করমণ্ডল এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনা। —ফাইল চিত্র।
করমণ্ডল এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনার পরে বিভিন্ন দফতরের বিভাগীয় প্রধানদের দেওয়া ‘জয়েন্ট গ্রাউন্ড রিপোর্ট’-এ দুর্ঘটনার পিছনে পয়েন্টের ত্রুটি থাকার কথা বিরোধিতা করেছেন দক্ষিণ-পূর্ব রেলের ওই শাখার সিগন্যালিং অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন বিভাগের এক আধিকারিক। তাঁর দাবি, ‘ডেটা লগার’ যন্ত্রে সিগন্যাল পরিবর্তনের যে তথ্য পাওয়া গিয়েছে তাতে কোথাও পয়েন্টের গোলমাল চোখে পড়েনি। বরং ওই ট্রেনটি নির্দিষ্ট পয়েন্টের কিছু আগেই লাইনচ্যুত হয়েছিল। এ কে মোহান্তি নামের ওই সিনিয়র সেকশন ইঞ্জিনিয়ার তাঁর নিজের মতামত দুর্ঘটনার পরের দিন লিখিত ‘ডিসেন্ট নোট’ (ভিন্নমত পোষণ) দিয়ে জানিয়েছেন। ওই অফিসারের দাবি রীতিমতো ‘বিস্ময়কর’ বলেই মনে করছেন রেলের একাংশ।
গত ২ জুন দুর্ঘটনার পরে রেলের বিভিন্ন বিভাগের আধিকারিকেরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ‘জয়েন্ট গ্রাউন্ড রিপোর্ট’-এ যা লিখেছিলেন তাতে দুর্ঘটনার পিছনে সিগন্যালিং ব্যবস্থায় বাইরে থেকে ‘হস্তক্ষেপ’ করার ইঙ্গিত ছিল। দুর্ঘটনার সম্ভাব্য কারণ হিসেবে জানানো হয়েছিল, আপ মেন লাইনে করমণ্ডল এক্সপ্রেসকে সিগন্যাল দেওয়া হলেও বাস্তবে ‘১৭এ’ পয়েন্টের অবস্থান ছিল লুপ লাইনের দিকে। এ ক্ষেত্রে পয়েন্টের ত্রুটি প্যানেল ইন্টারলকিং ব্যবস্থায় ধরা না-পড়ার পিছনে সিগন্যালিং ব্যবস্থায় বাইরে থেকে ‘হস্তক্ষেপ’ হওয়ার অভিযোগ গুরুত্ব পেয়েছিল। ওই আশঙ্কার কথা উঠে এসেছিল রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব এবং রেল বোর্ডের অপারেশন্স এবং বিজনেস ডেভলপমেন্ট বিভাগের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক জয়া বর্মার কথাতেও। তবে সিনিয়র সেকশন ইঞ্জিনিয়ার পাল্টা জানান, ১৭ নম্বর পয়েন্ট ঠিক জায়গাতেই ছিল। দুর্ঘটনার পরে ওই পয়েন্ট অন্য দিকে (লুপ লাইনের দিকে) ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ওই ট্রেনটি নির্দিষ্ট পয়েন্টে পৌঁছনোর আগেই ৯৪ নম্বর রেল গেটের কাছে লাইনচ্যুত হয়ে পাশের লুপ লাইনে মালগাড়ির পিছনে ধাক্কা মারে বলে জানিয়েছেন তিনি।
প্রাক্তন এবং বর্তমান রেলকর্তাদের অনেকের দাবি, রুট রিলে বা প্যানেল ইন্টারলকিং ব্যবস্থা ‘ফেল টু সেভ’ প্রযুক্তির। তাই ওই যন্ত্র কোনও কারণে বিগড়ে গেলে তা কাজ করবে না। তবে নিজে থেকে ভুলও করবে না। তাই রিলে রুম থেকে সিগন্যাল ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করা অসম্ভব। প্রসঙ্গত, রেলের সেফটি কমিশনার ছাড়াও রেলের সেফটি কমিটি এবং সিবিআই এই দুর্ঘটনার তদন্ত করছে। তদন্ত এগোলে ঠিক পথে এগোলে কী ঘটেছিল তা ধরে ফেলা সম্ভব বলেও রেলের আধিকারিকদের দাবি।