ধর্ষণ-খুন নিয়ে যোগী সরকারকে তোপ রাহুল গাঁধী ও প্রিয়ঙ্কা গাঁধীর। —ফাইল চিত্র
বুলন্দশহর, হাপুর, লখিমপুর খেরি এবং গোরক্ষপুর। কোথাও ছ’বছরের শিশুকে অপহরণ করে খুন করা হয়েছে। কোথাও আবার ধর্ষণের পর চোখ উপড়ে নেওয়া হয়েছে, কেটে দেওয়া হয়েছে জিভ। আজমগড়ে দলিত পঞ্চায়েত প্রধানকে গুলি করে খুনের অভিযোগ উচ্চবর্ণের বিরুদ্ধে। উত্তরপ্রদেশে পর পর নৃশংস নারী নির্যাতন আর জাতি হিংসা নিয়ে যোগী আদিত্যনাথ সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দাগল কংগ্রেস। ‘জঙ্গলরাজ’ চলছে বলে একযোগে আক্রমণ শানালেন রাহুল ও প্রিয়ঙ্কা গাঁধী।
পর পর খুন, ধর্ষণের ঘটনায় গত প্রায় এক সপ্তাহ ধরে সংবাদ শিরোনামে উত্তরপ্রদেশ। তা নিয়ে সরব কংগ্রেস, সমাজবাদী পার্টি ও বহুজন সমাজপার্টি। প্রতিটি ঘটনার পরেই যোগী সরকারকে আক্রমণ করেছেন বিরোধীরা। কাঠগড়ায় তুলেছেন যোগী আদিত্যনাথের সরকার ও তাঁর পুলিশ-প্রশাসনকে। জনমানসেও সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ-বিক্ষোভ জমছে। তার প্রমাণ মিলেছে আজমগড়ের বিক্ষোভে।
সেগুলিকে হাতিয়ার করেই সামগ্রিক এই সমস্ত অপরাধের জন্য উত্তরপ্রদেশ সরকারের দুর্বল পুলিশি ব্যবস্থা, জাতপাতের রাজনীতির অভিযোগ তুলে সরব হলেন প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধী। টুইটারে তিনি লিখেছেন,‘‘জাতিবিদ্বেষ ও ধর্ষণের শীর্ষে রয়েছে উত্তরপ্রদেশ। জঙ্গলরাজ চলছে।’’
শুক্রবার সন্ধ্যায় আজমগড়ের বাঁশগাঁও গ্রামের প্রথম দলিত পঞ্চায়েত প্রধান সত্যমেব জয়তে-কে গুলি করে খুন করেছিল দুষ্কৃতীরা। উচ্চবর্ণের কাছে কাছে নতি স্বীকার না করাতেই তাঁকে খুন হতে হয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। সেই ঘটনা টেনে রাহুল গাঁধী লিখেছেন, ‘‘এ বার আরও একটি ভয়ঙ্কর ঘটনা। পঞ্চায়েত প্রধান সত্যমেব দলিত হয়েও নতি স্বীকার করেননি। তার জন্যই তাঁকে খুন হতে হয়েছে। সত্যমেবর পরিজনদের প্রতি সমবেদনা জানাই।’’
আরও পড়ুন: পাঁচিল নিয়ে তাণ্ডব, বিশ্বভারতী বন্ধ ।। সব নির্মাণ সৌন্দর্য বাড়ায় না: মমতা
উত্তরপ্রদেশের দায়িত্বপ্রাপ্ত কংগ্রেস সাধারণ সম্পাদক প্রিয়ঙ্কা গাঁধী আবার সরব হয়েছেন রাজ্যে মহিলাদের নিরাপত্তা নিয়ে। গত কয়েক দিনে মহিলাদের উপর নির্যাতনের বিষয় টেনে প্রিয়ঙ্কার তোপ, ‘‘বুলন্দশহর, হাপুর, লখিমপুর খেরি এবং এ বার গোরক্ষপুর। পর পর এই সব ঘটনাই প্রমাণ করে, মহিলাদের নিরাপত্তা দিতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ উত্তরপ্রদেশ সরকার।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘অপরাধীদের মধ্যে আইনের কোনও ভীতিই নেই। সেই কারণেই মহিলাদের উপর এমন অত্যাচার ঘটে চলেছে।’’ পুলিশ-প্রশাসনকে নিশনা করে প্রিয়ঙ্কা বলেন, ‘‘পুলিশ মহিলাদের নিরাপত্তা দিতে তো পারছেই না, কোনও ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরেও উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে পারছে না। তাই উত্তরপ্রদেশ সরকারের উচিত আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা পর্যালোচনা করে মহিলাদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা।’’
আরও পড়ুন: ‘পিএম কেয়ার্স’ এর তথ্য দিতে অস্বীকার, আরটিআই ফেরাল প্রধানমন্ত্রীর দফতর
তবে কংগ্রেসের তোলা এই সব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে উত্তরপ্রদেশের শাসক দল বিজেপি। দলের নেতাদের বক্তব্য, বিজেপি শাসনে রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবণতি হয়েছে— এমন অভিযোগ ঠিক নয়।
কানপুরের গ্যাংস্টার বিকাশ দুবের এনকাউন্টার পর্ব পিছনের সারিতে চলে গিয়েছিল। তার পর গত সপ্তাহে। মেধাবী ছাত্রী সুদীক্ষা ভাটি পথ দুর্ঘটনায় মারা যান। পরিবারের অভিযোগ ছিল, সুদীক্ষাকে হেনস্থা করা হয়েছিল বলেই দুর্ঘটনা ঘটেছে। তার পর সামনে আসে হাপুরে ৬ বছরের শিশুকে অপহরণ করে জঙ্গলের মধ্যে ফেলে রেখে যাওয়ার ঘটনা। লখিমপুর খেরির ঘটনা ছিল আরও নৃশংস। ১৩ বছরের কিশোরীকে গণধর্ষণের পর চোখ উপড়ে জিভ কেটে নেওয়া হয়েছে। পাশপাশি আজ সোমবারই গোরক্ষপুরে ধর্ষণের পাশাপাশি সিগারেটের ছ্যাকা দিয়ে শাস্তি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ঘটনায় দু’জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সব মিলিয়ে কার্যত এই ধারাবাহিক অপরাধকে হাতিয়ার করেই যোগী সরকারের দিকে ফের ‘জঙ্গলরাজ’ তির ছুড়লেন কংগ্রেসের দুই শীর্ষ নেতা-নেত্রী।
বাঁশগাঁওয়ে পঞ্চায়েত প্রধান খুনের প্রতিবাদে এবং অপরাধীদের গ্রেফতারের দাবিতে গ্রামবাসীরা পুলিশকে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে চার জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধৃতদের বিরুদ্ধে ইউএপিএ ধারায় মামলা রুজু হয়েছে। তা নিয়েও সরব হয়েছেন রাহুল-প্রিয়ঙ্কা।