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে। কারণ পাহাড়ে বরফ না জমলে হিমবাহসৃষ্ট নদীগুলিতে জলের টান পড়বে। আবার মহেশ পালাওয়াত নামে এক আবহবিদ জানিয়েছেন, যদি তুষারপাত কম হয় বা একেবারেই না হয়, তা হলে হিমবাহগুলির গলে যাওয়া অংশ ভরাট হবে না। শুধু তাই-ই নয়, হিমবাহগুলি দ্রুত গতিতে গলতেও শুরু করবে।
শীতের
মরসুমে অন্যান্য বছর যে হারে তুষারপাত হয়, এ বার তা অধরা থেকে গিয়েছে। ফলে শ্রীনগর, সোনমার্গ এবং গুলমার্গের মতো
আকর্ষণীয় পর্যটনস্থলগুলিতে বরফের দেখা না মেলায় হা-হুতাশ করতে হচ্ছে পর্যটকদের।
কেন এমন পরিস্থিতি? কী বলছেন আবহবিদেরা? কাশ্মীর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা সংবাদ সংস্থা এএনআইকে জানিয়েছেন, গোটা ডিসেম্বর এবং জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ একেবারে ‘শুখা’। আগামী দিনে বৃষ্টির কোনও সম্ভাবনা নেই। ফলে ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত আবহাওয়া পুরোপুরি শুকনো থাকবে। গত তিন-চার বছর ধরে তুষারপাতের
একটি ধরন দেখা যাচ্ছিল। নির্ধারিত সময়ের আগেই তুষারপাত হচ্ছিল, কিন্তু এ বার সেটাও দেখা যাচ্ছে না। নভেম্বর থেকে ‘এল নিনো’র
প্রভাব চলছে। আগামী মাসেও এর প্রভাব দেখা যাবে বলে মনে করছেন কাশ্মীরের আবহাওয়া
দফতরের অধিকর্তা। ‘এল নিনো’র প্রভাবে যেমন বৃষ্টিপাত থমকে গিয়েছে, তেমনই তুষারপাতের উপর ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। গোটা ডিসেম্বরে ৭৯ শতাংশ ঘাটতি ছিল বৃষ্টিপাতের। যার জেরে তাপমাত্রাও খুব একটা নামেনি। ফলে সে ভাবে তুষারপাতও হচ্ছে না।
আবহবিদেরা বলছেন, প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়ম হল, দক্ষিণ আমেরিকার উপকূল থেকে উষ্ণ সমুদ্রের জল পশ্চিমে সরে গিয়ে কেন্দ্রীভূত হয় এশিয়া-অস্ট্রেলিয়া উপকূলের কাছে। এর উল্টো প্রক্রিয়াটাই ‘এল নিনো’। এর ফলে প্রশান্ত মহাসাগরের যে অংশের অপেক্ষাকৃত ঠান্ডা থাকার কথা, সেটি উষ্ণ হতে শুরু করে। সমুদ্রের সেই অতিরিক্ত তাপ নির্গত হয় সমুদ্রপৃষ্ঠের বাতাসে। তার জেরে পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়তে থাকে।