অর্থনীতি নিয়ে চিন্তার কোনও কারণ নেই— আজ লোকসভায় ভরসা দিলেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি।
তাঁর মন্ত্রকের দেওয়া পরিসংখ্যান অবশ্য ভরসা দিচ্ছে না। চলতি অর্থবর্ষের জন্য যে ঘাটতির লক্ষ্য ছিল, প্রথম আট মাসেই ঘাটতি তার থেকে ১২ শতাংশ বেশি। ফলে ২০১৭-’১৮ সালের রাজকোষ ঘাটতি ৩.২ শতাংশে বেঁধে রাখার কোনও প্রশ্ন নেই বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, বাজেটে ঘাটতির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫.৮০ লক্ষ কোটি টাকা। কিন্তু এপ্রিল থেকে নভেম্বরেই ঘাটতি পৌঁছেছে ৬.১২ লক্ষ কোটি টাকায়। এই লাগামছাড়া ঘাটতি সামলাতেই দু’দিন আগে ৫০ হাজার কোটি টাকা বাড়তি ধার করার কথা ঘোষণা করেছে অর্থ মন্ত্রক। স্টেট ব্যাঙ্ক, কেয়ার রেটিংস-এর অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এর পরেও জেটলির গত বাজেট অনুযায়ী জিডিপির ৩.২%-এ রাজকোষ ঘাটতি বেঁধে রাখা অসম্ভব।
তবে জেটলি বলেছেন, অর্থনীতি নিয়ে চিন্তার কোনও কারণ নেই।
সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, শুধু রাজকোষ ঘাটতি নয়, এ বছর রাজস্ব ঘাটতির লক্ষ্যও পূরণ করা যাবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। কারণ এপ্রিল থেকে নভেম্বরেই রাজস্ব ঘাটতি দাঁড়িয়েছে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫২ শতাংশ বেশি। ফলে রাজস্ব ঘাটতিকে জিডিপি ১.৯৯%-এ নামিয়ে আনাও মুশকিল, বিশেষ করে ক্রমশ বেড়ে চলা সরকারি ঋণের ওপর সুদ মেটাতে রাজস্ব খাতে খরচ যখন বাড়ছে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, ২০১৮-’১৯ সালে, ভোটের আগের বছরে, ঘাটতিতে রাশ টানা আরও মুশকিল হবে। উল্টে তা বেড়ে জিডিপির ৩.৭%-এ পৌঁছতে পারে। আজ রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর উর্জিত পটেল, সেবি, আইআরডিএ-র মতো সংস্থার চেয়ারম্যানদের নিয়ে জেটলি বাজেটের আগে ‘ফিনান্সিয়াল স্টেবিলিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিল’-এর বৈঠক করেছেন। সেখানেও রাজকোষ ঘাটতিই প্রধান আলোচ্য বিষয় ছিল।
কিন্তু জেটলি সংসদে বলেছেন, অর্থনীতি নিয়ে চিন্তার কারণ নেই।
তাঁর যুক্তি, অর্থনীতির খুব খারাপ অবস্থা হলেই ঘাটতি বাড়িয়ে খরচ করতে হয়। গত তিন বছর ধরেই জিডিপি বৃদ্ধির হারে ভারত বিশ্বসেরা। ২০১৬-’১৭-য় বৃদ্ধির হার কিছুটা কমে এসেছিল। তবুও ভারত দ্বিতীয় স্থানে। উপরন্তু, ফের বৃদ্ধির হার বাড়ছে। কারখানা উৎপাদনে বৃদ্ধি বেশ ভাল। ফলে ঘাটতি বাড়ানোর প্রয়োজন নেই।
অর্থনীতির হাল*
• সরকারি আয়: ৮.৬৬ লক্ষ কোটি টাকা (বাজেটের ৫৪.২%)
• কর থেকে কেন্দ্রের আয়: ৬.৯৯ লক্ষ কোটি টাকা
• আয়করে ঘাটতি: ৩.৩ লক্ষ কোটি টাকা
• পরোক্ষ করে ঘাটতি: ১.৯ লক্ষ কোটি টাকা
• মোট ব্যয়: ১৪.৭৮ লক্ষ কোটি টাকা (বাজেটের ৬৯%)
• রাজস্ব খাতে ব্যয়: ১২.৯৪ লক্ষ কোটি টাকা
• এর মধ্যে পুরনো ঋণে সুদ মেটাতে ব্যয়: ৩.০৯ লক্ষ কোটি টাকা
• ভর্তুকি খাতে ব্যয়: ২.০৬ লক্ষ কোটি টাকা
• মূলধনী খাতে ব্যয়: ১.৮৪ লক্ষ কোটি টাকা
*এপ্রিল থেকে নভেম্বর, ২০১৭
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কর আদায়ের হিসেবও উদ্বেগের কারণ। সরকার বলেছিল, নোট বাতিলের ফলে আয়কর ও শিল্প থেকে কর আদায় বাড়বে। বাড়বে জিএসটি-র ফলেও। সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, প্রত্যক্ষ কর আদায় লক্ষ্যমাত্রার থেকে এখনও ৩.৩ লক্ষ কোটি টাকা কম। পরোক্ষ কর থেকেও আয় এখনও ১.৯ লক্ষ কোটি টাকা কম। সার্বিক ভাবে, বছরের আট মাস পেরিয়ে গেলেও আয়ের লক্ষ্যের মাত্র ৫৪% ছুঁতে পেরেছে মোদী সরকার। অথচ বাজেটের হিসেবের প্রায় ৬৯% খরচ হয়ে গিয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে নোট বাতিলে লাভ কী হল?
জেটলি জানিয়েছেন, নোট বাতিলের ফলে চলতি বছরের শুরুতে বৃদ্ধির হার কমে আসেনি। জিএসটি চালুর জন্য কিছুটা বৃদ্ধির হার কমে এসেছিল। ফের তা ঘুরে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু ঘাটতি বাড়লে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক যদি সুদের হার না কমায়, তা হলে নতুন লগ্নি কী ভাবে হবে, সেই প্রশ্ন উঠেছে।
অর্থমন্ত্রীর ভাষণে উত্তর মেলেনি, তবে তিনি ভরসা দিয়েছেন, অর্থনীতি নিয়ে চিন্তার কোনও কারণ নেই।