ফাইল চিত্র।
কেন্দ্রীয় বাজেটকে তুলোধনা করে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র সুর চড়ালেন তেলঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও। বললেন, ‘‘বিজেপিকে বঙ্গোপসাগরে ছুড়ে ফেলে দেওয়ার সময় এসেছে।’’ আলাদা করে প্রধানমন্ত্রীকেও আক্রমণ করতে ছাড়েননি তিনি। মঙ্গলবার কেসিআর বলেন, প্রধানমন্ত্রী ‘অত্যন্ত অদূরদর্শী’। ভোটের দিকে তাকিয়ে পোশাক নির্বাচন করেন। কিন্তু তাঁর বাজেট অন্তঃসারশূন্য। ‘‘উপর শেরওয়ানি, অন্দর পরেশানি!’’
এমন একটা সময়কে মুখ খোলার জন্য বেছে নিলেন কেসিআর, যখন তিন দিন পরেই নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে তাঁর সামনাসামনি দেখা হবে। শনিবার মোদীর হায়দরাবাদ যাওয়ার কথা। সেখান থেকে দু’জনে একই হেলিকপ্টারে যাবেন সন্ত রামানুজাচার্যের মূর্তি উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে। তার আগে এ ভাবে আক্রমণাত্মক হয়ে উঠলে বিষয়টা ‘অস্বস্তিকর’ হবে না? প্রশ্নের উত্তরে কেসিআর একটুও না দমে বলেন, ‘‘এক মঞ্চ বা কপ্টার শেয়ার করাটা কিছু নয়। প্রধানমন্ত্রী যে রাজ্যেই যান, মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে স্বাগত জানান। ওটা প্রোটোকল। ওঁর সমালোচনা করাটা আমার রাজনীতি। কপ্টারে ওঁর পাশে বসেও আমি কথাগুলো বলতে পারি।’’
বিজেপির সাম্প্রদায়িক রাজনীতি, বাজেটে ‘গোলমাল’ ইত্যাদির পাশাপাশি মোদীকে আলাদা করে আক্রমণের ঝাঁঝ আজ কেসিআর-এর কথায় ছিল লক্ষণীয়। শ্লেষের সুরে বলেন, ভোট এল তো উনি (মোদী) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতো দাড়ি শুরু করলেন! তামিলনাড়ু গেলে লুঙ্গি পরেন, পঞ্জাবে পাগড়ি। মণিপুরে এক রকম টুপি, উত্তরাখণ্ডে আর এক রকম! এই সব চমকে দেশের কী লাভ?’’
ঘটনা হল, কিছুদিন আগে পর্যন্তও বিরোধী শিবিরে কেসিআর এবং তাঁর দল মোদী সরকারের প্রচ্ছন্ন সমর্থক বলেই পরিচিত ছিলেন। কেসিআর-এর সুর বদলে তাই রাজনৈতিক শিবির সচকিত। সামনেই পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা ভোট। তার ফলাফল ২০১৪-এর লোকসভা নির্বাচনে অনেকটাই প্রভাব ফেলবে বলে মনে করা হচ্ছে। কেসিআর-এর আজকের বক্তব্যে তাঁর দল টিআরএস যে জাতীয় রাজনীতিতে ভূমিকা নিতে তৈরি হচ্ছে, সেই বার্তা ছিল স্পষ্ট। রাজনৈতিক মহলে অনেকেরই ধারণা, অ-বিজেপি জোট তৈরি হলে সেখানে অন্যতম মুখ হিসাবে নিজের দাবি পেশ করতে চান কেসিআর। অন্যান্য আঞ্চলিক দলগুলির সঙ্গেও যে কারণে কথাবার্তা শুরু করেছেন তিনি। বিরোধী জোটে কোন ভূমিকায় নিজেকে দেখতে চান, কেসিআর নিজে সে কথা স্পষ্ট করেননি। বলেছেন, সে বিষয়ে আমি নিশ্চিত নই। তবে তাঁর দাবি, প্রধানমন্ত্রিত্বের দৌড়ে তিনি নেই। তাঁর লক্ষ্য, সংবিধান সংশোধন করে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো আরও মজবুত করা।
আজ কেসিআর বলেন, ‘‘কেন্দ্রের নেতৃত্বে গুণগত পরিবর্তন দরকার। আমি মোটেই চুপ করে বসে থাকব না।’’ শীঘ্রই তিনি মুম্বই গিয়ে উদ্ধব ঠাকরের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলবেন বলেও জানান। কেন্দ্রে পরিবর্তন ঘটানোই যে সেই আলোচনার বিষয়বস্তু হবে, সেটা গোপন না করেই তিনি বলেছেন, দেশে একটা পরিবর্তন, একটা বিপ্লব প্রয়োজন। আমরা সেই লক্ষ্যেই কাজ করব। লড়াই না করলে পরিবর্তন আসবে না।’’ ইতিমধ্যেই তেজস্বী যাদব, এম কে স্ট্যালিন, পিনারাই বিজয়নের সঙ্গে কথা হয়েছে তাঁর।
সিঙ্গাপুরের সঙ্গে ভারত সরকারের তুলনা করে কেসিআর দাবি করেন, ‘‘সিঙ্গাপুরের আর কিছুই নেই, মস্তিষ্কটা আছে শুধু। আর বর্তমানে ভারত সরকারের সব আছে মস্তিষ্ক ছাড়া।’’ তাঁর অভিযোগ, সোশ্যাল মিডিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে একের পর এক মিথ্যা বারংবার আউড়ে গিয়ে, ঘৃণা আর বিদ্বেষের রাজনীতি লোককে বোকা বানিয়েছে বিজেপি। ‘‘কিন্তু এখন তাদের মুখোশ খুলে গিয়েছে। সময় এসেছে ওদের বঙ্গোপসাগরে ছুড়ে ফেলার।’’