১৯ ডিসেম্বর দিল্লিতে বিরোধী জোট ইন্ডিয়া-র বৈঠক। —ফাইল চিত্র।
লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীর চৌধুরী তৃণমূল কংগ্রেসের মহুয়া মৈত্রের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমও বলেছেন, মহুয়া মৈত্র আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সরব বলেই তাঁর বিরুদ্ধেবিজেপি তৎপর।
সংসদে তথা জাতীয় রাজনীতিতে কংগ্রেস, তৃণমূল, সিপিএম মহুয়া মৈত্র প্রসঙ্গে অভাবনীয় ভাবে এক বিন্দুতে চলে এসেছে। কিন্তু রাজ্য রাজনীতিতে বিজেপির বিরুদ্ধে তিন দলের একজোট হওয়া এখনও অসম্ভব বলেই মনে করছে কংগ্রেস হাইকমান্ড। আজ কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতা বলেন, “এখনও পশ্চিমবঙ্গে তিন দলকে এক সূত্রে বাঁধা কঠিন।”
আগামী ১৯ ডিসেম্বর বিকেল ৩টে থেকে দিল্লিতে বিরোধী জোট ইন্ডিয়া-র বৈঠক বসবে। পটনা, বেঙ্গালুরু, মুম্বইয়ের পরে এটি চতুর্থ বৈঠক। সেখানে প্রধান আলোচ্য বিষয় হল, রাজ্যে রাজ্যে ইন্ডিয়া-র শরিক দলগুলির মধ্যে আসন সমঝোতা। পাশাপাশি লোকসভা ভোটে ‘ইন্ডিয়া’ কী কী বিষয় নিয়ে ভোটে যাবে, তা নিয়ে আলোচনা হবে। সব দলের যৌথ জনসভা নিয়েও কথা হবে। এই বৈঠকের পরেই খুব শিগগিরই ইন্ডিয়া জোটের সমন্বয় কমিটির বৈঠকও ডাকা হবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বৈঠকে যোগ দিতে দিল্লি আসছেন। লোকসভায় তৃণমূলের দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, লোকসভায় অন্তত ৭০ শতাংশ আসনে যদি ইন্ডিয়া-র দলগুলির মধ্যে আসন সমঝোতা হয়, তা হলে বিজেপিকে হারানো সম্ভব। কিন্তু এই ’৭০ শতাংশ’ আসনের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের ৪২টি আসন থাকার সম্ভাবনা দেখছেন না কংগ্রেস নেতৃত্ব।
কংগ্রেসের শীর্ষনেতার বক্তব্য, “প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী সংসদে মহুয়ার পাশে দাঁড়ালেও পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের সঙ্গে আসন সমঝোতায় যেতে নারাজ। সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরিও বলে দিয়েছেন, ইন্ডিয়া জোটে তৃণমূল, সিপিএম এক মঞ্চে থাকলেও রাজ্যে দু’দলের মধ্যে কোনও বোঝাপড়া হবে না।” তা হলে উপায়? ওই কংগ্রেস নেতার জবাব, “সে ক্ষেত্রে আমাদের সিপিএম বা তৃণমূল, কোনও এক পক্ষকে বেছে নিতে হবে।” সিপিএমের সঙ্গে কংগ্রেসের বোঝাপড়া অনেক দিনের। রাজ্যে কংগ্রেস, সিপিএম ও আইএসএফ-এর আসন সমঝোতার বিষয়ে তিন দলের রাজ্য নেতৃত্বই নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন। কে কোন আসনে লড়বে, তা নিয়ে আলোচনা বাকি।
এই পরিস্থিতিতে কি কংগ্রেসের পক্ষে ‘ইউ-টার্ন’ নিয়ে তৃণমূলের সঙ্গে আসন সমঝোতায় যাওয়া সম্ভব? কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির এক রসিক নেতার মন্তব্য, তা হলে একজনের সঙ্গে ‘মহব্বত’, অন্য জনের সঙ্গে ‘শাদি’ হয়ে যাবে।
কংগ্রেসের নেতারা বলছেন, পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে মিজ়োরাম বাদ দিয়ে কংগ্রেস যদি তিনটি রাজ্যে জিতত, তা হলে ইন্ডিয়া জোটে দল অনেক সুবিধাজনক অবস্থায় থাকত। এখন কংগ্রেস মাত্র একটি রাজ্য, তেলঙ্গানায় জিতলেও মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ়, রাজস্থানে হেরে যাওয়ায় তৃণমূল, সমাজবাদী পার্টি, আম আদমি পার্টি, এনসিপি, শিবসেনা-র মতো শরিক দলগুলি আসন সমঝোতায় কংগ্রেসকে জমি ছাড়তে চাইবে না।
পাঁচ রাজ্যের ফলপ্রকাশের পরেই ইন্ডিয়া-র বৈঠক ডাকা হয়েছিল। কিন্তু অধিকাংশ আঞ্চলিক নেতানেত্রীদের সময় না হওয়ায় সেই বৈঠক পিছিয়ে যায়। ঠিক সময় মতো না-জানানোর ফলে ভুল বোঝাবুঝির পরে রাহুল গান্ধী নিজে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলেছেন। সেই রাহুল-মমতা ফোনালাপ থেকে কংগ্রেস-তৃণমূলের আসন সমঝোতার দরজা খুলতে পারে বলেও দু’দলের কেউ মনে করছেন না।
কংগ্রেস নেতারা অবশ্য এইটুকুতে আশ্বস্ত যে, মমতার পাশাপাশি অখিলেশ যাদবও ১৯ ডিসেম্বর ইন্ডিয়া জোটের বৈঠকে আসবেন বলে ইঙ্গিত মিলেছে। গত সপ্তাহে মল্লিকার্জুন খড়্গের বাড়িতে ইন্ডিয়া-র সংসদীয় দলনেতাদের বৈঠকে তৃণমূল যায়নি।
মধ্যপ্রদেশে কংগ্রেস এসপি-কে আসন না ছাড়ায় অখিলেশের সঙ্গে তিক্ততা তৈরি হয়েছিল। তবে তা মিটিয়ে নেওয়া গিয়েছে। অরবিন্দ কেজরীওয়ালের আম আদমি পার্টিও বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে প্রার্থী দিয়েছিল। সব আসনেই জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। তবে তা নিয়ে কংগ্রেস-আম আদমি পার্টির মধ্যে তিক্ততা তৈরি হয়নি। ১৯ ডিসেম্বর দিল্লিতে বৈঠক। সূত্রের দাবি, তাঁর শহরে ইন্ডিয়া-র বৈঠকে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী কেজরীওয়ালকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় দেখা যাবে।