পিএইচডি শংসাপত্র হাতে ‘ইসরো’-র চেয়ারম্যান এস সোমনাথ। ছবি পিটিআই।
বয়স একটা সংখ্যা মাত্র। ৬০ বছর বয়সে পিএইচডি করে তার প্রমাণ দিলেন ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ‘ইসরো’-র চেয়ারম্যান এস সোমনাথ। দেশের প্রথম সারির রকেটবিজ্ঞানীদের মধ্যে অন্যতম ‘ইসরো’-র চেয়ারম্যান আইআইটি মাদ্রাজ থেকে ওই ডিগ্রি করেছেন। তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং। ভারতীয় বিজ্ঞানে সোমানাথের অবদানকে সম্মান জানাতে, বিশেষত ভারতের তৃতীয় মনুষ্যবিহীন চন্দ্রঅভিযানের সফল উৎক্ষেপণে তাঁর ভূমিকাকে সম্মান জানাতে আইআইটি মাদ্রাজ তাদের পুরনো নিয়ম শিথিল করেছিল। ৬১তম সমাবর্তনে সোমানাথকে ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করেছে তারা।
‘ভাইব্রেশন রেসপন্স স্টাডিজ় অন মডিফায়েড হাইপার ইলাস্টিক মেটেরিয়াল মডেলস্ ফর অ্যাপ্লিকেশন এরোস্পেস সিস্টেম’ শীর্ষক গবেষণাপত্রের জন্য সোমনাথের হাতে পিএইচডি-র শংসাপত্র তুলে দিয়েছেন আইআইটি মাদ্রাজের ডিরেক্টর ভি কামাকোটি। মহাকাশ বিষয়ে তাঁর অবদানের জন্য এ পর্যন্ত ১০টি সম্মানজনক ডক্টরেট প্রদান করা হয়েছে সোমনাথকে। কিন্তু ‘ইসরো’র চেয়ারম্যান অর্জনে বিশ্বাসী। সব সময় চেয়েছিলেন নিজের বিষয়ে পিএইচডি করতে। তাঁকে ওই সুযোগ দেয় আইআইটি মাদ্রাজ। শুক্রবার ডিগ্রির শংসাপত্র হাতে নিয়ে সোমনাথ বলেন, ‘‘আমি আমার কাজে এতটাই ব্যস্ত ছিলাম যে আগে পিএইচডি শেষ করতে পারিনি। ‘ইসরো’-র চেয়ারম্যান হওয়ার পর সেটা হল। আমার কাছে সত্যিই এটা সৌভাগ্যের। এটা অন্যতম সম্মানের বিষয়।’’
২০২২ সালে ‘ইসরো’-র ‘চন্দ্রযান-২’ অভিযানের রকেট উৎক্ষেপণ প্রকল্পের নেতৃত্ব দেওয়া সোমনাথকে কেন্দ্রীয় মহাকাশবিজ্ঞান মন্ত্রকের সচিব ও দেশের মহাকাশ কমিশনের চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ করা হয় তিন বছরের জন্য। তিনি কে শিবনের স্থলাভিষিক্ত হন। ভারতের সবচেয়ে শক্তিশালী রকেট জিএসএলভি-মার্ক-৩ এবং তার আগের প্রজন্মের রকেট পোলার লঞ্চ স্যাটেলাইট ভেহিকল্স (পিএসলএলভি) তৈরির অন্যতম কাণ্ডারি সোমনাথের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে ইসরো-র বিভিন্ন মহাকাশ অভিযানে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছোট ছোট উপগ্রহকে পৃথিবীর কক্ষপথে পাঠানোর ক্ষেত্রে পিএসএলভি এই মুহূর্তে অন্যতম সেরা হাতিয়ার। কেরলের কোল্লামে টিকেএম কলেজ অব ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক হওয়ার পর সোমনাথ এরোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে মাস্টার্স করেন বেঙ্গালুরুর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স (আইআইএসসি) থেকে। তার পর ১৯৮৫-তে যোগ দেন ইসরো-র বিক্রম সারাভাই স্পেস সেন্টারে। ২০১০ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত সোমনাথ ছিলেন জিএসএলভি-মার্ক-৩ রকেট প্রকল্পের অধিকর্তা। ২০১৪-র নভেম্বর পর্যন্ত সোমনাথ ছিলেন ভিএসএসসি-র ‘স্ট্রাকচার্স’ ইউনিট ও ‘প্রোপালসন অ্যান্ড স্পেস অর্ডিন্যান্স’ ইউনিটের ডেপুটি ডিরেক্টর। ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জনের পর সোমনাথ বলেন, ‘‘যখন আমি এখানে দাঁড়াই, আমি কেরলের গ্রামের এক যুবকের দিকে তাকাই। যে একটি রাজ্য (কেরল) থেকে বিজ্ঞানে শীর্ষস্থান অর্জন করার পরেও আইআইটি-র মতো একটি প্রতিষ্ঠানে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের জন্য প্রবেশিকা পরীক্ষা দেওয়ার সাহস দেখাতে পারেনি। তবু স্বপ্ন দেখে গিয়েছে। সেই স্বপ্ন আজ সফল হল।’’