ছবি এএফপি।
প্রথম বার সার্স-কোভের সংক্রমণ শুরুর পরে তা শেষ হয়ে গিয়েছিল ১৭ বছর আগে। তার পর থেকে এখনও পর্যন্ত সার্স-কোভের সংক্রমণের খবর বিশ্বের কোনও জায়গা থেকে পাওয়া যায়নি। তা সত্ত্বেও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) ‘প্রায়রিটি ডিজ়িজ়’-এর তালিকার পাঁচ নম্বরে সার্স থাকায় বিস্মিত বিজ্ঞানী ও গবেষক মহল। স্বাভাবিক ভাবেই তাদের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে কি সার্স-কোভ-২ এর মধ্যে সার্স-কোভের সংক্রমণও ফিরে এসেছে?
যেহেতু দু’টি সংক্রমণের ধরন ও তার উপসর্গগুলি প্রায় এক, তাই সার্স-কোভ-২ আক্রান্তদের মধ্যে সার্স-কোভ-এর রোগীরা মিশে রয়েছেন কি না, এই নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। যদিও সার্স ফিরে আসার কোনও প্রামাণ্য তথ্য এখনও পাওয়া যায়নি বলেই জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। এমনিতে সার্স ও সার্স-কোভ-২-এর মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশ মিল রয়েছে। পার্থক্য শুধু সংক্রমণের ক্ষমতার। সার্স-কোভ-২ যেমন দাবানলের মতো চারদিকে ছড়িয়ে পড়তে পারে, সেখানে সার্স সংক্রামক রোগ হলেও তার সেই গতি তুলনামূলক ভাবে কম। সংখ্যাতত্ত্বের বিচারও সেটাই বলছে। যেখানে সার্স ২৬টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল, সেখানে সার্স-কোভ-২ ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বের ২১৬টি দেশে।
কিন্তু করোনাভাইরাসের আরও একটি প্রজাতি, মার্সের (মিডল ইস্ট রেসপিরেটরি সিন্ড্রোম) সংক্রমণের খবর ২০১২ সাল থেকে শুরু হয়েছিল। গত বছরের নভেম্বর পর্যন্ত তার খবর পাওয়া গিয়েছে মধ্য এশিয়ার একাধিক জায়গা থেকে। ফলে ‘প্রায়রিটি ডিজ়িজ়’-এর তালিকায় মার্স থাকা নিয়ে সংশয় নেই। কিন্তু সমস্যা তৈরি হয়েছে সার্স নিয়ে। এক গবেষকের কথায়, ‘‘২০০২ সালের নভেম্বরে দক্ষিণ চিন থেকে ছড়িয়ে পড়ার পরে ২০০৩ সালের জুলাইয়ে সার্সের সংক্রমণ থেমেছিল। তার পরেও মোট চার বার এই সংক্রমণের খবর পাওয়া গিয়েছিল। যার তিন বারই পরীক্ষাগারে কোনও ভাবে অসতর্কতার কারণে হয়েছিল। অন্য একটি সংক্রমণের কারণ জানা যায়নি।’’ তার পর থেকে কোথাওই সার্স সংক্রমণের খবর পাওয়া যায়নি।
আরও পড়ুন: অ্যান্টিবডি কত দিন, দিশা নেই
তা সত্ত্বেও কেন ডব্লিউএইচও-র তালিকায় সার্সকে রাখা হয়েছে?
‘ইন্ডিয়ান ভাইরোলজিক্যাল সোসাইটি’-র সেক্রেটারি-জেনারেল বিজ্ঞানী যশপাল সিংহ মালিকের অনুমান, করোনাভাইরাসের সামগ্রিক সংক্রমণের আশঙ্কা বোঝাতেই হয়তো সার্সকে ওই তালিকায় রাখা হয়েছে। কারণ, কোভিড-১৯-এর পাশাপাশি মার্সের সংক্রমণ এখনও চলছে। তাই করোনাভাইরাসের যে তিনটি প্রজাতি বেশি সংক্রামক অর্থাৎ সার্স, মার্স ও সার্স-কোভ-২-এর নাম একসঙ্গে উল্লেখ করা হয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘না হলে সার্সকে আলাদা ভাবে উল্লেখ করার কোনও কারণ নেই। কারণ, ২০০৩ সালের পরে সার্সের সংক্রমণের ঘটনা আর শোনা যায়নি।’’ মলিকিউলার অ্যান্ড হিউম্যান জেনেটিক্সের বিশেষজ্ঞ গীতা রাই এ বিষয়ে বলেন, ‘‘সার্স-কোভ-২ সার্সেরই মিউটেটেড স্ট্রেন না কি অন্য কিছু, সে বিষয়ে এখনও ধোঁয়াশা রয়েছে। তাই সার্সকেও ওই তালিকায় রাখা হতে পারে।’’ অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেসের বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের প্রাক্তন প্রধান ডিএন রাও এ বিষয়ে জানাচ্ছেন, সার্স ও সার্স-কোভ-২-এর মধ্যে অনেক সাযুজ্য রয়েছে। তাই অনেকেই এটা মনে করছেন সার্স-কোভ-২ ভাইরাস আসলে সার্সেরই ‘মডিফায়েড’ রূপ। সার্সের সময়ে বেশির ভাগ আক্রান্তেরই মৃত্যু হয়েছিল শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণে বা নিউমোনিয়ায়। কিন্তু সার্স-কোভ-২-এর ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, এই ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করলে অন্য অনেক রোগ সক্রিয় হয়ে উঠছে। তাঁর কথায়, ‘‘সার্স-কোভ-২ ভাইরাস এ ক্ষেত্রে অনুঘটকের কাজ করছে। তবে সার্স-কোভ-২ আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে সার্স রোগীরা মিশে রয়েছেন কি না, তা এই মুহূর্তে নিশ্চিত হয়ে বলা মুশকিল।’’
আরও পড়ুন: ৮৪ হাজার সংক্রমণে প্রশ্ন আনলক ঘিরে