এই পিতলের বাক্সে ভরেই সরানো রত্নভাণ্ডারের সমস্ত সম্পদ। ছবি: পিটিআই।
চার দশক বাদে পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের রত্নভান্ডার খোলাই নয় এ বার তার পরের ধাপের পথেও এক কদম এগোল উৎকল প্রশাসন। রত্নভান্ডার খোলার পরে কী হবে? তা ঠিক করার জন্য মঙ্গলবারই বৈঠকে বসে হাই কোর্ট নিযুক্ত রত্নভান্ডার পরিদর্শন সংক্রান্ত কমিটি। তাতে জগন্নাথদেব সব আচার-অনুষ্ঠান মিটিয়ে শ্রী মন্দিরের রত্নবেদিতে ফেরার আগেই রত্নভান্ডারের ভিতর ভান্ডারের সম্পদ সরানোর দিন ক্ষণও চূড়ান্ত করে
ফেলা হয়েছে।
পরিদর্শন কমিটির প্রধান প্রাক্তন বিচারপতি বিশ্বনাথ রথ এ দিন জানান, আগামী ১৮ জুলাই (বৃহস্পতিবার), শ্রী মন্দির প্রাঙ্গণে অধরপানার অনুষ্ঠানের দিনই ফের খোলা হবে ভিতর ভান্ডার। এ বার ভিতর ভান্ডারের সব সম্পদও নবনির্মিত সিন্দুকগুলিতে সরিয়ে ফেলা হবে। বিচারপতি বলেন, ‘‘গণনা করে দেখা হয়েছে, ১৮ জুলাই শুভ মুহূর্ত চলবে সকাল ৯টা ৫১ মিনিট থেকে দুপুর সওয়া ১২টা পর্যন্ত। এর মধ্যেই ভিতর ভান্ডারের সব সামগ্রী সরানো হবে। তার ভিডিয়োগ্রাফিও করা হবে।’’ সে দিনই ভারতীয় পুরাতাত্ত্বিক সর্বেক্ষণের (এএসআই) বিশেষজ্ঞদের দিয়ে ভিতর ভান্ডারের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করানোর পরিকল্পনাও রয়েছে বলে বিচারপতি জানান।
জগন্নাথ মন্দিরের স্থাপত্য অটুট রাখার স্বার্থেই গর্ভগৃহ লাগোয়া রত্নভান্ডারের ঢালাও সংস্কার জরুরি বলে দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছেন দেশের তাবড় স্থাপত্যবিদেরা। সেই জন্যই ভিতর ভান্ডার ও বাহির ভান্ডার খালি করা হচ্ছে। ১৯৭৮ সালের পরে এ বারই ভিতর ভান্ডারের সামগ্রী খতিয়ে দেখা হবে বলে জানাচ্ছেন ওড়িশা সরকারের কর্তাব্যক্তিরা। সেই সঙ্গে সব কিছুর ডিজিটাল ম্যাপিংও করার কথা। তবে তা পরে হবে বলে ঠিক হয়েছে। শ্রী মন্দিরের বাহির ভান্ডারের সামগ্রী ইতিমধ্যে ঠাকুরের ফুল রাখার ঘর ‘ফুলঘর’ এবং ফুলের সাজ রাখার ঘর ‘চাঙ্গাড়ায়’ রাখা হয়েছে। মন্দির সূত্রের খবর, ঠিক হয়েছে ভিতর ভান্ডারের সামগ্রী রত্নবেদির কাছেই ‘খটসাজ ঘরে’ (যেখানে জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রার পালঙ্ক সাজ থাকে) রাখা হবে। ভিতর ভান্ডারের পুরনো সিন্দুক বা তোরঙ্গ ভাঙার সম্ভাবনা আছে বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্ট আধিকারিকেরা। তারও ভিডিয়ো করা হবে।
রহস্যঘন ভিতর ভান্ডারের সুপ্রাচীন সিন্দুক, তোরঙ্গ সবই পুরীর মন্দিরের মিউজিয়ামে রাখার পরিকল্পনা করা হয়েছে। একই সঙ্গে ২০১৮ সালে বিজেডি সরকারের আমলে রত্নমন্দিরের চাবি কী করে হারাল, তা-ও খতিয়ে দেখতে নতুন করে তদন্ত কমিটি গড়ার কথা জানিয়েছে ওড়িশা সরকার। রাজ্যের আইনমন্ত্রী পৃথ্বীরাজ হরিচন্দন এ দিনও বলেছেন, ‘‘প্রভু জগন্নাথের রত্নরাজিতে কেউ হাত দিলে কিছুতেই পার পাবে না।’’ ভিতর ভান্ডারের দরজা খোলার পর থেকেই তাই জগন্নাথের রত্নভান্ডার অধ্যায়ে নতুন করে ঘটনার ঘনঘটা শুরু। গুণ্ডিচা মন্দির থেকে শ্রীমন্দিরের সিংহদ্বারে রত্নভান্ডারের মালিক জগন্নাথদেব এখন রথারূঢ়। সোনাবেশ ও অধরপানার পরে নীলাদ্রি বিজের অনুষ্ঠান শেষে শুক্রবার, ১৯ জুলাই রত্নবেদিতে ফিরবেন তিনি।