National News

জেডিএস-কংগ্রেসের ২ বিধায়কের ইস্তফা, নজরে আরও ৫, কর্নাটকে রাজনৈতিক জল্পনা তুঙ্গে

সোমবার বিধানসভা শুরু হতেই স্পিকারের কাছে ইস্তফাপত্র জমা দেন বিজয়নগরের কংগ্রেস বিধায়ক আনন্দ সিংহ। তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সেই তালিকায় নাম লেখান জনতা দল ইউনাইটেড (জেডিএস) বিধায়ক রমেশ জারকিহোলি।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

বেঙ্গালুরু শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০১৯ ১৯:২০
Share:

কর্নাটকের স্পিকারের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিচ্ছেন কংগ্রেস বিধায়ক আনন্দ সিংহ। ছবি: টুইটার থেকে

কর্নাটকে কংগ্রেস-জেডিএস জোটে ফের ধাক্কা। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ইস্তফা দিলেন কংগ্রেস এবং জেডিএসের এক জন করে বিধায়ক। জোট সরকারের সঙ্কটের মেঘ ঘনীভূত হয়েছে আরও পাঁচ বিধায়কের ইস্তফার জল্পনায়। ইতিমধ্যেই কংগ্রেস পরিষদীয় দলনেতা সিদ্দারামাইয়া দলের বিধায়কদের নিয়ে বৈঠক করেছেন। তৎপরতা শুরু করে দিয়েছে বিজেপিও। নতুন রাজনৈতিক সমীকরণ নিয়ে রাজনৈতিক মহলে তীব্র জল্পনা।

Advertisement

সোমবার বিধানসভা শুরু হতেই স্পিকারের কাছে ইস্তফাপত্র জমা দেন বিজয়নগরের কংগ্রেস বিধায়ক আনন্দ সিংহ। তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সেই তালিকায় নাম লেখান জনতা দল ইউনাইটেড (জেডিএস) বিধায়ক রমেশ জারকিহোলি। স্বাভাবিক ভাবেই জল্পনা তীব্র হয়। তার মধ্যেই গুঞ্জন ছড়ায় জোটের আরও পাঁচ বিধায়ক পদত্যাগ করতে চলেছেন। যদিও তাঁদের নাম এখনও স্পষ্ট নয়। তবে পদত্যাগী দু’জন এবং ওই পাঁচ জন বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন বলে তাঁদের ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে খবর মিলেছে।

দু’জনের ইস্তফা এবং পাঁচ জনের দলত্যাগের গুঞ্জন ছড়াতেই ভাঙন ঠেকাতে তৎপর হন জোটের নেতারা। কংগ্রেস পরিষদীয় দলনেতা সিদ্দারামাইয়া নিজের বাড়িতেই দলের বিধায়কদের নিয়ে বৈঠকে বসেন। সেখানে অবশ্য সবাই উপস্থিত ছিলেন। জেডিএস-এর তরফেও বিধায়কদের আলাদা করে যোগাযোগ শুরু করেন শীর্ষ নেতৃত্ব। একটি মন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আমেরিকায় রয়েছেন কুমারস্বামী। সেখান থেকেই তিনি টুইট করে জানিয়েছেন, ‘‘রাজ্যের রাজনৈতিক পরিবর্তনের খবর পেয়েছি, পরিস্থিতির উপর নজর রাখছি।’’

Advertisement

আপাতত ‘ওয়েট অ্যান্ড ওয়াচ’ নীতি নিয়ে এগোচ্ছে বিজেপি। কর্নাটকের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বি এস ইয়েদুরাপ্পাও তলে তলে ঘুঁটি সাজাচ্ছেন বলে রাজনৈতিক মহলে জল্পনা শুরু হয়েছে। অন্য দিকে ইয়েদুরাপ্পার বিরুদ্ধে ঘোড়া কেনাবেচার অভিযোগ তুলে সরব হয়েছে কংগ্রেস এবং জেডিএস। তাঁদের অভিযোগ, ‘অপারেশন লোটাস-৩’ শুরু করেছেন বিরোধী দলনেতা ইয়েদুরাপ্পা।

২২৫ আসনের কর্নাটক বিধানসভায় নির্বাচন হয় গত বছরের মে মাসে। সেই সময় কংগ্রেস পেয়েছিল ৮০টি আসন। এইচ-ডি কুমারস্বামীর নেতৃত্বে জেডিইউ-এর দখলে গিয়েছিল ৩৭টি আসন। অন্য দিকে বিজেপির প্রাপ্ত আসন সংখ্যা ছিল ১০৪। এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেস এবং জেডিএস জোট করে সরকার গঠন করে। মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এইচডি দেবগৌড়ার ছেলে কুমারস্বামী।

আরও পড়ুন: বিজেপি-কে বাড়তেই হবে: কেশব ভবনের ‘বেনোজলাতঙ্ক’ নস্যাৎ করে সাফ জানাচ্ছে নাগপুর

কর্ণাটকে ম্যাজিক ফিগার ১১৩। কংগ্রেস-জেডিএস জোটের মিলিত বিধায়ক সংখ্যা এখন ১১৭। তার মধ্যে দু’জন ইস্তফা দিয়েই দিয়েছেন। আরও পাঁচ জনের পদত্যাগের গুঞ্জন সত্যি হলে কার্যত সরকার টিকিয়ে রাখাই কঠিন হয়ে দাঁড়াবে কংগ্রেস এবং জেডিএস-এর পক্ষে। তখন সরকার গঠনের দাবি জানাতে পারে বিজেপি। হাতে থাকা ১০৪ বিধায়কের সঙ্গে আরও ৭ বিধায়ক যোগ দিলে তার সঙ্গে আর মাত্র দু’জন বিধায়ক জোগাড় করতে পারলেই প্রয়োজনীয় সংখ্যা পেয়ে যাবে বিজেপি। সেই কারণেই রাজনৈতিক শিবিরের নজর এখন কর্নাটকে।

কর্নাটকে বিধায়কদের পদত্যাগ বা দলবদলের জল্পনা অবশ্য নতুন নয়। গত বছরের শেষের দিকে সেই জল্পনা এতটাই তীব্র হয় যে, সেই সময় কংগ্রেস এবং জেডিএস-এর বিধায়কদের সবাইকে একটি হোটেলে রাখা হয়। কিন্তু সেই সময় ওই বিধায়কদের দল থেকে উধাও হয়ে যান আনন্দ সিংহ। মোবাইল বা অন্য কোনও ভাবেও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। পরে যদিও তিনি ফিরে এসে কংগ্রেসেই রয়েছেন বলে জানান।

আরও পড়ুন: ঋণে ডুবছে সংস্থা, মুম্বইয়ে ৭ লক্ষ বর্গফুটের হেড অফিস বেচে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় অনিল অম্বানী​

তার পর আবার জল্পনা ছড়ায়, এ বছরের জানুয়ারিতে বেঙ্গালুরুর একটি রিসর্টে আর এক কংগ্রেস বিধায়ক জে এন গণেশের সঙ্গে মারপিটে জড়ান আনন্দ সিংহ। অভিযোগ, গণেশ বোতল দিয়ে মেরে তাঁর মাথা ফাটিয়ে দেন। ওই ঘটনার পর থেকেই বেসুরো আনন্দ সিংহ। শুধু খাতায়-কলমেই কংগ্রেসে রয়েছেন, অন্য কোনও সম্পর্ক নেই— এমন কথাও বলেছেন আনন্দ। ফলে তাঁর দলত্যাগ ছিল কার্যত সময়ের অপেক্ষা।

মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন সরকার টিকিয়ে রাখতে বিরোধী শিবিরের বিধায়কদের মোটা টাকার বিনিময়ে দলে টানার অভিযোগ ছিল বিএস ইয়েদুরাপ্পার বিরুদ্ধে। কর্নাটকের রাজনীতিতে এই ঘটনাই ‘অপারেশন লোটাস’ নামে পরিচিত। এর পর গত বছরের শেষের দিকে যখন শাসক জোটের বিধায়কদের ইস্তফা বা দলবদলের জল্পনা শুরু হয়, তখন বলা হয়েছিল অপারেশন লোটাস-২। দুই বিধায়কের ইস্তফা এবং পাঁচ জনের পদত্যাগের জল্পনা ছড়াতেই কংগ্রেস-জেডিএস জোটের তরফে অভিযোগ তোলা হয়েছে, অপারেশন লোটাস-৩ শুরু করেছেন ইয়েদুরাপ্পা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement