Congress

বিরোধী জোটে নেতৃত্বের রাশ হারাচ্ছে কংগ্রেস

বিরোধী সূত্রের বক্তব্য, গত কয়েক বছরে গোটা দেশে বিজেপি-বিরোধিতায় কংগ্রেসের তুলনায় অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছে আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলগুলি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০২১ ০৭:০০
Share:

ফাইল চিত্র।

কংগ্রেসকে ছাড়া বিজেপি-বিরোধী জোট অবাস্তব— মোটের উপর এ ব্যাপারে একমত এনসিপি নেতা শরদ পওয়ার থেকে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সম্প্রতি পওয়ারের বাড়ি বিরোধী রাষ্ট্রমঞ্চের প্রথম বৈঠকে কংগ্রেসের বড় কোনও নেতাকে আমন্ত্রণ জানানো না-হলেও, স্পষ্ট করে দেওযা হয়েছে, কংগ্রেস-বিরোধী নয় ওই মঞ্চ।

Advertisement

তবে প্রশ্ন, কংগ্রেস থাকলেও ২০২৪-এর লোকসভা ভোটে বিরোধী জোটের নেতৃত্বের রাশ কি তার হাতে থাকবে? নাকি বাইরে থেকে সমর্থন করবে সনিয়া-রাহুলের দল?

বিরোধী সূত্রের বক্তব্য, গত কয়েক বছরে গোটা দেশে বিজেপি-বিরোধিতায় কংগ্রেসের তুলনায় অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছে আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলগুলি। বাংলায় তৃণমূল, তামিলনাড়ুতে ডিএমকে, কেরলে বাম, মহারাষ্ট্রে এনসিপি-শিবসেনা সরাসরি লড়াই করে বিজেপিকে পরাজিত করেছে। বিহারে দুর্দান্ত লড়াই দিয়েছে আরজেডি। উত্তরপ্রদেশের মতো গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যে সদ্যসমাপ্ত পঞ্চায়েত ভোটে ভাল ফল এসপি-র। এক আঞ্চলিক নেতার কথায়, মহারাষ্ট্র, ঝাড়খণ্ড, তামিলনাড়ু এবং বিহারে বিজেপি-বিরোধী ফ্রন্ট বা সরকার এবং পাশাপাশি কংগ্রেসের একা লড়াইয়ের ফলাফলে একটা ছবি স্পষ্ট। জাতীয়স্তরে বিজেপি-বিরোধী কোনও জোট তৈরি হলে কংগ্রেস তার অংশ থাকতে পারে মাত্র। নেতৃত্বে নয়।

Advertisement

বিজেপি-বিরোধিতার কেন্দ্র থেকে কংগ্রেস ধীরে ধীরে সরে গিয়েছে বলেই মনে করছেন
আঞ্চলিক নেতারা। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে যে ৫২টি আসন কংগ্রেস পেয়েছে, তার মধ্যে ৪৬টি এসেছে অ-বিজেপি প্রতিযোগীর সঙ্গে লড়াই করে। সেগুলি হিন্দি ভাষাভাষী রাজ্য থেকেও নয়। ১৫টি এসেছে কেরল থেকে। তামিলনাড়ু এবং পঞ্জাব থেকে ৮টি করে। তেলঙ্গনা এবং অসম থেকে ৩টি করে। বাংলা থেকে দু’টি। এ ছাড়া মেঘালয়, মহারাষ্ট্র, কর্নাটক, ওড়িশা, গোয়া, পুদুচেরি, এবং আন্দামান ও নিকোবর থেকে ১টি করে। মাত্র ৬টি আসন কংগ্রেস পেয়েছে সরাসরি হিন্দি বলয়ে বিজেপির সঙ্গে লড়াই করে। হিন্দি ভাষাভাষী রাজ্য এবং গুজরাতে কংগ্রেসের সাফল্য নেই। উত্তরপ্রদেশে ৮০টির মধ্যে ১টি, বিহারে ৪০টির মধ্যে ১টি, মধ্যপ্রদেশে ২৮টির মধ্যে ১টি, রাজস্থান এবং গুজরাতে একটিও আসন পায়নি কংগ্রেস। হরিয়ানা, দিল্লি, হিমাচল, উত্তরাখণ্ডেও খালি হাত। কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে যাওয়া তিনটি দলের (তৃণমূল, এনসিপি, ওয়াইএসআর কংগ্রেস) সম্মিলিত আসনের তুলনায় কংগ্রেসের আসন মাত্র ৩টি বেশি।

এই পরিপ্রেক্ষিতে শরদ পওয়ার-মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জুটিকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে আগামী দিনের বিজেপি-বিরোধিতার প্রশ্নে। মনে করা হচ্ছে, কংগ্রেস নেতৃত্বে না থাকলে তাদের সঙ্গে সম্পর্ক তিক্ত এমন দলগুলিকেও (ওয়াইএসআর কংগ্রেস, টি আরএস, আপ, অকালি) সঙ্গে রাখা যাবে ।

এটা ঘটনা, ২০০৪-এ সরাসরি বিজেপি-র সঙ্গে টক্কর দিয়ে বাজপেয়ী সরকারকে গদিচ্যূত করেছিলেন সনিয়া। কিন্তু আজ তাঁর সেই উদ্যম, শারীরিক ক্ষমতা নেই বলেই মনে করছে বিরোধী অন্য রাজনৈতিক দলগুলি। রাহুল গাঁধীর ব্যাটে এমন রান নেই যে তিনি আলাদা আলাদা ভাবে মমতা, স্ট্যালিন অথবা উদ্ধব ঠাকরের সঙ্গে টক্কর দিয়ে বিরোধী নেতার আসনে বসতে পারেন। রাজনৈতিক সূত্রের দাবি, বিজেপিকে হটাতে কংগ্রেসকে প্রয়োজন। কিন্তু নেতৃত্বের রাশটি থাকবে অন্য কারও হাতে। তৃণমূলের বক্তব্য, এই মুহূর্তে দেশে সব চেয়ে যোগ্য ও সফল বিজেপি-বিরোধী মুখ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে। আঞ্চলিক জোটের এই সম্ভাব্য প্রস্তাবে কংগ্রেস রাজি হবে কিনা, তা অবশ্যই স্পষ্ট নয়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement