২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গিয়েছে, বিবিসি অফিসে চলছে ‘সমীক্ষা’। ছবি: রয়টার্স।
দিল্লি ও মুম্বইয়ের বিবিসির দফতরে ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলছে আয়কর দফতরের ‘সমীক্ষা’। সংবাদ সংস্থাটির আর্থিক বিষয়ক ইলেকট্রনিক এবং কাগুজে নথির প্রতিলিপি করা হচ্ছে বলে খবর। করফাঁকি মামলা নিয়ে তদন্তে নেমে বিবিসির অফিসে ‘সমীক্ষা’ চালাচ্ছে আয়কর দফতর। প্রধানমন্ত্রী মোদীকে নিয়ে তৈরি করা বিবিসির তথ্যচিত্রকে ভারত সরকারের নিষিদ্ধ করার প্রেক্ষিতে এই আয়কর অভিযান ঘিরে ঘরে-বাইরে প্রশ্নের মুখে পড়ছে কেন্দ্রীয় সরকার।
মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টা। বিবিসির দিল্লির দফতরে হাজির হন অন্তত ১৫ জন আয়কর অধিকর্তা। শুরু হয় ‘সমীক্ষা’র কাজ। রাত পেরিয়ে পর দিন সকালেও সেই ‘সমীক্ষা’ শেষ হয়নি। সংবাদ সংস্থা পিটিআই সূত্রে খবর, আয়কর দফতরের আধিকারিকরা বিবিসির আর্থিক বিষয়ক বিভাগের পদাধিকারীদের সঙ্গে কথা বলেন। কথা হয় অন্যান্য কয়েকটি বিভাগের সংবাদকর্মী এবং সাংবাদিকদের সঙ্গেও। তবে মঙ্গলবার রাতে সাংবাদিক ও সংবাদকর্মীদের বাড়ি ফেরার অনুমতি দিয়েছিল আয়কর দফতর। তবে তার আগে অফিসের কয়েকটি কম্পিউটার এবং মোবাইল ফোনকে ক্লোন করে নেন আয়কর কর্তারা।
তবে ‘সমীক্ষা’ করতে গিয়ে রাত কাবার হয়ে গেলেও কেন এই ‘সমীক্ষা’ তা নিয়ে এখনও পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক কোনও বক্তব্য জানায়নি আয়কর দফতর। সব খবরই আসছে সূত্র মারফত। ঠিক যেমন, মঙ্গলবার এই সূত্রের মাধ্যমেই জানা যায়, করফাঁকি সংক্রান্ত মামলার তদন্ত করতেই বিবিসির অফিসে ‘সমীক্ষা’য় গিয়েছে আয়কর দফতর। কিন্তু তা নিয়ে বিশদে কিছুই জানা যায়নি। অন্য দিকে আয়কর দফতর যে সঠিক পথেই এগোচ্ছে তা দাবি করে মঙ্গলবারই সাংবাদিক বৈঠক করে ফেলেছে ক্ষমতাসীন বিজেপি। ফলে বিভ্রান্তি ক্রমশ বাড়ছে। আয়কর দফতরের তরফে এ নিয়ে এখনও কোনও উচ্চবাচ্য করা না হলেও মঙ্গলবার বিবিসি টুইট করে জানিয়েছে, তারা ভারতের আয়কর বিভাগের সঙ্গে সমস্ত রকম সহযোগিতা করছেন এবং করবেন।
বিবিসির অফিসে আয়কর দফতরের ‘সমীক্ষা’ নিয়ে ইতিমধ্যেই সারা দেশে তোলপাড় পড়ে গিয়েছে। বিরোধীদের অভিযোগ, মোদীকে নিয়ে সমালোচনামূলক তথ্যচিত্র তৈরি করারই মাসুল দিতে হচ্ছে ইংল্যান্ডের জাতীয় সংবাদমাধ্যমকে। যদিও বিজেপির দাবি, বিবিসি বিশ্বের সবচেয়ে বড় দুর্নীতিগ্রস্ত সংস্থা।
তবে এই প্রথম নয়, এর আগে একাধিক সংবাদমাধ্যমের কার্যালয়ে কেন্দ্রীয় এজেন্সির অভিযান চলেছে। অভিযান চলাকালীন বিপুল অঙ্কের আর্থিক বেনিয়মের অভিযোগ ভেসে উঠেছে সূত্রের মাধ্যমেই। বিরোধীদের দাবি, আজ পর্যন্ত একটি অভিযোগও প্রমাণিত হয়নি। বিরোধীদের আরও অভিযোগ, তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে যে সব সংবাদমাধ্যমের দফতরে কেন্দ্রীয় এজেন্সির অভিযান হয়েছে, তারা সকলেই কেন্দ্রীয় সরকারের সমালোচনামূলক সংবাদ পরিবেশন করেছিল। তা হলে কি সমালোচনার মুখ বন্ধ করতেই এই তৎপরতা? মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন ২০০২-এ গুজরাত হিংসার সময় কী ভূমিকা পালন করেছিলেন নরেন্দ্র মোদী, দুই পর্বের তথ্যচিত্রে তা তুলে ধরে কি বিবিসিও সেই তালিকায় নিজের নাম তুলে ফেলল? প্রশ্ন বিরোধীদের।