অজিত ডোভাল ফাইল চিত্র।
নিপুণ পরিকল্পনা, ঝটিতি সেনা সন্নিবেশ, এমনকি, দখলদার চিনা ফৌজকে বিভ্রান্ত করতে জাল পতাকার ব্যবহার! গত অগস্টের শেষপর্বে লাদাখের প্যাংগং হ্রদের দক্ষিণে ভারতীয় ফৌজের নিরঙ্কুশ আধিপত্য কায়েমের পিছনে ছিল এমনই অভিনব কৌশল। সরকারের একটি সূত্র জানাচ্ছে, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের মাথাতেই প্রথম এসেছিল সেনা অভিযানের সেই সুবিন্যস্ত ছক। এই সূত্রের দাবি, ডোভালের ওই পরিকল্পনার ফলেই প্যাংগং লেকের উত্তর এবং দক্ষিণ তীরে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলএসি)-র ওপারে ফিরে যাওয়ার জন্য সমঝোতা করতে বাধ্য হয় চিনা সেনা।
ওই সূত্র জানাচ্ছে, গত মে মাসের গোড়ায় প্যাংগং হ্রদের উত্তরে ফিঙ্গার-৮ এর কাছে এলএসি পেরিয়ে কয়েক কিলোমিটার ঢুকে এসেছিল চিনের পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ)। দক্ষিণ এবং পূর্ব লাদাখের আরও কিছু এলাকায় এমন ঘটনা ঘটেছিল। ১৫ জুন গলওয়ানের পেট্রোলিং পয়েন্ট-১৪-য় রক্তাক্ত সংঘর্ষের পরে চিনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই-র সঙ্গে ডোভালের আলোচনা হয়। এরপর এএসসি-র কিছু অংশে ‘মুখোমুখি অবস্থান থেকে সেনা পিছনো’ (ডিসএনগেজমেন্ট) এবং ‘সেনা সংখ্যা কমানো’ (ডিএসক্যালেশন)-র প্রক্রিয়া আংশিক ভাবে কার্যকর হলেও প্যাংগং-জট কাটেনি। এর পরেই বেজিংয়ের সঙ্গে দর কষাকষির পরিস্থিতি তৈরির জন্য প্যাংগংয়ের দক্ষিণে কৈলাস রেঞ্জ জুড়ে ঝটিতি সেনা অভিযানের প্রস্তাব দেন ডোভাল।
জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার সঙ্গে চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ জেনারেল বিপিন রাওয়ত এবং সেনাপ্রধান জেনারেল মনোজমুকুন্দ নরবণের ধারাবাহিক বৈঠকে সেনা অভিযানের রূপরেখা তৈরি হয়েছিল বলে ওই সূত্র জানিয়েছে। ভারতীয় সেনার তৎপরতার প্রেক্ষিতে চিনা বিমানবাহিনীর সম্ভাব্য হানা ঠেকানোর জন্য লাদাখ সীমান্তের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছিল বায়ুসেনা প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল ভাদৌরিয়ার সঙ্গেও। এমনকি, সমুদ্রপথেও সম্ভাব্য চিনা আগ্রাসনের মোকাবিলায় ভারতীয় নৌসেনার পশ্চিম এবং পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের যুদ্ধজাহাজ এবং বিমানবহর প্রস্তুত ছিল সে সময়।
প্রাথমিক পদক্ষেপে প্যাংগংয়ের দক্ষিণে চিনা প্রত্যাঘাতের জবাব দিতে টি-৯০ এবং টি-৭২এম১ ট্যাঙ্ক মোতায়েন করা হয় । পাশাপাশি, কামান, ট্যাঙ্ক বিধ্বংসী গাইডেড ক্ষেপণাস্ত্র-সহ আনুষঙ্গিক অস্ত্রশস্ত্র ও পর্যাপ্ত বাহিনীও চুশুল, থাকুং ও আশপাশের এলাকায় মজুত হয়। এরপর ২৯ অগস্ট থাকুং সেনাঘাঁটির অদূরে হেলমেট এলাকা থেকে রেচিন লা পর্যন্ত কয়েক কিলোমিটার দীর্ঘ এলাকায় উঁচু জায়গাগুলিতে অবস্থান নেওয়া শুরু করেন ভারতীয় সেনার পানাগড়-স্থিত মাউন্টেন স্ট্রাইক কোর (১৭ নম্বর কোর) এবং স্পেশাল ফ্রন্টিয়ার ফোর্স (এসএফএফ)।
ওই অভিযানের ফলে সামরিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ কালা টপ, মুকপরী, রেজিংলা, আকিলা চলে আসে ভারতীয় সেনার নাগালে। ফলে প্যাংগংয়ের দক্ষিণে স্পাংগুর হ্রদ লাগোয়া উপত্যকায় মোতায়েন চিনা বাহিনীও চলে আসে ভারতীয় সেনার নিশানায়। চিনের সহ্গে আলোচনার টেবিলে দর কষাকষির ক্ষেত্রে যা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে বলে সেনার দাবি। সম্প্রতি জেনারেল নরবণেও বলেছেন, ‘‘লাদাখ পরিস্থিতির মোকাবিলায় জাতীয় নিরাপত্তার পরামর্শ খুবই ফলপ্রসূ হয়েছে।’’