রবিবার হামলার দিন আহত হওয়ার পর ঐশী ঘোষ। -ফাইল চিত্র
একটা এফআইআর করে রেখেছে পুলিশ। জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে (জেএনইউ)মুখোশধারীদের হামলার ঘটনায় এক জনও গ্রেফতার হয়নি। তার মধ্যেই এ বার খুনের চেষ্টা ও শ্লীলতাহানির অভিযোগ করলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদেরসভানেত্রী ঐশী ঘোষ।
খুনের চেষ্টা, শ্লীলতাহানি এবং মারধরের অভিযোগ দায়ের করেছেন ঐশী। তাঁর অভিযোগ, একটি গাড়ির পাশে টেনে নিয়ে গিয়ে তাঁকে খুনের চেষ্টা করেন এবিভিপি সমর্থকরা। তাঁকে উদ্দেশ্য করে অশ্লীল ভাষায় গালাগালি ও তাঁর শ্লীলতাহানি করা হয় বলেও অভিযোগ ঐশীর। বুধবার অভিযোগে তিনি লিখেছেন, হামলার সময় পুলিশ গেটে থাকলেও দাঁড়িয়ে শুধু দেখেছে। আর অভিযোগ দায়েরের পর তাঁর বক্তব্য, ঘটনার পরেও কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। আশা করি এ বার আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে পুলিশ।
রবিবার রাতে জেএনইউ-এ ঢুকে তাণ্ডব চালায় ৫০-৬০ জনের একটি দল। তাদের সবার মুখ বাঁধা ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের সবরমতি ছাত্রাবাসে ঢুকে ব্যাপক ভাঙচুর করে ওই যুবকের দল। আহত হন পড়ুয়া-অধ্যাপক সহ অন্তত ৩৪ জন। বেধড়ক মারে মাথা ফেটে যায় ঐশীর। ওই ঘটনায় কাঠগড়ায় আরএসএস-এর ছাত্র সংগঠন এবিভিপি। ঘটনায় একটি এফআইআর দায়ের হলেও হামলার তিন দিন পরেও গ্রেফতারের সংখ্যা শূন্য। ফলে পুলিশের ভূমিকায় প্রশ্ন উঠেছে। বিরোধীদের অভিযোগ, শাসক দল ঘনিষ্ঠ ছাত্র সংগঠনের সদস্যরা হামলায় যুক্ত বলেই কাউকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না।
এমন পরিস্থিতিতে এ বার অভিযোগ দায়ের করলেন ঐশী ঘোষ নিজেই। অভিযোগপত্রে তিনি উল্লেখ করেছেন, “২০-জন যুবকের একটি দল আমাকে টেনে হিঁচড়ে একটি গাড়ির পিছনে নিয়ে যায়। আমাকে ঘিরে ধরে। আমি কাকুতি-মিনতি করলেও ছাড়া হয়নি। আমাকে রড দিয়ে মারা হয়। আমি সেখানেই পড়ে যাই।” ঐশীর দাবি, আক্রমণকারীদের মুখ বাঁধা থাকলেও ওই সময় এক জনের মুখে সেটা ছিল না। তাঁকে তিনি চিনতে পারবেন বলেও দাবি ঐশীর।
কী ভাবে তাঁকে মারা হয়েছিল এবং অত্যাচার করা হয়েছিল, তার বর্ণনায় ঐশী অভিযোগপত্রে লিখেছেন, “দলবদ্ধভাবে আমাকে আক্রমণ করে। মাথায় লোহার রড দিয়ে পর পর মারতে থাকে ওরা। আমি মাটিতে পড়ে যাই। মাথা থেকে রক্ত ঝরতে থাকে। কেউ কেউ আমাকে লাথি মারতে শুরু করে এবং রড দিয়ে মাথায়, পিঠে, বুকে, হাতে বেধড়ক পেটাতে থাকে। ওদের উদ্দেশ্যই ছিল আমাকে মেরে ফেলা।”অর্থাত্ খুনের চেষ্টার অভিযোগ তুলেছেন ঐশী।
এর পাশাপাশি শারীরিক ভাবে শ্লীলতাহানির অভিযোগও তুলেছেন বাম ছাত্র নেত্রী। তাঁর বক্তব্য, “আমাকে ফেলে পেটানোর সময় শ্লীলতাহানি করে। অশ্রাব্য ভাষায় আমাকে উদ্দেশ্য করে গালাগালি করতে থাকে। তার মধ্যেই এক জনকে বলতে শুনেছি, মার দেঙ্গে কাট দেঙ্গে।”
এখানেই শেষ নয়, ঐশীর অভিযোগ, আক্রান্ত হওয়ার পরেও যাতে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সমস্যা হয়, সেই চেষ্টাও করেছিল হামলাকারীরা। পুলিশও সাহায্য করেনি বলে অভিযোগ তাঁর। তিনি বলেন, “আমার মাথা, কনুই, হাত থেকে অঝোরে রক্ত পড়ছিল।সারা শরীরে আঘাতের ব্যথায় কাতরাচ্ছিলাম। ওই অবস্থায় যে অ্যাম্বুল্যান্সে করে এমস হাসপাতালে আমাদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, সেটাও আটকে দেওয়ার চেষ্টা হয়। ফলে অনেক ঘুরে হাসপাতালে পৌঁছতে হয়।”
অভিযোগপত্রেই পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন ঐশী। “অত্যন্ত দুঃখেরসঙ্গে লিখতে হচ্ছে যে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন গেটে পুলিশকর্মীরা থাকলেও তাঁরা ছিলেন নীরব দর্শক।”