সমালোচনার পরিসর কমছে, ক্ষুব্ধ প্রাক্তনীরা

সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির কথায় উঠে এল, তিনি জেএনইউয়ের ছাত্র সংগঠন পরিচালনার দায়িত্বে থাকাকালীন কী ভাবে তাঁদের বাধায় ক্যাম্পাসে ঢুকে বৈঠক করার সিদ্ধান্ত বদলাতে হয়েছিল তদনীন্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গাঁধীকে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০১৯ ০২:৪৫
Share:

সাংবাদিক বৈঠকে কারাট, ইয়েচুরি। সোমবার। পিটিআই

মাঝে ৪৬ বছরের ব্যবধান। প্রকাশ কারাট মনে করিয়ে দিলেন, প্রায় সাড়ে চার দশক আগে ১৯৭৩ সালে জেএনইউয়ে প্রথম ধর্মঘটও হয়েছিল মেসের ফি বৃদ্ধির প্রতিবাদে। দুধ-সাদা চুলের এই সিপিএম পলিটব্যুরো সদস্য তখন ওই কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ ছাত্র নেতা।

Advertisement

সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির কথায় উঠে এল, তিনি জেএনইউয়ের ছাত্র সংগঠন পরিচালনার দায়িত্বে থাকাকালীন কী ভাবে তাঁদের বাধায় ক্যাম্পাসে ঢুকে বৈঠক করার সিদ্ধান্ত বদলাতে হয়েছিল তদনীন্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গাঁধীকে। রাতারাতি দেশে জরুরি অবস্থা জারির বিরুদ্ধে জেএনইউ কী ভাবে প্রতিবাদে গর্জে উঠেছিল, মনে করালেন সে কথাও।

ইয়েচুরি, কারাট তো বটেই। এন আর মোহান্তি থেকে এন সাই বালাজি— কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বিভিন্ন সময়ে ছাত্র সংগঠনের শীর্ষে থাকা নেতাদের দাবি— কংগ্রেস, জনতা দল থেকে শুরু করে কেন্দ্রে সমস্ত সরকারের আমলেই জেএনইউয়ের উপরে ছড়ি ঘোরানোর চেষ্টা হয়েছে। পুলিশি হামলা কিংবা পড়ুয়াদের জেলযাত্রাও নতুন নয়। কিন্তু সমস্ত কিছুর পরেও দিনের শেষে কোথাও আলোচনার দরজা খোলা ছিল। ছিল সমালোচনার পরিসর। কিন্তু মোদী সরকারের আমলে শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ এবং গৈরিকিকরণের তাগিদে তা উধাও হতে বসেছে বলে তাঁদের অভিযোগ।

Advertisement

বর্ধিত ফি পুরোপুরি প্রত্যাহারের দাবিতে আজ এক মাসেরও বেশি অচল জেএনইউ। প্রতিবাদে পথে নেমেছেন পড়ুয়ারা। সমর্থনে এগিয়ে এসেছে এম্স-সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ২৭ নভেম্বর প্রতিবাদের ডাক দেওয়া হয়েছে সারা দেশের সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। এই পরিস্থিতিতে এ দিন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন জেএনইউয়ের ছাত্র সংগঠন জেএনইউএসইউয়ের কয়েক জন প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট।

বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ১৯৭৭-৭৮ সালে ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া ইয়েচুরির অভিযোগ, ‘‘আক্রমণের লক্ষ্য শুধু জেএনইউ নয়। বরং নিশানায় সরকারি ভর্তুকিতে সস্তার উচ্চশিক্ষাই।’’ তাঁর মতে, শিক্ষার বেসরকারিকরণ এবং বাণিজ্যকরণে কেন্দ্র মরিয়া। দেশের প্রত্যন্ত প্রান্তের দরিদ্র পরিবার থেকে আসা পড়ুয়াদের জন্য সুযোগের দরজা যে ভাবে বরাবর এই বিশ্ববিদ্যালয়ে খোলা থাকে, এখানে কম খরচে পড়ার সুযোগ পেয়ে তাঁরা যে ভাবে ক্ষমতার দিকে যুক্তিপূর্ণ প্রশ্ন ছুড়ে দেন, তা সরকারের ঘোর অপছন্দ। আর সেই কারণেই অত্যন্ত পরিকল্পিত ভাবে জেএনইউ, হায়দরাবাদ কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠানগুলিকে ধীরে ধীরে ‘ধ্বংস করার’ চেষ্টা হচ্ছে বলে তাঁদের অভিযোগ।

মোদী সরকারের শিক্ষানীতির বিরোধিতা করেছেন সব প্রাক্তন ছাত্রনেতাই। ১৯৭৩-৭৪ সালের প্রেসিডেন্ট কারাট, ১৯৭৯-৮০ সালের রঘুনন্দন, ১৯৮২-৮৩ সালের মোহান্তি, ২০১৮-১৯ সালের বালাজি— সকলেরই অভিযোগ, কেন্দ্রের ভাঁড়ারে মূর্তি গড়ার টাকা আছে। বিধায়ক কেনা-বেচায় উড়ছে কোটি-কোটি টাকা। কিন্তু উচ্চশিক্ষার খরচ কম রেখে তার দরজা সকলের জন্য হাট করার ইচ্ছে কেন্দ্রের নেই। বরং তাদের লক্ষ্য, বেসরকারি, বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে এ দেশে শিক্ষার বিপুল বাজার খুলে দেওয়া। তা ছাড়া, তথ্য ঠাসাই যুক্তির বুনোটে অপ্রিয় প্রশ্ন তোলার ‘রেওয়াজও’ জেএনইউয়ের উপরে সরকারের রাগের অন্যতম কারণ বলে মনে করেন তাঁরা। নইলে বর্তমান সরকারের দুই মন্ত্রী, বহু সচিবের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে নাগাড়ে বদনাম করার চেষ্টার আর কোনও যুক্তিগ্রাহ্য ব্যাখ্যা নেই বলে তাঁদের দাবি।

পড়ুয়াদের সমস্যা শুনতে সরকার রবিবার ৭ সদস্যের কমিটি গড়ার কথা বললেও, সঙ্কট কাটানোর সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন জেএনইউএসইউয়ের প্রেসিডেন্ট ঐশী ঘোষ। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা চাই জট খুলুক। এক মাসেরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকা কাঙ্ক্ষিত নয়। কিন্তু সমাধান খোঁজার কোনও ইচ্ছে উপাচার্য কিংবা সরকারের তরফে চোখে পড়ছে না।’’ তাই জেএনইউ-সহ সারা দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার উপরে এই আক্রমণ রুখতে আপাতত লড়াই জারি রাখার কথা বলছেন তাঁরা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement