ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী চম্পাই সোরেন। —ফাইল চিত্র।
মুখ্যমন্ত্রী বদলেছে ঝাড়খণ্ডে। কিন্তু নতুন মুখ্যমন্ত্রী চম্পই সোরেনের সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে কি? রাজ্যের শাসক হিসাবে দায়িত্ব পালনের আগে সোমবার সেই পরীক্ষায় পাশ করতে হবে ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী চম্পইকে। তার আগে শাসক এবং বিরোধী দুই গোষ্ঠীই আপাতত চিন্তিত একটি বিষয় নিয়ে। তা হল— সংখ্যা। সোমবার যার হাতে যত বেশি সংখ্যক বিধায়কের সমর্থন থাকবে সেই গোষ্ঠীই বাজি জিতবে ‘ফ্লোর টেস্ট’-এ। এখন প্রশ্ন, শাসকদল জেএমএমের হাতে গরিষ্ঠতা প্রমাণের ‘সংখ্যা’ রয়েছে কি?
ঝাড়খণ্ড বিধানসভায় আসন সংখ্যা ৮১। আর জাদুসংখ্যা ৪১। অর্থাৎ সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে হলে অন্তত ৪১ জন বিধায়কের সমর্থন দরকার। সে শাসক হোক বা বিরোধী দুই গোষ্ঠীরই। হিসাব বলছে ঝাড়খণ্ডের শাসক জোটের হাতে বিধায়ক রয়েছেন ৪৮ জন। এর মধ্যে শাসক জোটে থাকা তিনটি দল ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা (জেএমএম)-র ২৯, কংগ্রেসের ১৭ এবং রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি)-র ১জন বিধায়ক রয়েছেন। এ ছাড়া এই জোটকে বাইরে থেকে সমর্থন করে সিপিআইএমএল। তাদের বিধায়ক সংখ্যা ১ জন। অন্য দিকে, বিরোধী বিজেপি এবং তার সঙ্গীদের হাতে রয়েছে ২৯টি আসনের বিধায়ক। এর পাশাপাশি তিন জন নির্দল বিধায়কও রয়েছেন। জাদু সংখ্যার হিসাবের সঙ্গে এই হিসাব মেলালে চম্পইয়ের সরকারের আস্থা ভোটে জেতা সহজ হওয়ার কথা। কিন্তু গত এক বছরে এমন সংখ্যার অদল বদল হতে বহুবার দেখা গিয়েছে।
সম্প্রতি পড়শি রাজ্য বিহারে সরকার বদলেছে। তাতে যে বিজেপির ‘ইন্ধন’ ছিল, তা ইতিমধ্যেই স্পষ্ট। এনডিএ জোটের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে নীতীশ কুমারের শপথে উপস্থিত ছিলেন স্বয়ং বিজেপির রাজ্য সভাপতি জেপি নড্ডা। তার কয়েক মাস আগে একই ভাবে বিজেপি বিরোধী জোট সরকার পড়তে দেখা গিয়েছে মহারাষ্ট্রেও। আর কয়েক দিন আগে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়াল দাবি করেছেন, তাঁর সাত জন বিধায়ককে জন প্রতি ২৫ কোটি টাকার বিনিময়ে কেনার চেষ্টা করছে বিজেপি। এই পরিস্থিতিতে ঝাড়খণ্ডেও নতুন মুখ্যমন্ত্রীর সরকারকে সংখ্যা গরিষ্ঠতা প্রমাণ দিতে চ্যালেঞ্জ জানায় বিরোধীরা। সতর্ক জেএমএম অবশ্য আগেই কোনও রকম ঝুঁকি না নিয়ে জোট সরকারের ৪০ জন বিধায়ককে হায়দরাবাদের একটি রিসর্টে পাঠিয়ে দিয়েছিল। সংবাদ সংস্থা এএনআই সূত্রে খবর রবিবার রাতে আস্থা ভোটের কয়েক ঘণ্টা আগে তাঁদের প্রত্যেককেই দু’টি বাসে রাঁচীতে ফেরানো হয়েছে। নিয়ে যাওয়া হয়েছে সার্কিট হাউসে।
তবে এর পরেও জেএমএমের জোট সরকার নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনের গ্রেফতারির পর যখন ঝাড়খণ্ডে নতুন মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিলেন চম্পই সোরেন, তখন জেএমএম জানিয়েছিল চম্পইয়ের সঙ্গে ৪৩ জন বিধায়কের সমর্থন রয়েছে। বাকি পাঁচ বিধায়কের সমর্থন কেন নেই তা তখন স্পষ্ট করেনি জেএমএম। পরে জানা যায়, জেএমএমের এক জন বিধায়ক গুরুতর অসুস্থ, তাই সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণের দিন বিধানসভায় তিনি হাজিরা দিতে পারবেন না। আরও দু’জন জেএমএম বিধায়কও এই আস্থা ভোট এড়িয়ে যেতে পারেন বলে খবর ছিল জেএমএম সূত্রেই। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সোরেনও ইডি হেফাজতে থাকায় ভোটাভুটি অংশ নিতে পারবেন না বলে ধরে নিয়েছিল জেএমএম। বাকি যে একজনকে নিয়ে অনিশ্চয়তা ছিল তিনি লোবিন হেমব্রম। যিনি আস্থা ভোটের ২৪ ঘণ্টা আগে আচমকাই ইঙ্গিত দেন, জেএমএমকে সমর্থন না করার। এই পরিস্থিতিতে ঝাড়খণ্ডের শাসক আর বিরোধী গোষ্ঠীর মধ্যে ক্রমশ কমে আসা ব্যবধান চিন্তার ভাঁজ ফেলে জেএমএম জোটের সমর্থকদের কপালে। কিন্তু রাজনীতির কারবারিরা বলছেন, শেষ মুহূর্তে বড় কোনও গোলমাল না হলে ঝাড়খণ্ডের সংখ্যা গরিষ্ঠতার পরীক্ষা ভাল ভাবেই উতরে যাবে জেএমএম জোট সরকার।
প্রথমত, ইতিমধ্যেই ঝাড়খণ্ড আদালত হেমন্তকে এই ফ্লোর টেস্টে অংশ নেওয়ার অনুমতি দিয়ে দিয়েছে। অন্য একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, বিদ্রোহী বিধায়ক লোবিনও শর্ত সাপেক্ষে জেএমএমকেই সমর্থন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সব ঠিক এ ছাড়া পদ্মের নাগালের বাইরে থাকা ৪০ জন বিধায়ক তো রয়েছেনই। চম্পাই ছাড়া জেএমএমের শীর্ষ স্থানীয় দু’একজন বিধায়কও রয়েছেন রাঁচিতেই। জেএমএমের দাবি, সব ঠিক থাকলে ৪৫-৪৬ জন বিধায়কের সমর্থন নিয়ে সোমবার চম্পই সরকার আস্থা ভোটের অগ্নিপরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবে। কারণ তাদের ‘গঠবন্ধন’ আলগা নয়।