অপমান আর গ্লানি সহ্য করতে না পেরে আত্মঘাতী হয়েছেন কেরলের কোল্লামের ধর্ষিতা। তীব্র অপরাধবোধে আত্মহত্যা করেছেন কিশোরীর কাকাও। কারণ তাঁরই বন্ধু তিন মাস ধরে একাধিক বার ধর্ষণ করেছিল কিশোরী ভাইঝিকে।
দু’বছর আগের অমীমাংসিত ঘটনা পড়েছিল থানার কোণায় ফাইলবন্দি হয়ে। সমাধান করতে হবে এই ঘটনারই। পণ করেছিলেন আইপিএস অফিসার মেরিন জোসেফ। পলাতক অভিযুক্তকে ধরতে নরকে যেতেও প্রস্তুত ছিলেন তিনি। সৌদি আরবের রিয়াধ তো সেখানে নস্যি!
২০১৭ সালে কেরলের কোল্লামে তেরো বছরের কিশোরী ধর্ষিতা হয়। অভিযুক্ত ধর্ষক সুনীলকুমার বর্ধণ পালিয়ে যায় সৌদি আরবের রিয়াধ। সেখানে সে টাইল বসানোর মিস্ত্রির কাজ করত।
শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে এক দিন বাড়ির লোকের কাছে ভেঙে পড়ে নির্যাতিতা কিশোরী। তাঁর কাছে সব জেনে পুলিশের দ্বারস্থ হয় পরিবার। কিন্তু তত ক্ষণে অভিযুক্ত পালিয়ে গিয়েছে রিয়াধ। আক্রান্ত কিশোরীর জায়গা হয় সরকারি হোমে। কিন্তু ক্রমাগত মানসিক চাপের কাছে হার মানে কিশোরী। আত্মঘাতী হয় সে। আত্মহত্যা করেন তার কাকাও। তাঁরই বন্ধু ছিল অভিযুক্ত।
চলতি বছরের জুন মাসে কেরলের কোল্লামের পুলিশ কমিশনারের পদে দায়িত্ব নেন মেরিন। তিনি সিদ্ধান্ত নেন মহিলা ও শিশুঘটিত মামালর দ্রুত নিষ্পত্তি করবেন। তাঁর দ্রুত পদক্ষেপে নড়েচড়ে বসে কেরল পুলিশ। ইন্টারপোলের নোটিস আগেই ছিল। কেরল পুলিশ যোগাযোগ করে সৌদি পুলিশের সঙ্গে।
২০১০ সালে স্বাক্ষরিত হয়েছিল ভারত-সৌদি আরব প্রত্যর্পণ চুক্তি। কিন্তু এখনও অবধি কোনও বন্দি প্রত্যর্পণ হয়নি। সুনীলকুমার বর্ধনই প্রথম প্রত্যার্পিত হওয়া অভিযুক্ত। প্রথমে সুনীলকে নিজেদের হেফাজতে নেয় সৌদি পুলিশ। জুনিয়র কোনও অফিসারকে না পাঠিয়ে মেরিন নিজে গিয়েছেন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে দেশে ফিরিয়ে আনতে।
মেরিনের জন্ম ১৯৯০ সালে। পঁচিশ বছর বয়সে আইপিএস অফিসার হন তিনি। আগাগোড়া চৌখস ছাত্রী মেরিনের স্কুল থেকে স্বপ্ন ছিল আইপিএস অফিসার হওয়ার। স্কুলে পড়তে পড়তেই শুরু করে দিয়েছিলেন প্রস্তুতি। প্রথম বারের চেষ্টাতেই আইপিএস প্রবেশিকায় সফল হন তিনি। তাঁর স্বামী ক্রিস আব্রাহাম কেরলের মনোবিদ।
অভিযুক্তকে গ্রেফতার করার সঙ্কল্পে অটল ছিলেন মেরিন। সঙ্কল্প পূরণ করে দেখিয়েছেন তিনি। প্রোটেকশন অব চিল্ড্রেন ফ্রম সেক্সুয়াল অফেন্সেস অ্যাক্ট (পকসো)-এ গ্রেফতার করা হয় ধর্ষণে অভিযুক্ত সুনীলকে। সাহসিনী মেরিন এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রেন্ডিং। তাঁকে বলা হচ্ছে ‘লেডি সিঙ্ঘম’।
আগেও শিরোনামে এসেছিলেন তিনি। যখন তাঁকে ‘সুন্দরী আইপিএস’ বলে বর্ণনা করা হয়েছিল। প্রতিবাদ করে তিনি বলেছিলেন, একজন আইপিএস-এর যোগ্যতার মাপকাঠি রূপ নয়, বরং তাঁর কর্তব্যবোধ।
দৃষ্টান্ত স্থাপন করে মেরিন জোসেফ দৃপ্ত কণ্ঠে জানিয়েছেন, ‘অপরাধের পরে গা বাঁচাতে বিদেশে চলে যাবে, তা হতে পারে না। অপরাধীকে শাস্তি পেতেই হবে।’