Nirmala Sitharaman

আদানি কাণ্ডে দায়িত্ব সেবি, রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের: অর্থমন্ত্রী

বিরোধীদের মতে, নির্মলা যে ভাবে সব দায় সেবি ও রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের উপরে ছেড়ে দিচ্ছেন, তা থেকেই স্পষ্ট, সরকার এখন তদন্ত থেকে বাঁচতে চাইছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা ও নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৬:০৫
Share:

সাংবাদিক বৈঠকে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। পিটিআই

আদানিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব কেন্দ্রীয় সরকারের নয়। প্রয়োজন হলে সেই পদক্ষেপ করবেন সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ। এ ক্ষেত্রে শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সেবি এবং রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক। শনিবার এ কথা ফের জানিয়ে দিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। সেই সঙ্গে তাঁর দাবি, আদানিরা তাদের (আদানি এন্টারপ্রাইজ়েসে) দ্বিতীয় দফায় বিক্রির জন্য ছাড়া শেয়ার (এফপিও) ফিরিয়ে নেওয়ার কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে ভারতের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়নি।

Advertisement

বিরোধীদের মতে, নির্মলা যে ভাবে সব দায় সেবি ও রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের উপরে ছেড়ে দিচ্ছেন, তা থেকেই স্পষ্ট, সরকার এখন তদন্ত থেকে বাঁচতে চাইছে। কারণ তদন্ত হলেই এলআইসি বা এসবিআইয়ের মতো আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে সরকার আদানি গোষ্ঠীতে অর্থ বিনিয়োগের জন্য চাপ দিয়েছিল কি না, তা প্রকাশ্যে আসবে। বিরোধীদের মতে, আদানির সঙ্গে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার তথা নরেন্দ্র মোদীর ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের প্রমাণ যাতে কোনও ভাবেই প্রকাশ্যে না আসে, তা নিশ্চিত করতেই সংসদে আলোচনা এড়িয়ে বাইরে এ নিয়ে বক্তব্য রাখছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী। বোঝাতে চাইছেন, গোটা ঘটনাটির সঙ্গে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের কোনও যোগ নেই।

এ দিন মুম্বইয়ে বাজেট সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আয়োজিত এক সাংবাদিক বৈঠকে নির্মলা বলেন, আদানিদের ব্যাপারে কোনও ব্যবস্থা নিতে হলে, তা নেবে সেবি এবং রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক ইতিমধ্যেই বিবৃতি দিয়েছে। জীবন বিমা নিগম বা এলআইসি এবং স্টেট ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষও জানিয়ে দিয়েছেন, ঋণ অথবা লগ্নি হিসেবে তাদের কত টাকা আদানি গোষ্ঠীতে রয়েছে। শেয়ার বাজারের সঙ্গে যুক্ত কোনও বিষয়ে সমস্যা হলে তার সমাধান করার জন্য সেবির যথেষ্ট ক্ষমতা রয়েছে। তারা সরকারের অধীন নয়।

Advertisement

বিরোধীদের পাল্টা বক্তব্য, সরকার এখন বিষয়টি থেকে দূরত্ব তৈরি করছে। বোঝাতে চাইছে, এটি কেবল মাত্র একটি সংস্থার বিষয়। একটি মাত্র সংস্থার কারণে শেয়ার বাজারে সামগ্রিক ভাবে ধস নামার কোনও ঘটনা ঘটেনি। সুতরাং এর দায় সরকারের উপর আসে না। বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ মহেশ জেঠমলানির কথায়, ‘‘আদানি গোষ্ঠীর শেয়ার পতনের সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের কোনও ভূমিকা নেই।’’ বিজেপি ওই দাবি করলেও, আদানি গোষ্ঠীকে এলআইসি বা এসবিআই বিপুল পরিমাণে ঋণ দিয়েছে। যাতে দেশের আমজনতার সঞ্চয় গঞ্চিত রয়েছে। তাই গোটা ঘটনাটির সঙ্গে সাধারণ মানুষের স্বার্থ জড়িত রয়েছে বলে সরব বিরোধীরা। আদানিকে সেই ঋণ ‘পাইয়ে দেওয়ার’ প্রশ্নে সরকারের শীর্ষ নেতৃত্বের কোনও ভূমিকা ছিল কি না, তা সামনে আসার প্রয়োজন রয়েছে বলে যৌথ সংসদীয় কমিটিকে দিয়ে তদন্তের দাবি তুলেছেন বিরোধীরা। তাঁরা মনে করছেন, ওই তদন্ত হলেই আদানি গোষ্ঠীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠতা স্পষ্ট হয়ে যাবে। তাই ওই তদন্ত রুখতে সেবি ও রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ককে ঢাল করতে চাইছেন নির্মলারা। আজ নির্মলার বক্তব্যকে কটাক্ষ করে কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালা বলেন, ‘‘সম্ভবত নির্মলাজি এলআইসি বা এসবিআই-এ সঞ্চয় করেন না। সে কারণেই জনতার সঞ্চয় ঘিরে বিপদ দেখা দেওয়া সত্ত্বেও তিনি বলে যাচ্ছেন, ভয়ের কোনও কারণ নেই। আসলে ভয় পেয়েছে সরকার। তাই সংসদে আলোচনা এড়িয়ে যাচ্ছে। মোদীজি নীরবতা ভাঙুন।’’

বিরোধীরা পরিকল্পিত ভাবে সংসদ অধিবেশন বয়কট করে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ এনেছেন কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর। তিনি বলেন, ‘‘রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর বক্তৃতার ধন্যবাদজ্ঞাপন প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হতে না দেওয়া ধারাবাহিক ভাবে তাঁকে অপমানের শামিল।’’ পাল্টা আক্রমণে কংগ্রেসের জয়রাম রমেশ বলেন, ‘‘হাস্যকর বক্তব্য। গত দু’দিনে বিরোধীদের ‘পিএমলিঙ্কড আদানি মহা মেগা স্ক্যাম’-এর তদন্ত জেপিসি করুক, সেই কথাটুকুও বলতে দেওয়া হয়নি। আর আমাদের বলা হচ্ছে, বিরোধীরা আলোচনা থেকে পালাচ্ছে!’’ সূত্রের মতে, এ সপ্তাহে না হলেও, সোমবার অধিবেশনের দ্বিতীয় পর্ব থেকে রাষ্ট্রপতি বক্তৃতা নিয়ে আলোচনা শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। এখন দেখার, সেই আলোচনা শুরু করতে বিরোধীরা রাজি হন কি না। সূত্রের মতে, সোমবার সকালে গান্ধী মূর্তির সামনে ধর্নায় বসবেন বিরোধীরা।তার পরেই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

হিন্ডেনবার্গ রিপোর্ট সামনে আসার পরে আদানি এন্টারপ্রাইজ তাদের এফপিও বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়। এতে দেশের অর্থব্যবস্থার ভাবমূর্তি প্রভাবিত হয়নি বলে আজ দাবি করেছেন নির্মলা। উদাহরণ হিসাবে তিনি জানান, গত দুই দিনেই দেশের বিদেশি মুদ্রা ভান্ডারে ৮০০ কোটি ডলারের বিদেশি মুদ্রা এসেছে। একটু উত্তেজিত হয়েই নির্মলা বলেন, “কত এফপিও ছাড়া হয়, কত ফলো অন অফার তুলেও নেওয়া হয়। সেগুলো পরে অনেক সময়ে আবার ফিরে আসে। তাতে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয় না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement