আপাতত ঠাঁই তিহাড়েই, দু’সপ্তাহের জন্য চিদম্বরমকে জেলে পাঠাল আদালত

মুখের হাসি হয়তো ধরে রাখলেন। কিন্তু চিদম্বরমের আশঙ্কাই সত্যি হল। সিবিআইয়ের হেফাজতে ১৫ দিন কাটানোর পরে আজ দিল্লির বিশেষ সিবিআই আদালত তাঁকে আগামী ১৪ দিন, অর্থাৎ ১৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০২:২০
Share:

জেলযাত্রা: তিহাড় জেলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে পি চিদম্বরমকে। বৃহস্পতিবার। পিটিআই

রাউস অ্যাভিনিউ কোর্ট থেকে তাঁকে নিয়ে পুলিশের ভ্যান যখন তিহাড় জেলের পথে রওনা দিচ্ছে, তখন সমর্থকদের দেখে হাত নাড়লেন পি চিদম্বরম। মুচকি হেসে বললেন, ‘‘আমি শুধু অর্থনীতি নিয়েই চিন্তিত।’’

Advertisement

মুখের হাসি হয়তো ধরে রাখলেন। কিন্তু চিদম্বরমের আশঙ্কাই সত্যি হল। সিবিআইয়ের হেফাজতে ১৫ দিন কাটানোর পরে আজ দিল্লির বিশেষ সিবিআই আদালত তাঁকে আগামী ১৪ দিন, অর্থাৎ ১৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিল। যার অর্থ, ১৬ সেপ্টেম্বর নিজের জন্মদিনও জেলেই কাটাতে হবে চিদম্বরমকে। রাজনীতিকদের মতে, খুব সম্ভবত এই প্রথম কোনও প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তথা অর্থমন্ত্রীকে জেলে পাঠানো হল। চিদম্বরম-পুত্র কার্তির অবশ্য আশা, খুব তাড়াতাড়ি তিনি বাড়ি ফিরবেন।

তিহাড় জেলের ডাল-রুটি-তরকারি খেয়ে, মেঝেতে শুয়ে রাত কাটাতে রাজি ছিলেন না চিদম্বরম। সে জন্য সিবিআই হেফাজত থেকে ইডি-র হেফাজতে যেতেও রাজি ছিলেন তিনি। সিবিআই হেফাজতে ১৫ দিন কাটানো হয়ে গিয়েছে তাঁর। নিয়ম অনুযায়ী এই দফায় আর তাঁকে হেফাজতে রাখতে পারে না সিবিআই। চিদম্বরমের ‘আশা’ ছিল, আইএনএক্স মিডিয়া আর্থিক কেলেঙ্কারি মামলায় এ বার তাঁকে ইডি গ্রেফতার করবে। কারণ ইডি আগেই তাঁকে গ্রেফতার করতে চেয়েছিল। সে ক্ষেত্রে তাঁকে তিহাড়ে যেতে হবে না।

Advertisement

ঠিকানা তিহাড়

• থাকবেন জেল নম্বর ৭-এর পৃথক কামরায়, ছেলে কার্তিও ছিলেন এখানেই
• জ়েড-ক্যাটিগরি নিরাপত্তা পেতেন বলেই পৃথক সেলের ব্যবস্থা
• জেল নম্বর ৭-এ থাকেন আর্থিক এবং যৌন কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত ও দোষীরা
• চিদম্বরমের জন্য থাকছে ওয়েস্টার্ন টয়লেট, শোয়ার জন্য কাঠের চৌকি
• ডাক্তারি পরীক্ষার পরেই ঠিক হবে চৌকিতে গদি পাবেন কি না
• খেতে হবে জেলের খাবার— এক বাটি ডাল, একটি তরকারি, ৪-৫টা রুটি
• চাইলে জেল ক্যান্টিনের স্ন্যাকসও খেতে পারবেন
• পরতে পারবেন বাড়ি থেকে আনা পোশাক
• প্রয়োজনীয় ওষুধ সঙ্গে রাখতে পারবেন
• নিরাপত্তা নিয়ে গোয়েন্দারা আশঙ্কা প্রকাশ করলে তাঁকে জেল নম্বর-১-এ রাখা হতে পারে

বৃহস্পতিবার সকালে সুপ্রিম কোর্ট ইডি-র মামলায় চিদম্বরমের আগাম জামিনের আর্জি খারিজ করে দেয়। সেই রায়ের পরে ইডি চিদম্বরমকে নিজের হেফাজতে নিতেই পারত।

কিন্তু রাউস অ্যাভিনিউ কোর্টে চিদম্বরমকে পেশ করার পর ইডি তাঁকে হেফাজতে নেওয়ার আর্জিই জানায়নি। আদালত চিদম্বরমকে জেলে পাঠাবে আশঙ্কা করে, তাঁর আইনজীবী কপিল সিব্বল বলেন, ইডি ওঁকে গ্রেফতার করুক। উনি ইডি-র কাছে আত্মসমর্পণ করতেও রাজি। কিন্তু ওঁকে জেল হেফাজতে পাঠানো যাবে না।

যা শুনে সিবিআইয়ের তরফে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা কটাক্ষ করে বলেন, ‘‘সিব্বল স্পষ্ট করে বলুন, তিনি আসলে চিদম্বরমের জামিন চাইছেন না কি ইডির হেফাজত চাইছেন! চিদম্বরমকে গ্রেফতার করা হবে কি হবে না, সে তো ইডি ঠিক করবে।’’ সূত্রের খবর, ইডির অফিসাররা চিদম্বরমকে গ্রেফতারের জন্য আদালতের দ্বারস্থ না-হলেও, কোর্টের বাইরেই ওত পেতে ছিলেন। চিদম্বরম কোনও ভাবে জামিন পেয়ে গেলেই তাঁকে গ্রেফতার করা হত।

ইডির কাছে আত্মসমর্পণ করার জন্য আদালতে আর্জিও জানিয়েছেন চিদম্বরম। ১২ সেপ্টেম্বর সেই আর্জির শুনানি হবে। আদালত যদি সে দিন তাঁকে ইডির হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেয় তা হলেও, অন্তত এক সপ্তাহ তাঁকে তিহাড়ে কাটাতে হবে।

তবে তিহাড়ে চিদম্বরমকে মেঝেতে শুতে হচ্ছে না। ৭৩ বছরের চিদম্বরম আর্জি জানান, তাঁর জন্য খাট-সহ আলাদা সেল, বাথরুমে কমোড, বাইরের ওষুধ ও নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করা হোক। আদালত তা মঞ্জুর করেছে। চিদম্বরম জ়েড ক্যাটিগরির নিরাপত্তা পান। মেহতা জানান, চিদম্বরমের নিরাপত্তায় কোনও ফাঁক থাকবে না। কিন্তু একে প্রতিহিংসার রাজনীতি আখ্যা দিয়ে কংগ্রেস নেতাদের ব্যাখ্যা, চিদম্বরম যখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, তখন অমিত শাহকে জেলে কাটাতে হয়েছিল। এখন অমিত শাহ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তাই সুকৌশলে চিদম্বরমকে জেলে পাঠানো হল।

চিদম্বরম ও কার্তির জন্য একমাত্র স্বস্তি হল, আজ দিল্লিরই আর একটি বিশেষ আদালতের বিচারক ও পি সাইনি এয়ারসেল-ম্যাক্সিস মামলায় পিতা-পুত্রের আগাম জামিন মঞ্জুর করেছে। চিদম্বরম অর্থমন্ত্রী থাকার সময়ই এয়ারসেল-ম্যাক্সিস চুক্তিতে ৮০ কোটি ডলার বিদেশি লগ্নির অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। তাতেও অনিয়ম তথা ঘুষের অভিযোগ তুলে সিবিআই, ইডি মামলা করেছে। বিচারক সাইনি

এই মামলায় ‘যথেষ্ট দেরি’ ও তার ব্যাখ্যা না-থাকায় ইডির সমালোচনা করে প্রশ্ন তোলেন, প্রাক্তন টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী দয়ানিধি মারানকে ৭৪৯ কোটি টাকার দুর্নীতিতে গ্রেফতার করা হয়নি। তা হলে চিদম্বরম, কার্তিকে ১.১৭ কোটি টাকার ‘সামান্য অঙ্ক’-র দুর্নীতি মামলায় কেন গ্রেফতারের দাবি জানানো হচ্ছে। সিবিআই, ইডি এই রায়ের বিরুদ্ধে দিল্লি হাইকোর্টে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement