ঝাড়খন্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন। ফাইল ছবি
রাষ্ট্রপতি ভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত করতে বিজেপির প্রয়োজন ছিল ১২ হাজারের কাছাকাছি ভোট। রাষ্ট্রপতি পদে ওড়িশার ভূমিকন্যা তথা জনজাতি সমাজের প্রতিনিধি দ্রৌপদী মুর্মুকে দাঁড় করিয়ে সে রাজ্যের শাসক দল বিজেডির ৩২ হাজার ভোট নিশ্চিত করে ফেলল নরেন্দ্র মোদীর দল। কংগ্রেসের শরিক ঝাড়খণ্ডের শাসক দল জেএমএম-ও রাজ্যের জনজাতি সমাজের কথা মাথায় রেখে দ্রৌপদীকে সমর্থন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফলত একে জনজাতি সমাজের প্রথম প্রতিনিধি, তায় মহিলা— সব মিলিয়ে দ্রৌপদীকে মনোনয়নের যে সিদ্ধান্ত নরেন্দ্র মোদীরা নিয়েছেন, তাতে লড়াই শুরুর আগেই কার্যত হাল ছাড়ার দশা বিরোধী শিবিরের।
গত কাল দুপুরে প্রাক্তন আমলা তথা বাজপেয়ী সরকারের মন্ত্রী যশবন্ত সিন্হাকে রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হিসাবে বেছে নেয় বিরোধী শিবির। সন্ধ্যায় এনডিএ-র রাষ্ট্রপতি পদ প্রার্থী হিসাবে দ্রৌপদী মুর্মুর নাম ঘোষণা করেন বিজেপি সভাপতি জেপি নড্ডা। রামনাথ কোবিন্দের উত্তরসূরি নির্বাচনের প্রশ্নে বিজেডি-র প্রায় তিন শতাংশ ভোট পেতে গোড়া থেকেই তৎপর ছিল দুই শিবির। কিন্তু গত কাল রাতে দ্রৌপদীর নাম ঘোষণার পরেই ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী তথা বিজেডি নেতা নবীন পট্টনায়েক জানিয়ে দেন, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে তাঁর দল ভূমিকন্যাকেই সমর্থন করবে। এ যাত্রায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে মোট ভোটের মূল্য হল ১০,৮৬,৪৩১। সংখ্যাগরিষ্ঠতা থেকে মাত্র ১.৯ শতাংশ ভোট কম ছিল এনডিএ শিবিরের। বিজেডি তাদের ২.৯ শতাংশ ভোটের সমর্থন নিয়ে এগিয়ে আসায় এনডিএ প্রার্থী দ্রৌপদীর জয় এখন কার্যত সময়ের অপেক্ষা।
অন্য দিকে ঝাড়খণ্ডের ভূমিপুত্র হলেন যশবন্ত। বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কর্পূরী ঠাকুরের ব্যক্তিগত সচিব হিসাবে কাজ করায় একদা তাঁর কর্মভূমি ছিল নীতীশ কুমারের রাজ্য। কিন্তু দুই রাজ্যেই শাসক দল স্পষ্ট করে দিয়েছে তারা রাইসিনা হিলসে আগামী দিনে জনজাতি সমাজের মহিলা প্রতিনিধিকে শপথ নিতে দেখতে চাইছে। ঝাড়খণ্ড জনজাতি অধ্যুষিত রাজ্য। রাজ্যের শাসক দল জেএমএম জনজাতি সমর্থিত দল। তা ছাড়া দ্রৌপদীর পিতৃকুল সোরেন গোষ্ঠীর। উভয় পরিবারের মধ্যে হৃদ্যতাও রয়েছে। খোদ হেমন্ত সোরেনের স্ত্রীও ময়ূরভঞ্জ এলাকার। ফলে গোষ্ঠীগত দিক থেকে হেমন্ত সোরেনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে দ্রৌপদীকে সমর্থনের। আজ জেএমএমের এক নেতা বলেন, ‘‘যখন জনজাতিদের স্বার্থে একটি ভাল উদ্যোগ হয়েছে, তখন দলের পক্ষে ভূমিপুত্র হলেও যশবন্তকে সমর্থন করা কঠিন।’’
দ্রৌপদীকে সমর্থন না করলে রাজ্যের জনজাতি ভোট বিজেপির ঘরে চলে যাওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে জেএমএমের অন্দরমহলে। তাই আজ তড়িঘড়ি দ্রৌপদীর সমর্থনে মুখ খুলে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে দেয় জেএমএম। দ্রৌপদীর সমর্থনে সরব হয়েছেন সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী পিএস তামাং-ও। অন্ধ্রপ্রদেশের শাসক দল ওয়াইএসআর কংগ্রেস দলের সমর্থনও যে দ্রৌপদী পাবেন, সে বিষয়ে নিশ্চিত বিজেপি নেতৃত্ব।
বাজপেয়ী মন্ত্রিসভায় নীতীশ কুমারের প্রাক্তন সতীর্থ ছিলেন যশবন্ত। কিন্তু তাঁর দল জেডিইউ এনডিএ পদপ্রার্থীকেই সমর্থন করবে বলে জানিয়েছেন নীতীশ। অতীতে দু’বার রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে এনডিএ-র প্রার্থীর বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছিল নীতীশের দল। কিন্তু এ যাত্রায় কার্যত হারের মুখে দাঁড়িয়ে থাকা যশবন্তকে সমর্থন করে নিজের অবস্থান নতুন করে দুর্বল করতে রাজি নন নীতীশ। তবে যশবন্তের সমর্থনে এগিয়ে এসেছে লালুপ্রসাদ যাদবের দল আরজেডি।
আগামী ২৭ জুন নিজের মনোনয়ন জমা দেবেন যশবন্ত। আজ জারি করা একটি বিবৃতিতে এনডিএ পদপ্রার্থী দ্রৌপদী মুর্মুর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘এই লড়াই ব্যক্তির নয়, আদর্শের লড়াই।’’ গণতন্ত্রকে রক্ষার উদ্দেশ্যে আজ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সমর্থন প্রার্থনা করেন তিনি। রাজনীতির অনেকের মতে, পরাজয় যে ভবিতব্য কার্যত আগেই বুঝে গিয়েছিলেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। সেই কারণেই নিজেরা প্রার্থী দিয়ে মুখ না পুড়িয়ে অন্য দলের মনোনীত প্রার্থীকে সমর্থনের সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।