রাহুল গাঁধী। ফাইল চিত্র।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেস রাজ্যে রাজ্যে বিরোধী জোটকে হীনবল করছে এবং বিজেপির সুবিধা করে দিচ্ছে বলেই অভিযোগ কংগ্রেসের। আর তৃণমূল নেতৃত্বের তরফে এই অভিযোগ সম্পূর্ণ উড়িয়ে দিয়ে জানানো হয়েছে, জোট সমন্বয় করতে হলে কংগ্রেসের সমমনস্ক বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলিকে নিজেদের সমান গুরুত্ব দিয়ে দেখা এবং ঔদ্ধত্য না দেখানো উচিত। বিজেপিকে হারানোকে অগ্রাধিকার দিতে হলে কংগ্রেসের মানসিকতার পরিবর্তন প্রয়োজন বলেই দাবি তৃণমূল কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বের।
এই প্রসঙ্গে কংগ্রেসের সাম্প্রতিক ‘ঔদ্ধত্যের’ কিছু উদাহরণ তুলে ধরতে চাইছে তৃণমূল সূত্র। তাদের দাবি, গত বছর রাজ্যসভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রস্তাবিত প্রার্থী মীরা কুমারের নামে প্রথমে সম্মত হয়েও নাকচ করে কংগ্রেস। সিপিএমের হাত ধরে বিকাশ ভট্টাচার্যকে তারা রাজ্যসভার প্রার্থী করে, রাহুল গাঁধীর ইচ্ছায়। এ ছাড়া, একুশের বিধানসভা ভোটে তৃণমূল সনিয়া গাঁধীর দলের সঙ্গে কিছু আসনে সমঝোতার প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু সিপিএমের সঙ্গে জোট বেধে তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়ে কংগ্রেস। রাজনৈতিক সূত্রের দাবি, এই ঘটনা রাহুল গাঁধী সম্পর্কে তৃণমূল নেতৃত্বের তিক্ততা বা ‘অ্যালার্জি’ তৈরি করে। কংগ্রেসের যে ‘দাদাগিরি’র কথা বার বার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, তা মূলত ওই অভিজ্ঞতা প্রসূত বলেই সূত্রের দাবি।
আপাতত তাই ‘কারও জন্য অপেক্ষা না করে’ যে যে রাজ্যে সম্ভব, সংগঠন বাড়ানোর কাজ এগোবে বলেই জানাচ্ছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। গোয়াতে সেই চেষ্টাই চলছে। সে রাজ্যের রাজনৈতিক সূত্রের খবর, কংগ্রেসের হয়ে দাঁড়ানোর প্রত্যাশী অনেকেই। কিন্তু আসন মাত্র ৪০। হিসেব অনুযায়ী, গোয়ার প্রতিটি আসনে কংগ্রেসের অন্তত দু’থেকে তিন জন লড়ার জন্য মুখিয়ে রয়েছেন। রাজনৈতিক সূত্রের বক্তব্য, প্রার্থী ঘোষণার পর কংগ্রেসে বিক্ষুব্ধদের সংখ্যা বাড়বে। তাঁদের মধ্যে রাজনৈতিক গুরুত্বসম্পন্ন নেতাদের নেওয়ার জন্য তখন আগ্রহী হতে দেখা যেতে পারে তৃণমূল কংগ্রেসকে।
সে ক্ষেত্রেও বিরোধী ঐক্য হীনবল হওয়ার সম্ভাবনা আরও বাড়ছে বলেই দাবি করছে কংগ্রেস। তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতার পাল্টা বক্তব্য, “কংগ্রেসের মুখে বিরোধী ঐক্যের কথা মানায় না। তারা সম্প্রতি বার বার তৃণমূলের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।” সূত্রের দাবি, পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তরফে চেষ্টা হয়েছিল, রাজ্যে বিজেপি-বিরোধী লড়াইয়ে কংগ্রেসকেও সামিল করার। সূত্রের দাবি, সেই প্রস্তাব গ্রাহ্যের মধ্যেও না এনে, কংগ্রেস, সিপিএমের সঙ্গে গাঁটছড়া বেধে রাজ্যের সব ক’টি আসনে প্রার্থী দেয়।
তৃণমূল কংগ্রেস সূত্রে আরও একটি ঘটনাকে সামনে আনা হচ্ছে। গত বছরের গোড়ায় পশ্চিমবঙ্গে থেকে রাজ্যসভার পাঁচটি আসন খালি হওয়ার পর, হিসেব মতো চারটি সরাসরি তৃণমূল প্রার্থীর হাতে ছিল। কিন্তু কংগ্রেস-তৃণমূল একজোট হলে পঞ্চম আসনটিতে সেই প্রার্থী জয়লাভ করবেন। কংগ্রেস এবং সিপিএমের ভোট সমান সংখ্যক হলেও সেই প্রার্থীকে জেতানো সম্ভব ছিল। সূত্রের খবর, মমতার নির্দেশে তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন সরাসরি কথা বলেন সনিয়া গাঁধীর সঙ্গে। প্রার্থী হিসাবে মীরা কুমারের নাম প্রস্তাব করেন তিনি। মীরা কুমার লোকসভার প্রাক্তন স্পিকার, মহিলা, দলিত এবং জগজীবন রামের কন্যা। সর্বোপরি মীরা কুমার স্পিকার হিসাবে মনোনীত হয়েছেন কংগ্রেস জমানাতেই। সূত্রের দাবি, প্রাথমিক ভাবে মীরা কুমারের নামে সম্মতি জানান সনিয়া। সেই মতো খবর যায় মীরা কুমারের কাছেও। কিন্তু দশ ঘণ্টা পরেই আহমেদ পটেল তৃণমূলকে জানিয়ে দেন, ‘বিশেষ কারণে’ এই নাম কংগ্রেস হাইকমান্ড নাকচ করছেন। তৃণমূল সূত্রের দাবি, পরে জানা যায়, রাহুল গাঁধী ততক্ষণে সীতারাম ইয়েচুরির সঙ্গে কথা বলে, বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের নাম স্থির করে ফেলেছেন। মার্চ মাসে বিনা যুদ্ধে বিকাশরঞ্জন রাজ্যসভায় আসেন।
কংগ্রেস নেতৃত্ব অবশ্য মনে করছেন, রাজনীতি সতত পরিবর্তনশীল। এই মুহূর্তে বিরোধী রাজনীতির বৃহত্তর বাস্তবতা হল, বিজেপি-কে দিল্লির সিংহাসন থেকে সরানো। সে ক্ষেত্রে কোনও একটি রাজ্যসভার আসন নিয়ে অতীতের মতবিরোধ বা কোনও একটি রাজ্যের বিধানসভার লড়াইকে সামনে আনলে আখেরে বিজেপি-র হাতই শক্ত করা হবে।