প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।
কাগজ দেখিয়ে নাগরিকত্ব প্রমাণের দায় চাপিয়ে গণ আন্দোলনের মুখে পড়েছিল নরেন্দ্র মোদী সরকার। এ বার ঘুরপথে জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনপিআর) তৈরির প্রক্রিয়া চালিয়ে কেন্দ্র অনেকের নাগরিকত্ব কাড়ার অপচেষ্টা করছে বলে এ বার আঙুল উঠল। ‘সিটিজ়েন্স ফর জাস্টিস অ্যান্ড পিস’ (সিজেপি) বলে একটি মঞ্চের তরফে মানবাধিকার কর্মী, সাংবাদিক তিস্তা শেতলবাদ বৃহস্পতিবার এই অভিযোগ করেন। সিজেপি-র সহযোগী কলকাতার মেটিয়াবুরুজের বাসিন্দা কয়েক জন মানবাধিকার কর্মীর অনুসন্ধানে কেন্দ্রের অপচেষ্টা প্রকাশ্যে এসেছে বলে দাবি করা হচ্ছে।
তিস্তার দাবি, ‘‘বিনা অনুমতিতে জনসাধারণের আধার নথি সংগ্রহ করে ২০১৫-১৯ সালের মধ্যে এনপিআর-এ ১২০ কোটি মানুষের নথি আপডেট করা হয়েছে। যা ২০১০ সালে ছিল ২৩ কোটি।’’ মুম্বইয়ে তিস্তাদের সাংবাদিক বৈঠকে কলকাতা থেকে যুক্ত হন মেটিয়াবুরুজের জিতেন্দ্রনাথ নন্দী, দেবাশিস সেনগুপ্ত, অভিজিৎ মিত্রেরা। তাঁরা জানান, স্বরাষ্ট্র দফতরের ২০২১-২২ সালের রিপোর্টে এনপিআর তৈরির কাজে ব্যক্তির নানা নথির সঙ্গে আধার, মোবাইল, রেশন কার্ডের নম্বর সংগ্রহ করার কথা বলা হয়েছে। অথচ এ দেশের আইনে বিনা অনুমতিতে কারও আধার কার্ডের তথ্য সংগ্রহ করা যায় না। জিতেন্দ্রনাথের কথায়, ‘‘কবে, কী ভাবে এত লোকের আধার নথি আদায় করা হল, তা স্পষ্ট নয়। আরটিআই বা তথ্য জানার অধিকার আইনে বার বার আর্জি জানিয়েও সদুত্তর মেলেনি।’’ তিস্তা, জিতেনদের বক্তব্য, প্রধানত আধার কার্ডের ভিত্তিতে এনপিআর-এর তালিকা গড়ে উঠলে, অনেকেই বাদ পড়বেন।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী প্রশান্তভূষণও বলেন, ‘‘আধারের মাধ্যমে জাতীয় নাগরিকপঞ্জি তৈরি হতে পারে না। অনেকের, বিশেষত গরিব মানুষের আধার নেই। অনেকে আধার চানও না। এই ধরনের নথির মাধ্যমে নাগরিকত্বের প্রমাণ চাওয়া অনুচিত। নিজের নাগরিকত্ব প্রমাণের দায় গরিবের ঘাড়ে চাপানো ঠিক নয়। যদি কেউ অন্য কারও সম্পর্কে দাবি করেন যে তিনি নাগরিক নন, তা হলে তা প্রমাণ করার দায়িত্ব অভিযোগকারীরই।’’
মানবাধিকারকর্মীরা বিনা অনুমতিতে আধার তথ্য ব্যবহারের প্রবণতা, ব্যক্তিগত পরিসরের অধিকার লঙ্ঘন করে ব্যক্তির উপরে নজরদারি চালানোর উদাহরণ বলে মনে করছেন। কী ভাবে আধার কার্ডের নথি এনপিআর-এর জন্য সংগ্রহ করা হল, তা জানতে চেয়ে জিতেনদের প্রশ্নের জবাবে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র দফতর জানায়, বিষয়টি সেন্ট্রাল রেজিস্টার জেনারেল অব ইন্ডিয়া (আরজেআই) বা কেন্দ্রীয় মুখ্য নিবন্ধনকারের এক্তিয়ার। আরজেআই তা পশ্চিমবঙ্গের সংশ্লিষ্ট দফতরের ঘাড়ে ঠেলে। শেষ পর্যন্ত জিতেনকে একটি ফর্ম দেখায় তাঁর বাড়ির কাছের মহেশতলা পুরসভা। তাতে মালদহের এক গ্রামবাসীর নথি রয়েছে। কিন্তু কী ভাবে লোকজনের কাছ থেকে আধার নথি সংগ্রহ করা হল, তা স্পষ্ট হয়নি। মহারাষ্ট্রে মরাঠা সংরক্ষণের নামেও সংখ্যালঘুদের নানা অস্বস্তিকর প্রশ্ন করা হচ্ছে এবং, কার কবে ধর্মান্তরণ হয়েছে জানতে চেয়ে হয়রান করা হচ্ছে বলেও এ দিন অভিযোগ উঠেছে।