Narendra Modi

Security Lapse: মোদীর সুরক্ষার চ্যুতির তদন্তে কোর্টের কমিটি

গত সপ্তাহে পঞ্জাব সফরের সময়ে প্রধানমন্ত্রীর কনভয় কৃষক বিক্ষোভে আটকে যাওয়ার পরেই সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপ চেয়ে মামলা হয়েছিল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০২২ ০৮:৫১
Share:

ফাইল চিত্র।

প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার চ্যুতিতে পঞ্জাবের পুলিশ-প্রশাসনের অফিসাররা দোষী বলে কেন্দ্রীয় সরকার আগেই মনস্থির করে ফেলেছে। সে ক্ষেত্রে কেন্দ্রের তদন্ত নিরপেক্ষ হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে আজ সুপ্রিম কোর্ট নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিল।

Advertisement

আজ সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এন ভি রমণার বেঞ্চ জানিয়েছে, পঞ্জাব সফরে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তায় চ্যুতির তদন্তে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি তৈরি হবে। ওই কমিটিতে চণ্ডীগড় পুলিশের ডিজি, জাতীয় তদন্ত সংস্থার আইজি, পঞ্জাব-হরিয়ানা হাই কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল ও পঞ্জাবের এডিজি (নিরাপত্তা) থাকবেন।

গত সপ্তাহে পঞ্জাব সফরের সময়ে প্রধানমন্ত্রীর কনভয় কৃষক বিক্ষোভে আটকে যাওয়ার পরেই এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপ চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা হয়েছিল। কেন্দ্র ও রাজ্য নিজেদের মতো করে তদন্ত কমিটি গঠন করলেও, সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত কেন্দ্র ও রাজ্যের তদন্ত কমিটিকে কাজ বন্ধ রাখারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও কেন্দ্রের কমিটি পঞ্জাবে যায়। পঞ্জাবের পুলিশ কর্তাদের তলবও করে। এ জন্য আজ কেন্দ্রকে তোপ দেগে প্রধান বিচারপতি বলেছেন, কেন্দ্র সুপ্রিম কোর্টকে গুরুত্ব দিচ্ছে না, এমনটা যেন দেখানোর চেষ্টা না হয়।

Advertisement

গত শুক্রবার কেন্দ্রীয় সরকার সওয়াল করেছিল, প্রধানমন্ত্রীর কনভয় আটকে যাওয়ার পিছনে সীমান্তপারের সন্ত্রাসবাদের ভূমিকা রয়েছে। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে আজ প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে শুনানি শুরুর আগে সুপ্রিম কোর্টের একাধিক আইনজীবীর কাছে বেনামি ফোন আসে। সুপ্রিম কোর্টে এ বিষয়ে যেন শুনানি না হয়, সে বিষয়ে হুমকি দেওয়া হয়। আইনজীবীরা জানিয়েছেন, শিখ ফর জাস্টিস নামের একটি সংগঠনের নাম করে বিদেশ থেকে ফোন করে দাবি করা হয়, তারাই প্রধানমন্ত্রীর কনভয় আটকে দেওয়ার পিছনে রয়েছে। ফোনে রেকর্ড করা বিবৃতি শোনা যাচ্ছিল। কৃষক আন্দোলন চলার সময়েও এই খলিস্তানি সংগঠন শিখ ফর জাস্টিসের তরফে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে কার্যকলাপের জন্য পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছিল। কেন্দ্রের সলিসিটর জেনারেল সুপ্রিম কোর্টে তার উল্লেখও করেছিলেন। আজ সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেটস-অন-রেকর্ড অ্যাসোসিয়েশন এ বিষয়ে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার আর্জি জানিয়ে আদালতকে চিঠি লিখেছে।

আজ প্রধান বিচারপতি বলেন, “আমরা প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার চ্যুতিকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে দেখছি।” তাই ওই কমিটিকে যত দ্রুত সম্ভব রিপোর্ট দিতে বলা হবে বলেও প্রধান বিচারপতি জানিয়েছেন। আপাতত কেন্দ্র ও রাজ্যের তদন্ত কমিটির কাজ বন্ধ থাকবে। আজ সুপ্রিম কোর্টে পঞ্জাব সরকারের অ্যাডভোকেট জেনারেল ডি এস পাটওয়ালিয়া বলেন, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে প্রধানমন্ত্রীর সফর ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা সংক্রান্ত সমস্ত নথি পঞ্জাব-হরিয়ানা হাই কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে জমা করা হয়েছে। পঞ্জাবও নিরপেক্ষ তদন্ত চাইছে জানিয়ে পাটওয়ালিয়া বলেন, কেন্দ্রীয় তদন্ত কমিটি নিরপেক্ষ ভাবে কাজ করবে না। কারণ এর পিছনে রাজনীতি রয়েছে। ইতিমধ্যেই পঞ্জাবের অফিসারদের বিরুদ্ধে সাতটি শো-কজ় নোটিস জারি করা হয়েছে। শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের স্থগিতাদেশ সত্ত্বেও কেন নোটিস জারি হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি।

কেন্দ্রের সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা যুক্তি দেন, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের আগেই ওই সব শো-কজ় নোটিস জারি হয়েছিল। পঞ্জাবের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলে মেহতা বলেন, রাজ্যের পুলিশ-প্রশাসনের অফিসারেরা এসপিজি আইনে ভিভিআইপি নিরাপত্তার ‘ব্লু বুক’-এর বিধি ভেঙেছিলেন। তাতে স্পষ্ট বলা হয়েছে, স্থানীয় পুলিশই সমস্ত নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করবে। এসপিজি শুধু প্রধানমন্ত্রীর আশেপাশের বলয়ের নিরাপত্তা দেখবে। বিধি কার্যকর করা পুলিশের ডিজি-র দায়িত্ব। তার জন্য রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষস্তর থেকে নির্দেশ জারি করতে হয়। পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী চরণজিৎ সিংহ চন্নী বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর গাড়ির এক কিলোমিটারের মধ্যে কোনও বিক্ষোভ হচ্ছিল না। কিন্তু আজ আদালতে মেহতা বলেন, এ ক্ষেত্রে গোয়েন্দা ব্যর্থতাও রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কনভয় বিক্ষোভ স্থলের ১০০ মিটারের মধ্যে পৌঁছে গিয়েছিল। রাজ্য সরকার এখন অফিসারদের আড়াল করতে চাইছে।

প্রধান বিচারপতির বেঞ্চের বিচারপতি হিমা কোহলি বলেন, কেন্দ্র আগেই মনস্থির করে ফেলেছে। বিচারপতি সূর্যকান্ত বলেন, আপনারা এক দিকে অফিসারদের বিরুদ্ধে শো-কজ় নোটিস জারি করছেন। অন্য দিকে বলছেন, তাঁরা দোষী। কারা তাঁদের দোষী সাব্যস্ত করল? হতে পারে অভিযুক্তেরা দোষী। কিন্তু কে তদন্ত করল? প্রধান বিচারপতি রমণা বলেন, “আপনারা যদি আগে থেকেই শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে ব্যবস্থা নিতে চান, তা হলে আর আদালতের কী করার থাকে!”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement