সোমবার দিল্লির রাস্তায় পুলিশ-ছাত্র তুমুল ধস্তাধস্তি। ছবিঃ পিটিআই
দিল্লি পুলিশের বিরুদ্ধে ছাত্রীনিগ্রহের অভিযোগ আনল জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় (জেএনইউ)-এর আন্দোলনকারী পড়ুয়ারা। সোমবার হস্টেলের ফি বৃদ্ধির প্রতিবাদে সংসদ ভবনের উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন তাঁরা। সেই সময় পুলিশের সঙ্গে তাঁদের খণ্ডযুদ্ধ বাধে। মঙ্গলবার জেএনইউয়ের ছাত্র সংসদ অভিযোগ তুলল, মহিলা পুলিশ মোতায়েন থাকা সত্ত্বেও, ছাত্রীদের টানাহ্যাঁচড়া করে গাড়িতে তুলেছেন পুরুষ পুলিশকর্মীরা। পুলিশি লাঠিচার্জে অন্তত ১০ জন ছাত্র মারাত্মক জখম হয়েছেন বলেও অভিযোগ। তাঁদের মধ্যে এক প্রতিবন্ধী ছাত্রও রয়েছেন বলে দাবি করা হয়েছে।
এই নিগ্রহের অভিযোগ নিয়ে মুখ খোলেনি দিল্লি পুলিশ। তবে সোমবারই তাদের তরফে একটি বিবৃতি দিয়ে দাবি করা হয়েছিল, আত্মরক্ষার তাগিদেই আক্রমণের পথ বেছে নেওয়া হয়। পুলিশ-ছাত্র সংঘর্ষে অন্তত ৩০ জন পুলিশকর্মী আহত হয়েছেন বলেও দাবি করেছে পুলিশ। এ দিন তারা ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৮৬ নং (সরকারি কাজে বাধা) ও ৩৫৩ নং (সরকারি কর্মচারী নিগ্রহ) ধারায় কিষাণগড় থানায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের বিরুদ্ধে দু’টি এফআইআর দায়ের করে।
মঙ্গলবারই জেএনইউয়ের ছাত্রসংসদ একটি সাংবাদিক বৈঠকের আয়োজন করে। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের সম্পাদক ঐশী ঘোষ বলেন, ‘‘গোটা ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা খুবই নিন্দনীয়। ঘটনাস্থলে যথেষ্ট পরিমাণে মহিলা পুলিশ থাকা সত্ত্বেও পুরুষ পুলিশই বিক্ষুব্ধ ছাত্রীদের টানা-হ্যাঁচড়া করে গাড়িতে তোলে।’’ জেএনইউ ছাত্রসংসদের অভিযোগ, সোমবার রাতে পড়ুয়াদের আটক করার পরে দু’ঘণ্টা নানা জায়গায় ঘোরানো হয়েছে।
আরও পড়ুন:৫ দিনে দ্বিতীয় বার মুর্শিদাবাদ সফরে রাজ্যপাল, এ বার সিপিএম বিধায়কের আমন্ত্রণে
আরও পড়ুন:ভয় আর হতাশা থেকেই ‘সংখ্যালঘু উগ্রপন্থা’ মন্তব্য করেছেন মমতা, পাল্টা তোপ আসাদউদ্দিনের
এক লাফে হস্টেল ফি ৩০ গুণ বেড়ে যাওয়ায় গত তিন সপ্তাহ ধরেই পথে নেমে আন্দোলন করছেন জেএনইউ-এর ছাত্রছাত্রীরা। কার্যত তাঁদের চাপেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেন ৩০ গুণ নয়, ১০ গুণ বাড়ানো হবে হস্টেলের ফি। তাতেও ছাত্রবিক্ষোভ কমেনি। সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি নিয়ে ছাত্ররা সোমবার সংসদ ভবনের দিকে রওনা হন। তাঁদের পুলিশ বাধা দিলে পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। দফায় দফায় সংঘর্ষ বাধে ছাত্র ও পুলিশের মধ্যে। প্রতিবাদী পড়ুয়াদের অভিযোগ, হঠাৎই রাস্তার দু’পাশের আলো নিভিয়ে ব্যারিকেড টপকে ভিড়ের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে পুলিশ।
আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তেই অনড় থাকছেন ঐশীরা। তাঁর বক্তব্য, ‘‘মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক যতক্ষণ না এই বেতনবৃদ্ধি প্রত্যাহার না করছে তত ক্ষণ আন্দেলন থামবে না।’’ একই সঙ্গে দাবি তোলা হয়েছে, তুলে নিতে হবে সমস্ত নতুন নিয়ম সংক্রান্ত নির্দেশিকা। বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা আন্দোলন মঞ্চ থেকে বর্তমান উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিও তুলছেন।
এ দিন রাজ্যসভায়ও বিষয়টি উত্থাপন করেন আম আদমি পার্টির সাংসদ সঞ্জয় সিংহ। সঞ্জয়ের কথায়, ‘‘এটা কি সেই দিল্লি পুলিশ যারা তিশহাজারি চত্বরে আইনজীবদের বিরুদ্ধে শারীরিক নিগ্রহের অভিযোগ এনেছিল? যারা বলেছিল, তাদের পোশাক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে? ছাত্রনিগ্রহের সময় তাঁদের পোশাক ক্ষতিগ্রস্থ হয়নি?’’