সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়ে বিকাশের এই ছবি। পিটিআই
এ বারও ধরা গেল না তাকে। গত শুক্রবার ৮ জন পুলিশকে খুনের পাণ্ডা বিকাশ দুবের খোঁজে মঙ্গলবার ফরিদাবাদের একটি হোটেলে হানা দেয় পুলিশ। কিন্তু তারা পৌঁছনোর সামান্য আগে হোটেল থেকে পালায় বিকাশ। তবে এ দিনই পুলিশের গুলিতে মারা গিয়েছে তার সব চেয়ে ঘনিষ্ঠ সঙ্গী অমর দুবে। বিকাশের গ্রাম চৌবেপুর থেকে গুলিযুদ্ধের পরে ধরা পড়েছে বিকাশের আর এক সঙ্গী শ্যামু বাজপেয়ী। হরিয়ানা এবং উত্তরপ্রদেশের নানা জায়গা থেকে ধরা পড়েছে বিকাশের আরও কয়েক জন সাঙ্গোপাঙ্গ। একই সঙ্গে বিকাশকে খবর পাচারের অভিযোগে বুধবার গ্রেফতার করা হয়েছে চৌবেপুর থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক বিনয় তিওয়ারি এবং বিকরু গ্রামের বিট ইনচার্জ কে কে শর্মাকে। শুক্রবার পুলিশি অভিযানের খবর বিকাশকে আগে ভাগে ফাঁস করে দেওয়ার অভিযোগে আগেই সাসপেন্ড করা হয়েছিল বিনয়-সহ কয়েক জন পুলিশকে।
বিকাশ দুবের খোঁজে মঙ্গলবার হরিয়ানার ফরিদাবাদের একাধিক জায়গায় হানা দেয় পুলিশ। মধ্যরাতে খেরি পুলে নিউ ইন্দিরা নগর আবাসনে যায় ফরিদাবাদ ক্রাইম ব্র্যাঞ্চের একটি দল। সেখানে কয়েক রাউন্ড গুলিযুদ্ধের পরে কার্তিকেয়, শ্রবণ এবং অঙ্কুর নামে বিকাশের তিন সহযোগীকে গ্রেফতার করে তারা। সূত্র মারফত খবর পেয়ে অন্য একটি হোটেলে উত্তরপ্রদেশ পুলিশের একটি দল হানা দিলেও বিকাশকে ধরা যায়নি। হোটেলটির সিসি ক্যামেরার ফুটেজে এক ব্যক্তিকে বিকাশ বলে একাধিক সূত্রে এ দিন দাবি করা হলেও এ ব্যাপারে মুখে কুলুপ এঁটেছে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ। তার মধ্যেই বুধবার ভোরে হামিরপুরে স্থানীয় পুলিশ ও স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্সের সঙ্গে গুলির লড়াইয়ে মারা যায় বিকাশের ছায়াসঙ্গী অমর দুবে। উত্তরপ্রদেশ পুলিশের একটি সূত্রের বক্তব্য, অমর কম বয়সেই অপরাধ জগতে নাম লেখায়। গত শুক্রবার ৮ পুলিশ খুনের ঘটনায় বিকাশের সঙ্গেই ছিল সে।
কিন্তু বিকাশ দুবে কোথায়? তার খোঁজে অন্তত ৪৫টি বিশেষ দল গঠন করে গোটা রাজ্য তোলপাড় করে ফেলছে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ। বিকাশের মাথার দাম ৫০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে প্রথমে আড়াই লক্ষ, পরে আরও বাড়িয়ে ৫ লক্ষ টাকা করা হয়েছে। শুক্রবার ভোরে তাকে ধরতে পুলিশি অভিযানের খবর আগেই পেয়ে গিয়ে রীতিমতো প্রস্তুতি নিয়ে ৮ জন পুলিশকে খুন করে উধাও হয়েছে সে। এ বার ফরিদাবাদের হোটেল থেকে তার উধাও হওয়া চিন্তা বাড়াচ্ছে পুলিশ কর্তাদের। তবে কি বিকাশের আরও ‘গুপ্তচর’ পুলিশে রয়েছে, যারা এখনও তাকে নিয়মিত খবর দিচ্ছে? এমনিতেই নিহত ডিএসপি-র চিঠিকে কেন্দ্র করে তদন্তে আঙুল উঠছে ডিআইজি পদমর্যাদার এক পুলিশ কর্তার দিকে। অভিযোগ, বিকাশের সঙ্গে ভালই দহরম-মহরম ছিল তাঁর।
বিকাশের ঘটনা নিয়ে উত্তরপ্রদেশ সরকারকে বিঁধতে ছাড়ছেন না বিরোধীরা। তাঁদের বক্তব্য, যোগী আদিত্যনাথের জমানায় গোড়ার দিকে অপরাধীদের ধরতে এনকাউন্টারের নামে একাধিক ছোটখাট অপরাধীকে গুলি করে মেরেছে পুলিশ। কিন্তু বিকাশরা ছিল নাগালের বাইরেই। তা ছাড়া, এই ধরনের অপরাধীদের ধরতে গেলে পুলিশের যে অস্ত্র এবং প্রশিক্ষণ দরকার, তাতেও ঘাটতি আছে। এ প্রসঙ্গে যোগী আদিত্যনাথ জমানায় অপরাধী ধরতে গিয়ে বন্দুক আটকে যাওয়ায় পুলিশের মুখে ‘ঠাঁই, ঠাঁই, ঠাঁই’ আওয়াজ করার প্রসঙ্গও তুলছেন তাঁরা।