কমল নাথ। —ফাইল চিত্র।
নির্বাচন এলে হিন্দু ভোট ঘরে তুলতে রাহুল গান্ধী-প্রিয়ঙ্কা গান্ধীরা মন্দিরে মন্দিরে মাথা ঠুকে ‘নরম হিন্দুত্ব’-এর পথ নেন বলে একটা অভিযোগ এত দিন উঠেছে। কিন্তু বিজেপিকে টক্কর দেওয়ার যুক্তি তুলে মধ্যপ্রদেশে কংগ্রেস প্রধান কমল নাথ যে নির্দেশ দলের নেতা-কর্মীদের পাঠিয়েছেন, তা আর নরম-এ আটকে না-থেকে কার্যত বিজেপির সঙ্গে হিন্দুত্ববাদের প্রতিযোগিতা বলা যেতে পারে। দলের মধ্যে এই সিদ্ধান্ত ও নির্দেশ নিয়ে আপত্তি উঠেছে। অনেক কর্মীই এর বিরোধী হলেও কমলের উপরে প্রকাশ্যে কথা বলছেন না। কিন্তু কমল নাথের নির্দেশের বিরোধিতা করে কংগ্রেসের সংখ্যালঘু নেতা আরিফ মাসুদ বলেছেন, “রাজ্য নেতৃত্বের এই নির্দেশ শুধু অবাঞ্ছিত ও অবান্তরই নয়, দলের ভাবমূর্তি এবং সংবিধানেরও খেলাপ।”
দলের নেতা-কর্মীদের কী নির্দেশ দিয়েছেন কমল নাথ? চিঠিতে বলা হয়েছে, কংগ্রেসের সব সদস্য ও কর্মীকে এ বার নবরাত্রি পালন করতে হবে। এপ্রিলের ১০ তারিখে রামনবমীর দিনে সব নেতাকে তাঁদের নিজ নিজ এলাকায় রাম কথা বচন এবং রামলীলার আসর বসাতে হবে। রামের পুজোর ব্যবস্থাও করতে হবে, যাতে পূণ্যার্থীদের অন্য কোথাও যেতে না হয়। এর পরে ১৬ তারিখে হনুমান জয়ন্তীর দিনে কংগ্রেসের সব সদস্যকে বাধ্যতামূলক ভাবে হনুমান চালিশা এবং রামায়ণের সুন্দরকাণ্ড পাঠ করতে হবে। ভোপালের কংগ্রেস বিধায়ক এবং অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল’ বোর্ডের সদস্য আরিফ মাসুদ প্রকাশ্যে এই নির্দেশের বিরোধিতা করে জানিয়েছেন, তিনি নিজে তো তা পালন করবেনই না, রমজানের মধ্যে কংগ্রেসের এই সব কর্মসূচি সংখ্যালঘু ভোটারদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করবে। আরিফের প্রশ্ন— কংগ্রেস তো গুড ফ্রাইডে পালন করে না, অম্বেডকর জয়ন্তীতেও নেই। খামোখা নবরাত্রি ও রামনবমী পালন কেন করবেন সদস্যরা? এ সব কি রাজনীতির কর্মসূচি? বিজেপির সঙ্গে লড়াই করবে কংগ্রেস, তাদের হিন্দুত্ববাদের মোকাবিলা করবে, সেটা তাদের পথেই হেঁটে? আরিফ বলেছেন, তা ছাড়া কংগ্রেস চিরটা কাল ধর্মনিরপেক্ষতার রাজনীতি করে এসেছে। ধর্মীয় কর্মসূচি তাদের গঠনতন্ত্রের বিরোধী। নেতৃত্বের এই ‘অপ্রয়োজনীয়’ নির্দেশ দলের নীতিকেই লঙ্ঘন করে।
বিজেপিও এই নির্দেশ নিয়ে কংগ্রেসের সমালোচনায় নেমেছে। এক দিকে তারা বলছে, বিজেপির চাপে মোহনদাস গান্ধীর কংগ্রেসকেও মধ্যপ্রদেশে হিন্দুত্বের ঘাসে মুখ দিতে হচ্ছে। বিজেপির মন্ত্রী নরোত্তম মিশ্র বলছেন, “হিন্দুত্ব নিয়ে বিজেপিকে টক্কর দেওয়ার কথা এখন ভাবতে হচ্ছে কংগ্রেসকে। সেই সঙ্গে প্রমাণ হচ্ছে, সংখ্যালঘুরা তাদের কাছে ভোটব্যাঙ্ক ছাড়া কিছুই নয়। যে হিন্দুত্বের ভয় তারা এত দিন সংখ্যালঘুদের দেখিয়েছে, ফেরে পড়ে নিজেরাই সেই পথে হাঁটছে।” বস্তুত সংখ্যালঘু ভোট যে এই নির্দেশে কংগ্রেসের পাশ থেকে সরে যাবে, সেই আশঙ্কা প্রকাশ করছেন আরিফ মাসুদও।