ঝাড়খণ্ডে নিগৃহীত যুবক।
ভরদুপুরে কয়েকজন ‘নীতি পুলিশের’ চোখরাঙানিতে মাঝরাস্তায় দাঁড়িয়ে ওঠবোস করছেন এক যুবক। এমনকি মাটিতে থুতু ফেলে তা চাটতে বাধ্য করা হচ্ছে তাঁকে! আশপাশে কয়েক জন ট্র্যাফিক পুলিশ ঘোরফেরা করছেন ঠিকই। তবে তাঁরা নীরব দর্শক!
ওঠবোসেই ইতি নয়। যুবকটির চুলের মুঠি ধরেও চলে প্রহার। সঙ্গে ফাউ দেদার গালিগালাজ। শেষে ‘জয় শ্রীরাম’ বলায় মিলল নিস্তার। শুক্রবার ঝাড়খণ্ডের ধানবাদের এই ঘটনার ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে ছড়াতেই সাড়া পড়ে গিয়েছে। অভিযোগের আঙুল কয়েকজন বিজেপি সমর্থকের দিকে। তবে প্রত্যক্ষদর্শীদের একাংশ এও জানাচ্ছেন, বিজেপি সাংসদ পি এন সিংহ এবং দলের বিধায়ক রাজ সিনহা-সহ একাধিক হেভিওয়েট নেতাদের উপস্থিতিতেই নাকি ঘটনাটি ঘটেছে।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর পঞ্জাব সফরের সময় ঘটা নিরাপত্তা-সঙ্কট ঘিরে ধানবাদের গান্ধী চকে বিক্ষোভ দেখাতে জড়ো হয়েছিলেন বিজেপি সমর্থকেরা। সেখানে উপস্থিত ছিলেন ঝাড়খণ্ড বিজেপির একাধিক শীর্ষ স্থানীয় নেতা-মন্ত্রীও। কিন্তু তার তোয়াক্কা না-করে হঠাৎ কেন এই যুবকটির উপর চড়াও হল দলের সমর্থকেরা? কী ভাবেই বা সাংসদ, বিধায়কদের মতো সরকারি প্রতিনিধিদের নাকের ডগায় চলল এ ধরনের মধ্যযুগীয় আচরণ? বার বার উঠছে সেই প্রশ্ন।
বিজেপি কর্মীদের অভিযোগ, ওই বিক্ষোভ সমাবেশের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং ঝাড়খণ্ডের বিজেপি প্রধান দীপক প্রকাশের বিরুদ্ধে অসাংবিধানিক বাক্য প্রয়োগ করেন ওই মুসলিম যুবক। যার পরেই তাঁর দিকে রে রে করে তেড়ে যান এক দল সমর্থক।
ঘটনাটি তাঁর নজরে আসতেই দ্রুত তদন্ত চালিয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পুলিশকে কড়া পদক্ষেপ করার নির্দেশ দিয়েছেন ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন। সঙ্গে তাঁর সতর্কবার্তা, ‘‘শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান পছন্দ করা ঝাড়খণ্ডবাসীদের এই জায়গায় বিরোধ সৃষ্টিকারীরা নিস্তার পাবে না।’’
মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ পেতেই অবশ্য এক মুহূর্তও সময় নষ্ট করতে দেখা যায়নি আইনরক্ষকদের। অভিযুক্তের ভাই রেহানের করা এফআইআর-এর ভিত্তিতে দ্রুত তদন্ত শুরু করে দেয় তারা। ওই ভিডিয়োটি খুটিয়ে দেখে তা থেকে তথ্য সংগ্রহ করে দুই বিজেপি কর্মীর বাড়িতে হানা দিয়ে মোট চার জনকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশের এক শীর্ষকর্তার আশ্বাস, অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা অবধারিত।
ঘটনাটি ঘিরে চরমে পৌঁছেছে রাজনৈতিক চাপান-উতোর। ঘটনাটির তীব্র নিন্দায় সরব কংগ্রেস এবং ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা। তাদের বক্তব্য, রাজ্যে গনপিটুনির বিরুদ্ধে বিল থাকা সত্ত্বেও এ ধরনের ঘটনা বন্ধ করা যাচ্ছে না। প্রতিক্রিয়া দিয়েছে বিজেপিও। দলের নেতা সিপি সিংহ জানান, ঘটনাটি খতিয়ে দেখবে দল। যারা প্রহার চালিয়েছে তারা আদৌ বিজেপির সঙ্গে যুক্ত কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হবে। যদি দেখা যায় তারা দলের সঙ্গে যুক্ত তা হলে তাঁদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সঙ্গে তিনি এ-ও সাফ জানিয়ে দেন যে, ঘটনার পিছনে কোনও বিজেপি নেতার হাত নেই। কোনও নেতা ওই যুবকের উপর চড়াও হওয়ার নির্দেশ দেননি কাউকে।