বেঙ্গালুরুতে বিধান সৌধতে মুখ্যমন্ত্রী কুমারস্বামীর সঙ্গে বিধায়করা। ছবি: পিটিআই।
কর্নাটকের বিক্ষুব্ধ বিধায়কদের ব্যাপারে আগামী কাল ফয়সালা শোনাবে সুপ্রিম কোর্ট। বিধানসভার স্পিকার রমেশ কুমারও জানিয়েছেন, বুধবারের মধ্যেই তিনি বিধায়কদের ইস্তফা ও সদস্যপদ খারিজের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে চান। ফলে এইচ ডি কুমারস্বামী সরকারের ভবিষ্যতের জন্য কালকের দিনটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে চলেছে।
স্পিকারের বিরুদ্ধে বিক্ষুব্ধ বিধায়কদের পদত্যাগপত্র গ্রহণ না করার অভিযোগে মামলায় যোগ দিয়েছেন কর্নাটকের ১৫ জন বিধায়ক। তার মধ্যেই সুপ্রিম কোর্ট এ দিন মন্তব্য করেছে, বিধায়কদের ইস্তফাগ্রহণ কিংবা তাঁদের সদস্যপদ খারিজের ব্যাপারে স্পিকার কী পদক্ষেপ করবেন, তা নিয়ে শীর্ষ আদালত কোনও নির্দেশ দিতে পারে না। স্পিকারের কাজে প্রতিবন্ধক হতে পারে না আদালত। সদস্যপদ খারিজের প্রক্রিয়া চালানোর আগে বিধায়কদের ইস্তফা নিয়ে ফয়সালা সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা কি না, তা দেখা যেতে পারে।
শীর্ষ আদালতে প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের বেঞ্চের সামনে বিক্ষুব্ধ বিধায়কদের আইনজীবী মুকুল রোহতগির যুক্তি, স্পিকার ইস্তফা নিয়ে সিদ্ধান্ত ঝুলিয়ে রাখতে পারেন না। এক জন রাজনৈতিক দলের সদস্যের মতো আচরণ করতে পারেন না তিনি। আর পদত্যাগপত্র গ্রহণের ক্ষেত্রে স্পিকারের কাছে একটি বিষয়ই বিবেচ্য— বিধায়কেরা স্বেচ্ছায় ইস্তফা দিয়েছেন কি না। রোহতগির অভিযোগ, কর্নাটকে এইচ ডি কুমারস্বামীর সরকার সংখ্যালঘু হয়ে পড়েছে বলেই সরকার বাঁচাতে বিধায়কদের ইস্তফা গ্রহণ করছেন না স্পিকার। বরং এই বিধায়কদের সরকারের পক্ষে ভোট দিতে বাধ্য করাতেই তিনি তাঁদের সদস্যপদ খারিজের প্রক্রিয়া শুরু করতে চাইছেন। স্পিকারের আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভির পাল্টা যুক্তি, কোনও বিষয়ে নির্দিষ্ট পথে সিদ্ধান্ত নেওয়ায় জন্য স্পিকারকে নির্দেশ দেওয়া যায় না।
শুনানির সময়ে স্পিকারের তরফে জানানো হয়, বুধবারের মধ্যে তিনি বিধায়কদের ইস্তফা গ্রহণ এবং সদস্যপদ খারিজের বিষয়ে ফয়সালা করতে চান। তবে ১৬ জুলাই পর্যন্ত এই দু’টি বিষয়ে স্থিতাবস্থা রাখতে আগেই স্পিকারকে যে নির্দেশ দিয়েছিল শীর্ষ আদালত, তা প্রত্যাহারের জন্য এ দিন আর্জি জানান সিঙ্ঘভি। শীর্ষ আদালতে কুমারস্বামীর আইনজীবী রাজীব ধবন বলেন, বিধায়কদের সদস্যপদ খারিজ কিংবা তাঁদের ইস্তফা নিয়ে স্থিতাবস্থা বজায় রাখার জন্য অন্তর্বর্তী নির্দেশ দেওয়ার এক্তিয়ার সুপ্রিম কোর্টের নেই। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কোনও বিষয়ে ফয়সালা করতেই হবে, এমন ভাবে স্পিকারকে বাধ্যও করা যায় না। শীর্ষ আদালতে ধবনের যুক্তি, ইস্তফার প্রক্রিয়াই যখন সঠিক ছিল না, তখন সন্ধে ৬টার মধ্যে ফয়সালার জন্য স্পিকারকে নির্দেশ দিতে পারে না কোর্ট। স্পিকারের আইনজীবী সিঙ্ঘভি বলেন, গত বছর বি এস ইয়েদুরাপ্পাকে যখন সরকার গড়তে ডাকা হয়েছিল, তখন মধ্যরাতে আদালতের শুনানির সময়েও কর্নাটকের স্পিকারকে কোনও নির্দেশ দেওয়া হয়নি। কুমারস্বামীর আইনজীবীর যুক্তি, বিক্ষুব্ধ বিধায়কদের ইস্তফা একটি পরিকল্পনার অঙ্গ। তাঁদের মাধ্যমে সরকার ফেলার চেষ্টা হচ্ছে। শীর্ষ আদালত যাতে এঁদের কথায় গুরুত্ব না দেয়, সেই আর্জি জানান ধবন।
আজ বিক্ষুব্ধ বিধায়কদের আইনজীবী মুকুল রোহতগির দাবি, তাঁর মক্কেলদের সঙ্গে বিজেপির কোনও যোগসাজশ রয়েছে, এমন প্রমাণ নেই। তাঁর সওয়াল, আজ দুপুর দুটোর মধ্যে ইস্তফা নিয়ে ফয়সালা করার জন্য স্পিকারকে নির্দেশ দেওয়া হোক। তার পরে তিনি সদস্যপদ খারিজের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। তবে রোহতগির আর্জি শুনে আজ কোনও নির্দেশ দেয়নি শীর্ষ আদালত।