সংবাদমাধ্যমে ভেঙে পড়েন ওই পড়ুয়া।ছবি: ভিডিয়ো গ্র্যাব।
লাঠির আঘাত এড়াতে দেওয়ালে সেঁধিয়ে গিয়েছেন কয়েক জন। বই-খাতা ফেলে রেখে টেবিলের নীচে মাথা গুঁজেছেন কেউ কেউ। রবিবার রাতে দিল্লির জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশি তাণ্ডবের এই ভিডিয়ো এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল। তা নিয়ে দোষারোপ, পাল্টা দোষারোপের পালাও চলছে। তার মধ্যেই সংবাদমাধ্যমের সামনে ভেঙে পড়লেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক পড়ুয়া। জানালেন, দেশের কোথাওই আর নিরাপদ বোধ করছেন না তাঁরা।
গতকালের ঘটনা নিয়ে সোমবার দিনভর কাটাছেঁড়া হয়েছে দেশজুড়ে। এক দিকে পড়ুয়াদের উপর যখন হাঙ্গামা বাধানোর অভিযোগ তুলেছে দিল্লি পুলিশ, সেইসময় দিল্লি পুলিশের বিরুদ্ধেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকে ভাঙচুর এবং তাণ্ডব চালানোর অভিযোগ তুলেছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তা নিয়ে টানাপড়েনের মধ্যেই এ দিন সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন পড়ুয়ারা। সেখানে কথা বলার সময়েই ভেঙে পড়েন পড়ুয়াদের মধ্যে একজন। কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, ‘‘ছাত্রছাত্রীদের জন্য দিল্লি সবচেয়ে নিরাপদ বলে ভেবেছিলাম। কিন্তু কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যেই এই ঘটনা। ভেবেছিলাম, আর কোথাও না হোক, বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে অন্তত নিরাপদ থাকব। এখানে আমাদের কিছু হবে না। কিন্তু গতকালের ঘটনার পর রাতভর কেঁদেছি আমরা। এটা কী ঘটছে?’’
এই মুহূর্তে দেশের কোথাওই তিনি নিরাপদ বোধ করছেন না বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, ‘‘দেশের কোথাও নিরাপদ বোধ করছি না আমি। কোথায় যে আমাকে পিটিয়ে মারা হবে না, তা-ই বুঝে উঠতে পারছি না। কাল আমার বন্ধুরা আদৌ ভারতীয় থাকবে কি না, তা-ও জানি না।’’
পড়শি দেশ থেকে বেছে বেছে অমুসলিমদের নাগরিকত্ব দেওয়া নিয়ে কেন্দ্রীয় আইনের বিরুদ্ধে সপ্তাহখানেক ধরেই দেশের বিভিন্ন অংশে বিক্ষোভ চলছে। শনিবার তাতে শামিল হন জামিয়ার পড়ুয়ারা। তা নিয়ে গতকাল বিতর্কিত মন্তব্যও করে বসেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি বলেন, পোশাক দেখেই বিক্ষোভকারীদের চেনা যাচ্ছে। কিন্তু ওই পড়ুয়া বলেন, ‘‘আমি মুসলিম নই। তা-ও প্রথম দিন থেকে আন্দোলনের প্রথম সারিতে রয়েছি। কেন? কারণ, ভাল কাজের জন্য না দাঁড়ালে শিক্ষার কোনও মূল্য থাকে না।’’
জামিয়ার ঘটনায় এ দিন বিরোধী শিবিরেও সমালোচনার ঝড় উঠেছে। তা নিয়ে দিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠকও করেন সীতারাম ইয়েচুরি, কপিল সিব্বলের মতো নেতারা। বিনা অনুমতিতে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে পুলিশ ঢোকার তীব্র প্রতিবাদ করেন তাঁরা।