ঐতিহাসিক: আইনস্টাইনের মূর্তির পাশে সেই আপেল গাছ। ছবি আইইউকার সৌজন্য।
ঐতিহাসিক এক আপেল গাছের বংশধরেরা ক’বছর আগেই ছিল পুণেতে। সেখানকার ইন্টার ইউনিভার্সিটি সেন্টার ফর অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিক্স (আইইউকা)চত্বরে ছিল তারা। গাছগুলো বাঁচেনি। হার না-মেনে ফের সেই গাছের চারা বসানোর তোড়জোড় চালাচ্ছেন আইইউকা কর্তৃপক্ষ।
কারণ, এরা তো সত্যিই যে-সে আপেল গাছ নয়। এদের ‘পূর্বপুরুষের’ বাস স্যর আইজ্যাক নিউটনের বাগানে! হ্যাঁ, যে আপেল গাছের নীচে বসে মাধ্যাকর্ষণ তত্ত্ব আবিষ্কার করেছিলেন নিউটন, তারই সন্তানসন্ততি এরা।
আইইউকা-র অধিকর্তা সোমক রায়চৌধুরী জানালেন, এ বার চেষ্টা চলছে শিমলা থেকে আপেলচারা আনানোর। তাদের সঙ্গে নিউটনের আদি বাড়ি, ইংল্যান্ডের লিঙ্কনশায়ারের ‘উলসথর্প ম্যানর’-এর বাগানের সেই আপেল গাছটি থেকে পাওয়া চারার ‘গ্রাফটিং’ করানোর পরিকল্পনা রয়েছে। পুণের গরম আবহাওয়ার জন্যই আগের গাছগুলোকে বাঁচানো যায়নি। তাই এই পন্থা।
সোমকবাবু জানালেন, নিউটনকে মানুষ করেছিলেন তাঁর মাসি। নিউটন তাঁর জীবনীকারকে জানিয়েছিলেন, ১৬৬৫ সালে কেমব্রিজে যখন তিনি পড়েন, তখন প্লেগ শুরু হয়। প্লেগের হাত থেকে বাঁচতে তিনি উলসথর্পে মাসির বাড়ি যান। সেখানে বাগানে বসে পড়াশোনা করতেন। বয়স তখন ২২। এক দিন বাগানের আপেল গাছ থেকে আপেল পড়া দেখেই মাধ্যাকর্ষণ নিয়ে ভাবনা। ক্যালকুলাসও আবিষ্কার করেন সেই সময়ে।
সেই গাছটির বংশধরেরাই ছড়িয়ে পড়ে নানা দেশে। ‘নিউটনের আপেলগাছ’ বলেই গবেষণার বহু কেন্দ্রে বেড়ে উঠেছে তারা। ফলও দিয়েছে। নব্বইয়ের দশকের গোড়ায় আইইউকা-র তৎকালীন অধিকর্তা জয়ন্ত বিষ্ণু নারলিকর জানতে পারেন, এমন আপেল গাছ রয়েছে অস্ট্রেলিয়ার ‘টেলিস্কোপ ন্যাশনাল ফেসিলিটি’-তে। আরও জানা যায়, কেমব্রিজের নিউটন ইনস্টিটিউটে রয়েছে ‘নিউটনের গাছ’-এর এক বংশধর। সেখান থেকেই ১৯৯৪ সালে আইইউকা-তে গাছের চারা আনাতে উদ্যোগী হন তিনি। কিন্তু এয়ারমেলে সেই গাছ আসতে আসতে শুকিয়ে গিয়েছিল বার কয়েক। প্রথম তাজা চারাগাছ এসে পৌঁছয় ১৯৯৭ সালে। পরপর তিনটি চারা আসে। একটি পোঁতা হয় আইইউকা-সংলগ্ন পাবলিক সায়েন্স পার্কে। অন্য দু’টি বসে আইইউকা-র বাগানে। একটি নিউটনের মূর্তির পাশে ছিল। একটি অ্যালবার্ট আইনস্টাইনের মূর্তির পিছনে।
নিউটনের মূর্তির পাশে থাকা গাছটিতে সরাসরি রোদ পড়ত। কিছু দিন পরে মারা যায় সেটি। আইনস্টাইনের মূর্তি লাগোয়া গাছটি দক্ষিণ দিকে থাকায় রোদের আঁচ সরাসরি পায়নি। তাই বেশ বড় হয়, ফলও দেয়। সোমকবাবু সেই সময়ে আইইউকা-র গবেষক। সোমকবাবুর স্ত্রী অ্যালেইকা ম্যাকঅ্যালিস্টার আমেরিকার ভারমন্টের মানুষ। আপেল গাছের সঙ্গে ছোট থেকেই পরিচিতি তাঁর। তিনি গাছগুলির দেখভাল করতেন।
শেষ গাছটি মারা যায় ২০০৭ -এ। সোমকবাবু বলেন, ‘‘গাছগুলোর একটু ঠান্ডা লাগা দরকার। কিন্তু পুণেতে গরম বেড়েই চলেছে। এখন ৪২ ডিগ্রি। এতে আপেল গাছ বাঁচানো মুশকিল।’’ বিলেতের গাছে ভারতীয়ত্বের ছোঁয়া দিয়েই তাই চলছে নতুন চেষ্টা।