প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল ছবি।
গত কাল লাল কেল্লার প্রাচীর থেকে নিজের বক্তৃতায় অভিন্ন দেওয়ানি বিধি দেশে চালু করার পক্ষে সওয়াল করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি বলেছিলেন, অভিন্ন দেওয়ানি বিধি সময়ের দাবি। প্রশ্ন ওঠে, অতীতের মতোই আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনগুলিতে হিন্দু মেরুকরণের উদ্দেশ্যেই কি প্রধানমন্ত্রী ওই বার্তা দিয়েছেন? না কি সত্যিই ওয়াকফ বিলের মতো অভিন্ন দেওয়ানি বিধি বিল আনতে তৎপর মোদী সরকার?
এই আবহে আজ সন্ধ্যায় এনডিএ-র দুই প্রধান শরিক টিডিপি নেতা চন্দ্রবাবু নায়ডু ও জেডিইউ নেতা সঞ্জয় ঝায়ের সঙ্গে বৈঠক করেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নড্ডা। বিজেপি জানিয়েছে, সরকারের কাজের গতিপ্রকৃতি নিয়ে আলোচনা করার বিষয়ে অতীতেও এ ধরনের মাসিক বৈঠক হয়েছে। সূত্রের মতে, চন্দ্রবাবু বিজেপি শিবিরের কাছে স্পষ্ট করেছেন যে, ওয়াকফ বোর্ড হোক বা অভিন্ন দেওয়ানি বিধি— মুসলিমদের স্বার্থহানি হয়, এমন কোনও কিছু নিয়ে তাঁর পক্ষে সরাসরি বিজেপির পাশে দাঁড়ানো সমস্যার। কারণ, অন্ধ্রপ্রদেশে মুসলিমদের বড় অংশ তাঁর পক্ষে ভোট দিয়েছেন। সেই ভোটব্যাঙ্ককে চটাতে চান না তিনি। বিহারে জেডিইউয়েরও যে একই সমস্যা রয়েছে, তা-ও জানানো হয়েছে বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বকে। এই আবহে আগামী দিনে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি বিল লোকসভায় একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না-থাকা বিজেপি নেতৃত্ব আনতে কতটা সাহস করেন, তা-ই এখন দেখার।
বিরোধী শিবিরের একাংশের মতে, মোদী সম্ভবত আসন্ন বিধানসভা ভোটগুলির কথা মাথায় রেখেই অভিন্ন দেওয়ানি বিধির পক্ষে সওয়াল করেছেন, যাতে বিষয়টিকে সামনে রেখে হরিয়ানা, মহারাষ্ট্র বা ঝাড়খণ্ডের মতো রাজ্যে হিন্দু মেরুকরণ করা যায়। বিরোধীদের দাবি, অতীতে একাধিক বার (১৯৮৯, ১৯৯৯, ২০০৯, ২০১৯, ২০২৪) ভোটের আগে অভিন্ন দেওয়ানি বিধির উল্লেখ করে হিন্দু ভোটকে দলের বাক্সে টানার কৌশল নিতে দেখা গিয়েছে বিজেপি নেতাদের। কিন্তু বাস্তবে সেই আইনকে আনতে সে ভাবে উদ্যোগী হয়নি বিজেপি। তবে আরএসএস দীর্ঘ সময় ধরেই দেশে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালুর পক্ষপাতী। লোকসভায় ফলাফলেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে বিজেপি ও আরএসএসের মধ্যের দূরত্ব। তা লোকসভায় বিজেপির খারাপ ফলের অন্যতম কারণ। রাজনীতিকদের একাংশের মতে, সেই দূরত্ব কমাতে ও পারস্পরিক আস্থা বাড়াতেই অভিন্ন দেওয়ানি বিধির পক্ষে এ ভাবে প্রকাশ্যে সওয়াল করে সঙ্ঘ নেতৃত্বকে বার্তা দিতে চেয়েছেন মোদী।