যে দিকে চোখ যায়, শুধু ফাটল আর ফাটল। আতঙ্কের প্রহর গুনছে জোশীমঠ। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
চার দিকে শুধু ফাটল আর ফাটল। যে কোনও মুহূর্তে তলিয়ে যেতে পারে জোশীমঠ। এই আতঙ্কের মধ্যে মঙ্গলবার ওই পবিত্র ভূমিতে ভেঙে ফেলা হবে বেশ কিছু নির্মাণ। প্রথম ভাঙা হবে জোশীমঠের ২টি বিলাসবহুল হোটেল। বিপর্যয়ের জেরে একে অপরের গায়ে হেলে পড়েছে ওই ২টি হোটেল। যার জেরে এলাকার বেশ কিছু বাড়ি বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে।
‘মাউন্ট ভিউ’ ও ‘মালারি ইন’ নামে এই ২টি হোটেলই প্রথম ভাঙার নির্দেশ দিয়েছেন চামোলি জেলা প্রশাসন। এই প্রসঙ্গে উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রীর প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি আর মীনাক্ষী সুন্দরম বলেছেন, ‘‘ওই দুই নির্মাণ যন্ত্রের সাহায্যে ভেঙে ফেলা হবে।’’
ওই ২টি হোটেল রয়েছে জনবহুল এলাকায়। ফলে হোটেল দু’টি ভাঙা হলে যাতে আশপাশের এলাকায় কোনও ক্ষতি না হয়, সে দিকে জোর দেওয়া হয়েছে। এ জন্য রুরকির সেন্ট্রাল রিসার্চ ইন্সটিটিউটের একটি দল ওই দুই হোটেলে সমীক্ষা চালিয়েছে। প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর দলকে। হোটেলগুলি ভাঙার আগে এলাকা খালি করা হয়েছে।
জোশীমঠ পরিস্থিতিতে কি আরও অনেক নির্মাণ ভেঙে ফেলা হবে? এই প্রশ্নের জবাবে চামোলির জেলাশাসক হিমাংশু খুরানা বলেছেন, ‘‘নির্মাণগুলিতে সমীক্ষা চালানোর কাজ চলছে। বাসিন্দাদের নিরাপত্তার কথা ভেবে প্রয়োজনে আরও অনেক নির্মাণ ভাঙা হবে।’’ এই প্রেক্ষাপটে সোমবার ১০০টিরও বেশি বাড়িতে বিপজ্জনক বলে চিহ্নিত করা হয়েছে।
সোমবার জোশীমঠে আরও ৬৮টি বাড়িতে নতুন করে ফাটল দেখা গিয়েছে। যার জেরে মোট ৬৭৮টি বাড়িতে ফাটল তৈরি হয়েছে। নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে নিরাপদে সরানো হয়েছে আরও ২৭টি পরিবারকে। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, ৮২টি পরিবারকে ১৬টি অস্থায়ী শিবিরে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে।
আতঙ্কে থমথমে জোশীমঠের বাসিন্দাদের চোখ-মুখ। প্রাণ বাঁচাতে ভিটেমাটি ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন বাসিন্দারা। কেউ ঠান্ডার মধ্যেই খোলা আকাশেই রাত কাটাচ্ছেন। হিমালয়ের কোলে এই জনপদে আরও কয়েকটি হোটেলে হেলে গিয়েছে। হোটেল স্নো ক্রেস্ট ও কামেতরও একই দশা। হোটেলের এক কর্মী বলেছেন, ‘‘আমাদের হোটেল ৬ ইঞ্চি মতো বসে গিয়েছে। যার জেরে পাশের হোটেলের দিকে হেলে পড়েছে।’’ জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, আড়াই হাজার বর্গফুট এলাকার মধ্যে জোশীমঠে প্রায় ৩ হাজার ৯০০টি বাড়ি রয়েছে। এ ছাড়াও ৪০০টি বাণিজ্যিক ভবন রয়েছে। যদিও পুরসভার নথি অনুযায়ী জানা গিয়েছে, শুধু মাত্র ১৭৯০ জন বাসিন্দা বাড়ির কর মেটান।
উত্তরাখণ্ডের ডিজিপি বলেছেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত ৬৭৮টি বাড়ি বিপজ্জনক। বহু বাড়ি খালি করে দেওয়া হয়েছে। কিছু বাড়ি খালি করার কাজ চলছে। রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর ৮ দল, জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর ১টি দল, পুলিশকর্মীরা রয়েছেন। প্রয়োজনে কিছু এলাকা সিল করে দেওয়া হবে। ওই এলাকার বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা করা হচ্ছে।’’